আই‌নের উ‌র্ধ্বে কেউ না, সাংবা‌দিক‌দের উ‌দ্দে‌শ্যে যা বল‌লেন পু‌লিশ কর্মকর্তাগণ !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : অত্যন্ত আ‌বেকঘন প‌রি‌বে‌শের মধ্য দি‌য়ে অন‌ষ্ঠিত হল নারায়ণগ‌ঞ্জের আ‌লো‌চিত পু‌লিশ সুপার মো. হারুন অর র‌শি‌দের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে এ আ‌য়োজন ক‌রেন জেলা পুলিশ।

এসময় সত্য তো‌লে ধরার অনু‌রোধ জা‌নি‌য়ে সাংবা‌দিক‌দের উ‌দ্দে‌শ্যে অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার সুভাষ সাহা ব‌লেন, আই‌নের উ‌র্ধ্বে কেউ না। আপনারা সত্য ঘটনা তু‌লে ধর‌বেন। যারা ই‌য়োলো জার্না‌লিসম কর‌বেন তারাও কোন না কোন এক‌দিন আই‌নের আওতায় আস‌বেন। বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠা‌নের প‌রিচালনার মা‌ঝে তিনি এসব কথা বলেন৷

এছাড়া অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার নু‌রে আলম বক্তৃতায় ব‌লেন, এই এস‌পি হারুন যখন এসেছে আপনারাই হাইলাইট ক‌রে‌ছেন। কিন্তু এখন যা দেখ‌ছি। যা হাইলাইট করা হ‌চ্ছে তা আস‌লে স‌ঠিক নয়, মূল ঘটনা জান‌তে হ‌বে। আজ‌কে নারায়ণগঞ্জ কেমন আ‌ছে আর কেমন ছিল এটার সা‌ক্ষী আপনারা। যে‌কোন একটা বিষয় নি‌য়ে হুজু‌কে লিখা তো ঠিক নয়। মি‌ডিয়া‌তে যেভা‌বে আস‌ছে ঠিক নয়। বা‌কি বিষয়টা মামুন ( অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন ) ব্যক্ত কর‌বেন। একটা মানুষ এত অল্প সম‌য়ে কি ক‌রে‌ছে বুঝ‌তে হ‌বে। স্যা‌রের ( এস‌পি হারুন অর র‌শিদ ) কার‌ণে আজ‌কে হাজার হাজার মানুষ স্বস্তি‌তে আ‌ছে। ভা‌লো কাজ কর‌লে, ভা‌লো মানু‌ষের জন্য হাইলাইট কর‌বেন।

অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন ব‌লে‌ছেন, কারো বিরু‌দ্ধে ষাট এর অ‌ধিক ওয়া‌রেন্ট থাক‌বে কিন্তু পু‌লিশ তাক‌ে ধরবে না। এটা তো হল না। কারণ এটা আইন‌কে বৃদ্ধাঙ্গু‌লি দেখা‌নো হল । স্যার ( এস‌পি হারুন অর রশীদ ) যখন জান‌লেন এমন ঘটনা তি‌নি অ্যাকশান নি‌লেন। ত‌বে তি‌নি যে‌হেতু সম্মা‌নিত ব্য‌ক্তি সেভা‌বেই তাক‌ে ট্রিটমেন্ট দি‌য়ে‌ছেন। উ‌নি যে‌হেতু অসুস্থ। উনা‌র সা‌থে কথা ব‌লে‌ছেন, উ‌নিও আইন‌কে শ্রদ্ধা জা‌নি‌য়ে‌ছেন। চ‌লে গে‌লেন। কিন্তু কে বা কারা কোন একটা পক্ষ ক্ষুব্দ হ‌লেন। অথচ সেই সম্মা‌নিত ব্য‌ক্তি তি‌নিও স্যা‌রের হস‌পিটা‌লি‌টির প্রশংসা ক‌রে‌ছেন। তেম‌নি পার‌টেক্স গ্রু‌পের কর্ণধা‌রের বিষয়‌টিও দে‌খে‌ছেন। কারণ আইন সবার জন্য সমান। য‌দি কেউ গুলশা‌নে যাওয়া আসা থা‌কে জান‌বেন, চা‌রিত্রিক অ‌নেক সমস্যা আ‌ছে। কেউ য‌দি মদ্যপ্য অবস্থায় সড়‌কে চলাচ‌লের বিঘ্ন ঘটায়। একজন ইউ‌নিফর্ম পড়া পু‌লিশ‌কে পিস্তল উ‌চি‌য়ে ধ‌রে। তা অবশ্যই কোন ভা‌লো কাজ নয়। সে ভ‌বিষ্য‌তেও বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটা‌তে পা‌ড়ে। তাই আইন‌কে সম্মান ক‌রেই স্যার আইনগত ব্যবস্থা নি‌য়ে‌ছেন। সেখা‌নে কোন একটা পক্ষ, কে বা কারা বিষয়টা‌কে ভিন্নভা‌বে নি‌য়ে যা‌চ্ছে। যা স‌ত্যি নয়, ত‌বে সত্য কখনও চাপা থা‌কে না। কোন এক‌দিন সবই জান‌তে পার‌বেন। তদন্ত হ‌চ্ছে। কিন্তু স্যা‌রের বদলী এ‌কেবা‌রেই স্বাভা‌বিক প্র‌ক্রিয়া। স্যার এমনই তি‌নি যেখা‌নে যা‌বেন আ‌লোচনায় থাক‌বেন। এই কথাগু‌লোই আমার গন্যমান্য ব্য‌ক্তিবর্গ ও সাংবা‌দিকে‌দের জানা‌নোর ছিল।

