নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : আজ ২৪শে রমজান, ৭ই মে শুক্রবার পবিত্র জুমাতুল বিদা। মাহে রমজানের শেষ জুম্মার দিন মুসলিম বিশ্বে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এদিন রমজান মাসের শেষ জুম্মা হিসেবে আল–কুদস দিবস পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তি পেতে মুসলিম উম্মাহ আজ জুম্মার নামাজ শেষে মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করবেন। ইসলামের সূচনাকালে মদিনায় যখন রমজানে রোজার বিধান নাজিল হয়, তখন থেকেই প্রতি বছর রমজানের শেষ জুম্মাকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে আদায় করে আসছে মুসলিম উম্মাহ। যারা মসজিদে জুম্মার জামাতে যাবেন তারা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানবেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আহবান সারা দেশে দোয়া :
করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব হতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সকল মানুষের সুরক্ষা, অসুস্থদের দ্রুত আরোগ্য লাভ, মহামারি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি এবং দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করে আজ ২৪ রমজান ১৪৪২ হিজরি পবিত্র জুমাতুল বিদা নামাজ শেষে দেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দেশের সকল মসজিদের খতিব, ইমাম, মুসল্লিদের ও মসজিদ কমিটিকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৬ই মে বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। একই উপলক্ষে দেশের অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিজ নিজ ধর্ম মতে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলীম)।
বিশ্ব মুসলিমের কাছে সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবারের মর্যাদা অধিক। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আসা রমজান মাসের শুক্রবার গুলোর মর্যাদা আরো অধিকতর। শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদার মধ্য দিয়ে পবিত্র মাহে রমজানকে এক বছরের জন্য বিদায় সম্ভাষণ জানানো হয়।
এ দিনটিতে মুসল্লিরা আগে আগে মসজিদে যাবেন। জুমার নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায় যত ভুলক্রটি হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চাইবেন, আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের কামনায় চোখের পানি ঝরাবেন। দোজখের আগুন থেকে বাঁচার আকুতি জানাবেন। জীবনের পথ যেন কল্যাণময় হয় তার জন্য হাত তুলবেন।
জুমাতুল বিদাসহ মাহে রমজানের প্রত্যেক জুম্মাবারে ইবাদত–বন্দেগিতে অধিক সওয়াব লাভের সুযোগ থাকে। পবিত্র কোরআনে জুম্মার নামাজ জামাতে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, হে মুমিনগণ ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়–বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা আল–জুমুআ, আয়াত–৯)
রমজান মাসের সর্বোত্তম দিবস হলো জুমাতুল বিদা, যা মাহে রমজানে পরিসমাপ্তিসূচক শেষ শুক্রবারে পালিত হয়। এদিন মুমিন মুসলমানদের ঈমানি সম্মিলন হয়। এদিনে এমন একটি সময় আছে যে সময় মুমিন বান্দার মোনাজাত ও ইবাদত আল্লাহ বিশেষভাবে কবুল করেন। এ সময়টি হলো দ্বিতীয় খুতবার আজানের সময় থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুম্মাবার সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃত্ব স্থানীয় দিন। এ পুণ্য দিনে আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। এদিন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। এদিন তিনি পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করেন। এদিন তাঁর ইন্তেকাল হয়। এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (মিশকাত)
নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহ খাতা মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর নেই। জুমাতুল বিদার বিশেষ তাৎপর্য এই যে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.)-এর পুত্র মহামতি হজরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহর মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুননির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদ আল–আকসা। মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববির পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে বায়তুল মোকাদ্দাস’ বা ‘মসজিদ আল–আকসা।