আলোচিত মাদকের স্পট গুড়িয়ে দিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত মাদকের স্পষ্ট খ্যাত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত চাঁনমারি বস্তি অবশেষে উচ্ছেদ করে ভেকু দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। আজ ২৯ই জুলাই বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের নেতৃত্বে ভেকু দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। এটি নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম ক্রাইম জোন ও মাদক বিক্রেতাদের অভ্যয়ারন্য হিসেবে পরিচিত ছিল। এদিকে আলোচিত মাদকের স্পষ্ট উচ্ছেদ করায় জেলা পুলিশ প্রশাসন কে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ  জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ বাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মাদকের স্পষ্ট খ্যাত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত চাঁনমারি বস্তিতে প্রায় ৫ শতাধিক ঘর রয়েছে। এখানে শীষ দিয়ে মাদক বিক্রি প্রচলিত ছিলো। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ বস্তিতে কয়েক যুগ ধরেই মাদক ব্যবসা চলছিলো। প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর অভিযানও হতো। তবে শত প্রচেষ্টার পরও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়নি বস্তিকে ঘিরে মাদক ব্যবসা। অবশেষে প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপে বস্তি উচ্ছেদ হওয়ায় মাদকের অন্যতম মাদকের বড় আখড়া চাঁনমারি বস্তি উচ্ছেদ হওয়ায় আশপাশের লোকজন স্বস্থি প্রকাশ করেছে।

এর আগে ৯ই মে নারায়ণগঞ্জে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় শহরের চাঁনমারি বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের দেয়া আলটিমেটামের মধ্যেই ২৭ই জুলাই মঙ্গলবার থেকে অনেকে স্ব ইচ্ছায় নিজেদের ঘর সরিয়ে নেয়। ২৮ই জুলাই বাকী ঘরগুলোও ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়।

চাঁনমারি বস্তি উচ্ছেদকালে দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, নারায়ণগঞ্জে চাঁনমারি বস্তিটি একটি অনেক পুরোন একটি বস্তি। যার পাশে অবস্থিত পুলিশ সুপারের কার্যলয়, জেলা প্রশাসকের কার্যলয়, জেলা দায়রা জজ কার্যলয়সহ অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ কার্যলয়। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি এই বস্তিতে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এছাড়া যতবারই এই বস্তি উচ্ছেদ হয়েছে ততবারই কোনো না কোনো অপৃতিকর ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, আমি যোগদানের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, এই বস্তি থেকে মাদক নির্মূল করা বা এই বস্তির অপসারণ করা। এটি সম্পূর্ণভাবে সরকারি জমিতে একটি অবৈধ স্থাপনা। এই স্থাপনাটি উচ্ছেদের জন্য আমরা জেলা পুলিশ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করি, এবং সকল শ্রেনী পেশার বিশেষ করে যারা মিডিয়ায় কাজ করছেন। তারা এই বস্তি অপসারণের জন্য সহোযোগীতা করছেন। সেই সুবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ কর্তৃক গত তিনদিন এই উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং আজকে বস্তিতে শতভাগ উচ্ছেদ করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার বলেন, অনেকেই বলেছেন, এই ধরণের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পর সেটি পুণ চালু হয়ে যায়। কিন্তু আমরা রোডস এন হাইওয়েকে বলেছি, তারা এটি উচ্ছেদ করবে। আশা করি এর পরে আর এই স্থাপনা হবে না।

মাদকের কথা উল্লেখ করে জায়েদুল আলম বলেন, চাঁনমারির এই বস্তিতে এখনে বেশ কয়েকটি ঘরে মাদকের আস্তানা ছিলো, আমরা বেশ কয়েকবার অভিযান করেছি। কয়েকজনকে আটকও করেছি, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছেন এবং তাদের বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করেছি। আমরা চেষ্টা করছি, আর যাতে কোনো অপৃতিকর ঘটনা না ঘটে। এখানে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বিভিন্নভাবে নিহত হয়েছেন, যারা জীবিত আছেন তাদের বিরুদ্ধে ডজনের উপরে মামলা আছে, আমরা হুশিয়ারি দিয়েছি তাদের আইনের আওতায় আনবো এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবো।

এছাড়া জানা গেছে, এই ২শ শতাংশ জমির দাম প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। এই জমিটি প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন দখলে রেখে এখানে মাদক বিক্রেতাদের ভাড়া দিতে তাদেরকে দিয়ে মাদক ব্যবসা করাতেন। এখন এটি উচ্ছেদ হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন নগরবাসী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ শফিউল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান প্রমুখ।

add-content

আরও খবর

পঠিত