এক‌টি উদাহরণ দি‌য়ে তি‌নি ব‌লেন, আমার ভাই যদি মাডার হয়,‌ কেউ যদি খুন করে। তাহলে আমি পুলিশের কাছে একসেপ্ট করবো। যেনো পুলিশ আমার ভাইয়ের হত্যাকারীকে ধরে নি‌য়ে আ‌সে। তা‌কে না পে‌লে তার মা বাবা‌কে ধ‌রে নি‌য়ে আস‌বে। চা বিস্কুট খাওয়া শে‌ষে জিজ্ঞাসবাদ কর‌বে। মূল ঘটনা উদঘাটন কর‌বে। জান‌বে আপ‌নি হত্যার সা‌থে জ‌ড়িত কিনা। তেম‌নি আমার ভাইও য‌দি মার্ডার হয় বা আসামী, তা‌কেও যেন একইভা‌বে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়। একই পেশার লোক ও পু‌লি‌শের কা‌ছে এটাই প্রত্যাশা ক‌রি। সে মান‌সিকতা নি‌য়েই আমরা কাজ কর‌তে এ‌সে‌ছি। আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা পুলিশকে নিয়ে বা ক্রাইম নিয়ে যারা কাজ করেন। ক্রাইম রিপোটিং করেন আমরা সবাই জানি, পু‌লিশের কাজ এক‌টি হেট‌লেস জব। যখন আমরা কোন কাজ ১০০% সঠিক ভাবেও করবো। তখনও কোন একপক্ষ আমাদের প্রতি ক্ষোব্দ থাকবে । কারন ঐ কাজটা করতে গিয়ে আমি কোন কাউকে না কাউকে ব্যাথা দিয়েছি, কাউকে না কাউকে আঘাত দিয়েছি। তাহলে এই বাস্তবতা যেনেই আমি ও আমরা পুলিশের কাজ করি।

তিনি আরো বলেন, আমরা আ‌গেই জানতাম স্যার ( এস‌পি হারুন অর রশীদ ) যে চ‌লে যা‌বেন ! কারণ গত আগস্ট মাসেই চ‌লে যাওয়ার কথা ছিল। যখন এডিসনাল ডিআইজিদের তালিকা দেখ‌তে পাই, কিন্তু স্যা‌রের নাম আমরা দেখ‌তে পাই‌নি। তখন আমরা ‍কিন্তু খুবই অবাক হয়েছি, আমরা সব সময় স্যারের সাথে কথা বলতাম আর বলতাম স্যার আমাদের আগেই কি আপনি চলে যাবেন ? আপনি থাকতে থাকতে আমরা বিদায় নিতে চাই। কারন স্যার সারা জেলায় সি‌নিয়রদের ম‌ধ্যে একজন এস‌পি। প‌রে স্যার বল‌লেন নিয়ম অনুযায়ী পরব‌র্তিতে তি‌নি হ‌বেন। আগামী মা‌সেই চলে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তিনি এই ( নভেম্বর ) মাসে যা‌চ্ছেন। আগে নারায়ণগঞ্জ কি ছিলো আর এখন নারায়ণগঞ্জ কি হয়েছে, আপনারা নারায়ণগঞ্জ বাসী এটা ভালো করে বলতে পারবেন। ( হারুন অর রশীদ) স্যার লালবাগে ডিসি হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। স্যার শাপলা চত্ত্বরে সেই হেফাজত ইসলামের ঘটনায় স্যার দু:সাহসীকতার মাধ্যমে রক্ষা করেছেন। স্যারের কোন তুলনা নেই। গত ৩০ ডিসেম্বর যখন জাতীয় নির্বাচন স্যার যখন এর আগে ২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের এসপি হিসেবে যোগ দেন। নারায়ণগঞ্জে আসে তার মেধা ও সাহসীকতা মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। আমরা যখন নারায়ণগঞ্জ আসি আমরা তখন নারায়ণগঞ্জে ধ্যান কাজে লাগিয়ে সর্তক থাকার চেষ্টা করি ।

অনুষ্ঠা‌নে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ সার্কেল) খোরশেদ আলম বলেন, অনেকে অনেক কিছু লিখছেন। এ বিষয়গুলো আরো গভীরভাবে জানা দরকার। উনি অনেক কাজ করেছেন নারায়ণগঞ্জের জন্য। কাজগুলো তুলে ধরা উচিত। অনেক হলুদ সাংবাদিক আছে যারা অনেক কিছু লিখছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, স্যার (এসপি হারুন অর রশিদ) সত্যিকারের একজন নেতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক স্যার। স্যার ছাত্র রাজনীতিতে বিভিন্ন পদে ছিলেন। স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। স্যার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন স্যার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক লাঞ্চিত হয়েছে বঞ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রাণের সংগঠন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে আমিও সেদিন রাজপথে ছিলাম। আমিও মার খেয়েছি নির্যাতিত হয়েছি নিপীড়িত হয়েছি। আমার বাড়িতেও আক্রমন হয়েছে হামলা হয়েছে। তখন কিন্তু কেউ ঠেকায় নাই। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় তাই আপনারা কথা বলতে পারেন। মনে রাখবেন পুলিশ আপনাদের সব থেকে বড় বন্ধু।

বিদায় সংবর্নাধনা অনুষ্ঠা‌নে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম প্রমুখ।

উ‌ল্লেখ্য, গত বছরের ২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের এসপি হিসেবে যোগ দেন হারুন অর রশিদ। গত ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে পুলিশ হেড কোয়াটারে বদলি করা হয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত