আদম বেপারীর খপ্পরে পড়ে স্বামী হারিয়ে পাগলপ্রায় ১ সন্তানের জননী

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বন্দর প্রতিনিধি ) : বন্দরের ধামগড় ইউপির খোঁসের ছড়া গ্রামের ১ সন্তানের জননী সুলতানা বেগম প্রতারক আদম বেপারীর খপ্পরে পড়ে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে তার স্বামী নজরুল ইসলামকে হারিয়ে নিঃস ও পাগলপ্রায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে এবং স্বামীকে ফিরে পেতে আদম বেপারীর পরিবারের কাছে নিয়মিত যোগাযোগ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না বলে ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। স্বামীর খোঁজ পেতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত, নারায়ণগঞ্জে সুলতানা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন যার নম্বর-১৪৭/১৭।

মামলার এজাহারে ও ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্দরের ধামগড় ইউপি’র খোঁসের ছড়া গ্রামের পরশ আলী’র ছেলে মজিবর (৫৫) দীর্ঘ ৩০ বৎসর যাবৎ সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং তার স্ত্রী হনুফা বেগম (৪৫) ও তার ছেলে সোহেল (৩০) কে দিয়ে ভাল বেতনে লোক বিদেশে নেবার নামে বিভিন্ন লোককে প্রলোভন দেখাতে থাকে। বিদেশ গিয়ে ভাল বেতনে চাকুরী করার আশায় সেই প্রলোভনের মিথ্যে ফাঁদে পা বাড়ায় একই এলাকার মৃত কাজিম উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৫)। বিদেশ যেতে আগ্রহী নজরুলকে দালাল মজিবরের স্ত্রী হনুফা ও ছেলে বিদেশ যেতে ৬ লক্ষ টাকা লাগবে জানালে, নজরুল তার পক্ষে এতটাকা জোগাড় করা সম্ভব নয় বলে তাদেরকে জানায়। বিষয়টি হনুফা তার স্বামী বিদেশে থাকা দালাল মজিবরকে ফোন করে জানায় এবং মজিবর ফোন করে নজরুলকে জানায় যে, এখন সব টাকার দরকার নেই। এখন ২ লক্ষ টাকা দিলে হবে, আর যেহেতু তুমি বিদেশে এসে আমার সাথে একই মালিকের অধীনে কাজ করবে তাই চাকুরী করে বাকি টাকা পরিশোধ করে দিলেই হবে। দালাল মজিবরের কথায় নজরুল রাজি হয় এবং পরের দিন হনুফা বেগমের কাছে ২ লক্ষ টাকা তুলে দেয়।

তার কয়েক দিন পর সৌদি এম্বাসী যেতে হবে বলে নজরুলকে ঢাকায় যেতে বলে এবং তাদের কথামত নজরুল ঢাকায় গেলে তাকে আটকে রেখে জানানো হয় ২ দিনের মধ্যে অবশিষ্ট ৪ লক্ষ টাকা দিতে হবে, তা না হলে বিদেশ যেতে পারবেনা এবং যে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছে সে টাকাও ফেরৎ পাবেনা। বিষয়টি তৎক্ষনাৎ নজরুল তার স্ত্রী সুলাতানাকে জানালে নিরুপায় হয়ে সুলতানা তার বাবা নাসির উদ্দিনকে জানালে তিনি মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে নিজের বসতভিটে বন্ধক রেখে দ্রুত টাকার ব্যবস্থা করে দেন। ৬ লক্ষ টাকা পাবার পর ১৫ই মার্চ নজরুলকে বিদেশ নেয়া হয়। সৌদিতে যাবার পর ৮-১০ দিন পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বললেও এপ্রিল মাস থেকে নজরুলের কোন ফোন পাওয়া যায়নি এবং তার সাথে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন স্বামীর খবর পেতে মজিবরের বাড়িতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সুলতানাকে নানান অজুহাতে তাড়িয়ে দেয়া হয় এবং এপ্রিলের ১০ তারিখে মজিবর ফোন করে নজরুলের পরিবারের কাছে জানান যে, নজরুল সেখানে আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি জানতে পেরে নজরুলের পরিবার তার লাশ ফেরৎ পাঠানোর জন্য যাবতীয় সকল ব্যবস্থা করার জন্য মজিবরকে অনুরোধ জানান কিন্তু আজও পর্যন্ত তার লাশ ফেরত পাঠানো হয়নি বলে জানান ভূক্তভোগী পরিবার। এদিকে কখন কিভাবে তার লাশ এয়ারপোর্ট থেকে গ্রহণ করা হবে এ বিষয়ে নজরুলের পরিবার বারংবার মজিবরের সাথে যোগাযোগ করলেও সে সদোত্তর দেয়নি এবং ১ মাস তাদের ঘুরানোর পর এখন থানায় অভিযোগ করার কথা জানিয়ে দেয় মজিবর। এ ঘটনার পর ভূক্তভোগী সুলতানা বন্দর থানায় মামলা দায়েরের জন্য গেলে মামলা না নিলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত, নারায়ণগঞ্জে নজরুলের স্ত্রী সুলতানা বাদী হয়ে মজিবরের স্ত্রী হনুফা বেগম (৪৫) ও ছেলে সোহেল (৩০) কে আসামী করে মামলা দায়ের করে। মামলাটি তদন্তের জন্য বর্তমানে বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাছাড়া মানবকল্যান ও জনশক্তি অধিদপ্তরেও এ বিষয়ে একটি অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান তারা। তাছাড়া নজরুলের মোবাইল ও পাসপোর্ট মজিবুর জব্দ করে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেছেন নজরুলের স্ত্রী। এদিকে নজরুলের পরিবারের দাবী যদি বৈধভাবে নজরুল বিদেশ গিয়ে থাকে তাহলে তো তার লাশ অবশ্যই দেশে ফেরৎ আসার কথা, দেশের যে সকল লোক বিদেশে মারা যায় তাদের লাশ দেশে আসে এটা সবার জানা, তাহলে নজরুলের লাশের কোন হুদিশ পাওয়া যাচ্ছেনা কেন। এক অজানা আশংকা নিয়ে স্বামী হারিয়ে পাগলঅবস্থায় দিন কাটাচ্ছে তার স্ত্রী সুলতানা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা।

এ বিষয়ে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত