নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : পদ্মার চরের মধ্যে এমন সুন্দর একখান স্কুল ঘর বানাইছিল, এক্কেবারে দেখার মতন। নদী ভাঙতে ভাঙতে কাছে চইলা আইলে গত দুই-তিন বছর ধইরা সারা শিবচর থোন মানুষ আসত দেখতে। স্কুলের সামনে খাড়াইয়া (দাঁড়িয়ে) ছবি তুলত। কিন্তু আইজ সব শ্যাষ হইয়া গেল। পদ্মার পেটে চইলা গেল। আমরা খালি চাইয়া চাইয়া দ্যাকলাম। আহারে, খুব কষ্ট লাগতাছে। এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন পদ্মাপারের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আসমত আলী। ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে বিলীন হয়ে যায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটি।
অন্যদিকে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের নবনির্মিত তিনতলা ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারটিও অবশেষে নদীগর্ভে চলে গেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে পানির তীব্র স্রোতে এটি দেবে যায়। প্রতি বছর প্রমত্তা পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েন এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ভিটে-বাড়ি হারিয়ে এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের দিন কাটছে।
জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মাদারীপুরের শিবচরের সাত ইউনিয়নে নদী ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাতের নদী তীরের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দরখোলা ইউনিয়নের এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটি পদ্মায় চলে যায়। গত ২২ জুলাই বুধবার গভীর রাত থেকে স্কুলটির ভাঙন শুরু হয়। এ ছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যেই শতাধিক পরিবার গবাদিপশু, মালামাল অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী সন্ন্যাসীরচর, শিরুয়াইল, নিলখী ও বহেরাতলা দক্ষিণেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়েছে সাড়ে চার শতাধিক ঘরবাড়ি। এসব এলাকায় ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
বিলীন হওয়া স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. আফজাল হোসেন বলেন, এটি শিবচরের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল। এ চরকে স্কুল, বিদ্যুৎ, পাকা সড়কসহ আধুনিক সুবিধা দিয়ে সাজানো হয়। গত তিন বছর চিফ হুইপ স্কুলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু এবার বন্যা মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় স্কুলটি আর রাখা গেল না। দৃষ্টিনন্দন স্কুল ভবনটি এখন শুধুই স্মৃতি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চরের স্কুলটিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে। কিন্তু ২-৩ বছর স্কুলটি রক্ষা করা গেলেও এ বছর আর সম্ভব হলো না। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে অন্য স্থাপনা রক্ষার চেষ্টা চলছে।
এদিকে গত এক সপ্তাহে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক বসত-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে বাদ পড়েনি ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ ছোট-বড় বাজার। গত ১৭ জুলাই পদ্মার গ্রাসের মুখে পড়ে তিনতলা রাজরাজেশ্বর ওমর আলী হাই স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারটি। এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার এটি পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
ওমর আলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুফিউল্লাহ জানান, আমাদের ঐতিহ্যবাহী ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রায় ১১ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এবং ইউনিয়নবাসীর কথা চিন্তা করে আধুনিক স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তীব্র ভাঙনের কারণে আজ সেটিও নদী গিলে খেল।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী ব্যাপারী জানান, প্রবল স্রোতের কারণে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চর এলাকায় ভাঙনের মুখে পড়ে। প্রচন্ড ঢেউ এবং ঘূর্ণিঝড় ও স্রোতের সৃষ্টি হয় এ অঞ্চলে। যার কারণে স্কুলসহ বসত-ঘর ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে।
সুত্র : দৈনিক আমাদের সময় ডট কম