নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : সাধারণত পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক পর্যটন মৌসুম সচল থাকে। কিন্তু এ বছর ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। একদিকে রমজান অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রাহের কারণে ১৪ এপ্রিল নববর্ষে পর্যটক শূন্যতায় ভুগেছে কক্সবাজার। ফলে এবারের পর্যটন মৌসুম শেষ হয়েছে মূলত মার্চেই। এতে হোটেল–মোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটকনির্ভর ব্যবসা–বাণিজ্যে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। তবে ঈদ উল ফিতরের টানা ছুটিতে লাখো পর্যটক হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। আর সেটি সামনে রেখেই প্রস্তুত কক্সবাজার।
২৯শে এপ্রিল শুক্রবার থেকে টানা ৬ দিন সরকারি ছুটি। এর মধ্যে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২ অথবা ৩ মে ঈদ উল ফিতর উদযাপিত হবে। ১লা মে রবিবার মে দিবসের বন্ধ। সব মিলে বুধবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি। এরপর বৃহস্পতিবার একদিন খোলার পর আবার দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতরের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। বৃহস্পতিবার বিকালে সাপ্তাহিক ছুটিতে বাড়ি যাওয়া চাকরিজীবীরা ফিরবেন ৮ মে। এসময় অনেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে পরিবার–পরিজন নিয়ে আসতে পারেন বলে ধারণা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
তবে, অন্য সময়ের মতো আগাম বুকিংয়ের তোড়জোড় নেই বলে জানিয়েছেন তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের বিপণন নির্বাহী ইমতিয়াজ সুমেল। তিনি বলেন, টানা ৯ দিনের ছুটি থাকলেও ৪ থেকে ৬ মে বুকিং হয়েছে। হোটেল–মোটেল জোনের প্রায় তারকা হোটেলের একই অবস্থা। অথচ অন্য সময়ে টানা ৩ থেকে ৫ দিন বন্ধ থাকলেও বুকিংয়ের ফোন রিসিভ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠতে হতো। এখন সেই ব্যস্ততা নেই।
একই কথা বলেন সি–নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজীও। তিনি বলেন, মৌসুমে এমন বন্ধ হলে গ্রুপ এবং ইন্ডিভিজ্যুয়েল বুকিং হতো গেস্ট হাউজগুলোতে। অতিরিক্ত গরমের কারণে এ ছুটিতে সেই চাপ নেই বললে চলে, যা কল আসছে তা স্বাভাবিক। এরপরও ধারণা করা যায়, ৪ থেকে ৭ মে পর্যন্ত লাখো পর্যটক কক্সবাজার অবস্থান করবেন।
সেই আশায় পর্যটক বরণে তৈরি হচ্ছে পর্যটন নগরীর আবাসান ও খাবারের হোটেলগুলো। চলছে হোটেল ও রেস্তোরাঁ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। এক মাস সময় পেয়ে অনেক হোটেল সংস্কারকাজও করা হয়েছে। তারাও ঈদের পর পর্যটকসেবা দিতে প্রস্তুত। প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী–হকাররাও। মাস দেড়েক ধরে সুনসান নীরবতায় থাকা সৈকতজুড়ে কোলাহলমুখর পরিবেশের আশায় সবার যেন পূর্বপ্রস্তুতি এখন কক্সবাজার জুড়ে। ঢেউয়ের গর্জন ও বালিয়াড়ির বুকে ডালপালা ছড়ানো সাগরলতাও যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে প্রায় দেড় লাখের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। টানা বন্ধে কয়েকদিন একটু বেশি চাপ থাকবে। অন্য দিনগুলোতেও পর্যটক উপস্থিতি মোটামুটি থাকবে আশা করা যায়। সব মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটক আসবে ধরে নিয়েই আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আশা করছি ঈদের আগে আগাম বুকিং আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বৈশাখে একটু গরম বেশি। কিন্তু মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলে গরমের তীব্রতা কমে। ঈদেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখেছি। তেমনটি হলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য হবে রহমতের বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ঠান্ডায় পর্যটকরা আরামে ঘুরতে পারেন।
কলাতলীর স্বাধীন বাংলা রেস্তোরাঁর পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, রমজানে কক্সবাজার পর্যটক শূন্য ছিল বলা চলে। এসময় রেস্তোরাঁর কিছু ডেকোরেশন ও রঙের কাজ করা হয়েছে। অন্যরাও হোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টগুলো পরিষ্কার–পরিছন্ন এবং সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করেছে। সবাই রেস্তোরাঁ কমবেশি সাজাচ্ছে।
সৈকতের বালিয়াড়ির কিটকট (চেয়ার–ছাতা) ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, মার্চের শেষ সময় থেকে কক্সবাজার পর্যটকশূন্য থাকায় গত মাস–দেড়েক কর্মচারীর বেতনও জোগাড় করতে পারিনি। ঈদের ছুটিতে পর্যটক বাড়লে ব্যবসা ভালো হওয়ার আশা করছি।
জেলা পরিষদের ছাতা মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, পর্যটকদের জন্য দোকান গোছাতে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকাররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় সৈকত এবং পর্যটন কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম ঘটবে বিবেচনায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সৈকতে পর্যটকদের জন্য খাবার পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ঈদে টানা ছুটি পড়েছে, কিন্তু গরমও পড়ছে বেশি। এরপরও পর্যটক সমাগম আগের মতো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে পর্যটক সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করেছি, যেন পর্যটকরা ভালো সেবা পায়। হোটেল–মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ ও পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকত এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে।