আত্মহননকারী যুবককে বাঁচানো সাহসী গেইটম্যানকে রেলমন্ত্রীর তলব রবিবার

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নিজের জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে ট্রেনে কেটে আত্মহত্যা করতে রেললাইনে শুইয়ে পড়া এক যুবককে বাঁচালেন বিল্লাল হোসেন মজুমদার (৫৮)। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রেলগেইটের গেইটম্যান তিনি। নিশ্চিত মৃত্যু সামনে  যেনেও তিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে লাইনে শুইয়ে থাকা যুবককে টেনে হেচঁড়ে যুবকটির জীবন বাঁচান। ঘটনাটি ঘটেছে ২১ নভেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া রেলগেইটে ।তখন গেইটম্যানের দায়িত্বরত ছিলেন এই বিল্লাল হোসেন মজুমদার । এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে ২১৭ নং যাত্রীবাহী ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল । রেল লাইনের ওপর থাকা সব মানুষকে সরিয়ে দিতে ছুটাছুটি করছিলেন বেলাল। এর মধ্যে একজন মানুষ হঠাৎ শুয়ে পড়েন রেললাইনে। আর কয়েক সেকেন্ড দেরি হলে হয়ত দুইজনেরই মৃত্যু হতে পারতো। এই বীরত্বের নজীর দেখালেন রেলওয়ের সবচেয়ে সাহসী ব্যাক্তি বিল্লাল। যেই ঘটনার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার পর ব্যাপক আলোরন সৃষ্টি হয়েছে সারাদেশে ।যার জন্য রেল মন্ত্রালয়ে বিল্লাল হোসেন মজুমদারকে রবিবার সাক্ষাতের জন্য তলব করেছেন রেল মন্ত্রী।

ঘটনা প্রসঙ্গে মো. বিল্লাল হোসেন মজুমদারের সাথে একান্ত সাক্ষাতকালে জানান, ২১ অক্টোবর সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন আউটারের রেলগেটের দুই পাশে রাস্তার ওপর আড়াআড়ি লোহার দণ্ড ( গেইট ) ফেলে রাখেন। কারণ এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী ২১৭ নং যাত্রীবাহী ট্রেন আসছিল। এবং ট্রেন ছেড়ে আসার আগেই আমাদের সিগন্যাল জানিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় লোহার দণ্ডের দুই পাশে বিভিন্ন যান দাঁড়িয়ে থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই রেললাইন পার হচ্ছিল। যা প্রতিনিয়তই কিছু লোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে থাকে। আর তা সামলাতে আমাদের পোহাতে হয় অনেক ভোগান্তি।এসময় তিনি এক হাতে নিশান নাড়াচ্ছিলেন, অন্য হাত দিয়ে পথচারীদের বাঁধা দিচ্ছেলন।

হঠাৎ ২৫-২৬ বছরের এক যুবক রেললাইনে শুইয়ে পড়েন। ঠিক সে সময় দ্রুত বেগে চলে আসে ট্রেনটি। ছেলেটিকে বাঁচাতে হাতে থাকা নিশান উড়িয়ে ট্রেন চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না। তাই নিজের জীবন বাজি রেখে লাইনে শুইয়ে থাকা যুবকটির হাত শক্ত করে ধরে টান দিয়ে লাইন থেকে সরিয়ে নেন। কয়েক সেকেন্ড দেরি হলে নিশ্চিত দুইজনেরই মৃত্যু হতো।

ভিডিওটি দেখুন :

https://www.youtube.com/watch?v=rJwtvEhjblk

বিল্লাল হোসেন মজুমদার বলেন, মাত্র ৫-৭ সেকেন্ডের ব্যবধান। আমি নিজেও জানি না কি করে যুবকটিকে বাঁচালাম। বয়স্ক মানুষ, শরীরেও তেমন জোর নেই। মনের জোরেই তাকে টান দিয়ে লাইন থেকে সরিয়ে আনি। এরপর যুবককে তার মায়ের হাতে তুলে দিই। তার মা বলেছে, তার ছেলে বাড়ি থেকে রাগ করে চলে এসে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। যুবকের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে মাসদাইর এলাকায় । তবে আমি অত্যন্ত খুশি যে একজনের জীবন বাচাঁতে পেরেছি। আর তার জন্য আমাকে রবিবার রেল মন্ত্রালয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করতে রেলমন্ত্রী সাহেব ফোন করেছে।

বিল্লাল হোসেন মজুমদার এক পুত্র আর তিন কন্যা সন্তানের জনক। ছেলে  মোস্তার হোসেন মজুমদার এবার ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়েছেন। বড় মেয়ে জীবন্নাহার মজুমদার ঢাকার তিতুমীর কলেজে অনার্সে পড়ছেন। মেঝো মেয়ে নাজমুন্নাহার এবার এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ছোট মেয়ে শামসুন্নাহার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী সাজেদা বেগম গৃহবধূ। সন্তান লালন পালন করার পাশাপাশি ঘর সামলান।

পুরো ঘটনাটি চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের লাগানো সিসি ক্যামেরায় বন্দি হয়। চাষাঢ়া স্টেশন মাস্টার আমিনুল ইসলাম ক্যামেরার ফুটেজ দেখালে বিল্লাল হোসেন কেঁদে ফেলেন।

ঢাকা রেলওয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. মুজিবর রহমান জানান, আমরা যখন ক্যামেরার ফুটেজ দেখছি তখনই চমকে উঠছি। রেলওয়েতে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। এমন ঘটনায় সাহস করে কেউ এগিয়েও আসে না। তাই এ সাহসী গেটম্যানকে সম্মানিত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে।

এ বিষয়ে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কাজী রফিকুল আলম বলেন, ভিডিওটি এখনও দেখিনি। তবে বিল্লালের বীরত্বের কথা শুনেছি। তাকে নিশ্চয় পুরস্কৃত করা হবে। সে রেলওয়ের গৌরব।

add-content

One thought on “আত্মহননকারী যুবককে বাঁচানো সাহসী গেইটম্যানকে রেলমন্ত্রীর তলব রবিবার

  1. দুনিয়াতে এখনো ভালো মানুষ আছে বলেই আমরা খারাপ মানুষ ভালো আছি।
    আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিক, আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত