আতঙ্কয়ের জনপদ আতলাশপুর!

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : আতঙ্ক আর ভয়ের জনপদে পরিণত হয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার আতলাশপুর ( হাটাবো)। আতঙ্কের এ জনপদে জুয়েল বাহিনীর প্রধান জুয়েল ও তার বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ৪০ হাজার মানুষ। কথিত আছে, এ বাহিনীর ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খায়। তারা এতোই বেপোরোয়া তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রভাবশালীরাও থাকে তটস্থ। হেন কোন অপকর্ম নেই যা এ বাহিনী করে না।

সন্ধ্যা হলেই এ বাহিনীর ভয়ে মানুষ ঘরে ফিরে খিল আটকে। এলাকায় নেমে আসে সুনশান নীরবতা। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলবে এমন সাহস না-কি ঐ তলাটে কারো নেই। এ এলাকায় সমানতালে রাতে-দিনে গুলি ফোটে। তাদের অভিযোগের ঝুলি বেশি হলেও প্রশাসন তাদের টিকিটি ছুঁতে পারে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাঞ্চন পৌরসভার আতলাশপুর (হাটাবো) এলাকার এমারত হোসেনের বখাটে ছেলে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। তার গড়ে তোলা বাহিনীতে প্রায় ২৫ জনের অস্ত্রধারী বাহিনী রয়েছে। এদের মধ্যে দিপ্তী, হিরা, ইফসুফ, রাজিব, বাবুল, রুমান তার অপরাধ জগতের সাম্রাজ্য দেখভাল করে। এ বাহিনী এলাকার সাধারণ মানুষের জমি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ বাহিনীর ভয়ে আতলাশপুর এলাকার ৪০ হাজার মানুষ এখন ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে জীবন-যাপন করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বাহিনী দিনে ছিনতাই, চাঁদাবাজি আর জমি জবর দখলে ব্যস্ত থাকে। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পর শুরু হয় তাদের অন্ধকার জগতের কারবারি। সন্ধ্যা হলেই জমে উঠে নেশা আর নারী নিয়ে ফূর্তি।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর গোটা এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় মানুষের চলাচল। সন্ধ্যা নামলেই এলাকায় নেমে আসে সুনশান নীরবতা। ভয়ে কেউ ঘরের বাহির হয় না। কালেভদ্রে কেউ বের হলেও (কুলহু আল্লাহ) সূরা পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে বের হন।

এ বাহিনীর ভয়ে সাধারণ মানুষতো দূরের কথা বাঘে-মহিষেও পানি খায়। এতো ভয় ও আতঙ্কের মাঝে কয়েকজন এ প্রতিবেদকের কাছে মুখ খোলার সাহস করেন। তাদেরই একজন ফারুক হোসেন ওরফে পারু।

তিনি বলেন, জুয়েল ও তার লোকজন চাঁদা না দেওয়ায় ৪ মে আমার ছেলে রবিনকে হত্যার চেষ্টা করে। তার কাছ থেকে টাকা পয়সা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। মরণের ভয় ছেড়ে দিয়া সাহস করে থানায় অভিযোগ করেছি। আতলাশপুর এলাকার মোবারক হোসেন একজন বালু ব্যবসায়ী। তার কাছে দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর চালায়।

তিনি আরও বলেন, বাজান এ বাহিনীর ভয়ে মানুষ এলাকা ছাইড়া যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতাছে। আমার কাছে এক লাখ টাকা চান্দা চাইছে। না দেওয়ায় জুয়েল আর ওর লোকজন আমার বালুর গদিতে হামলা ও ভাংচুর করে।

আরেক ভুক্তভোগী লাকি আক্তার। যখন কথা বলছিলেন তখন তার দুইচোখ গড়িয়ে পানি পড়ছিলো। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ভাই ওগো বিরুদ্ধে মুখ খোলা আর জীবন দেওয়া এক সমান। এ বাহিনী আমার জমি দহল করবার চেষ্টা করে। বাঁধা দেওয়ায় বাড়িঘর ভাংচুর করে। মহিলাগো হেনেস্থা করে। লুটপাটও করে। ভয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে ওগো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। মামলাটি দেখার জন্য নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীনকে তদন্তদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পারু, লাকি কিংবা মোবারকের মতো আরো অনেকে আছেন যারা ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না।
অভিযুক্ত জুয়েলের বক্তব্য নিতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। যেহেতু বিষয়টি জেনেছি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত