নারায়ণঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ রিফাত ) : হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ। ২৬শে রমজান, ৯ই মে রবিবার দিবাগত রাতটি পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। দিনের শেষে আসন্ন রাতটি ২৭ রমজানের রাত হিসেবে চিহ্নিত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে এ রাতটি হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাতের চেয়ে পুণ্যময় একটি রাত লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর আরবী শব্দ যার অর্থ হলো বরকতময়, সম্মানিত বা মহামান্বিত রাত। ফারসি ভাষায় একে শবে কদর বলা হয়।
হাদিস শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী আজকের রাতটি পবিত্র লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। মাস ব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে অধিক সম্ভাবনার ভিত্তিতে আজ রাতে সারা দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করে থাকেন। মাহে রমযানের বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব অনেকাংশে মহিমান্বিত এ রাতের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই রজনীতে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সারা রাত নফল নামাজ, কোরাআন ও হাদীসের আলোকে জিকির, কবর জিয়ারত ও নিজের কৃত গুনাহের জন্য মাফ চেয়ে থাকে। মহিমান্বিত এ রাতে অবতীর্ণ হয় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল–কুরআন। এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, কদরের এই রাতে ইবাদত করলে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই এই রাতে ইবাদত–বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিগণ।
মহিমান্বিত এ রাতটি রমজান মাসের ঠিক কোন তারিখে, তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও, ২৬ রমজান দিবাগত রাতকেই মূলত শবে কদর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৬১০ হিজরীতে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় শবে কদরের রাতে সর্ব প্রথম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পবিত্র কোরআনের কিছু অংশ অবতীর্ণ হয়। পরে ২৩ বছর ধরে ক্রমান্বয়ে আল–কোরআনের পুরোটা অবতীর্ণ হয়। পবিত্র এ রাতে পরকালে মুক্তির জন্য কুরআন তেলাওয়াত সহ ইবাদাত–বন্দেগীর আহ্বান জানান ইসলামী চিন্তাবিদরা।
ক্ষনিকের জীবনে অধিক পূণ্য অর্জনের জন্য শবে কদর উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত বলে জানান ইসলামী চিন্তাবিদরা। এ কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়।
হাদিস শরিফে আছে, ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে, ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। শবে কদরের এ রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয় এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে কোরআন শরিফে আল–কদর নামে একটি সূরাও নাজিল করা হয়।
হাদিসের ভাষ্য মতে, রমজান মাসের শেষাংশের যেকোনো বিজোড় রাত অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯–এর মধ্যে যেকোনো রাতই লাইলাতুল কদর। এ জন্য রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে ইতেকাফের বিধান রাখা হয়েছে, যাতে ইতেকাফকারীরা সহজেই লাইলাতুল কদর পেতে পারে এবং এর ফজিলত লাভ করতে পারে। আলেম সমাজের অধিকাংশের মতে, ২৭ রমজানের রাতই পবিত্র লালাইতুল কদর। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর বর্ণনা মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে কতক সাহাবী ২৭ রমজানের রাতকে লাইলাতুল কদর হিসাবে স্বপ্ন দেখেছিলেন। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: আমাকেও তোমাদের মত ২৭ তারিখ রাতকেই লাইলাতুল কদর হিসাবে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরকে নির্দিষ্ট করতে চায় সে যেন ২৭ তারিখ রাতকে নির্বাচন করে নেয়।