নারায়ণগঞ্জে প্রতীক নিলেন ৫ সংসদীয় আসনের ৩৬ প্রার্থী
নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নানা জল্পনা কল্পনা অবসান ঘটিয়ে অবশেষে চুড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুরু হলো নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনে ৩৬জন প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উৎসব মুখর পরিবেশেই এ প্রতীক দেয়া হয়। এর আগে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্য্যালয়ের মূল ফটকের সামনে প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান নেন। পরে নিজ দলের প্রতীক পেয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেন এমপি প্রার্থী ও কর্মী সর্মথকরা। এছাড়াও নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরাও নৌকা, লাঙ্গল ও ধানের শীষের প্রতিকী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবেই প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়ে। প্রার্থীদের পক্ষে স্লোগানে মুখরিত হতে শুরু করেছে পাড়া-মহল্লা ও রাজপথ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২০ লাখ ৩৪ হাজার ২৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯ জন ও নারী ভোটার ১০ লাখ ১৯৪ জন। প্রতীক বরাদ্দ অনুযায়ী আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত ৫ প্রার্থী লড়বেন ধানের শীষ প্রতীকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের ৩ প্রার্থী লড়বেন নৌকা প্রতীকে, জাতীয় পার্টির ২ প্রার্থী লড়বেন লাঙ্গল প্রতীকে। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীগণ। এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি যেন লঙ্গন না হয় র্প্রাথীদের সেদিকে সতর্ক থেকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রাব্বী মিয়া বলেছেন, বাংলাদেশেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে অর্থনীতির নিউক্লিয়াস। আমরা সকলের সহযোগীতায় সারা বাংলাদেশের ন্যায় এ জেলায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সদা সচেষ্ট থাকবো। প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত নির্বাচনী সকল কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি, আশা করি সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে আপনাদের সহযোগীতা একান্তভাবে কামনা করছি।
জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ বিনির্মানে পুলিশ কাজ করছে। আগামী প্রজন্মের জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সরকারের পাশাপাশি আমরাও কার্যক্রম পরিচালনা করছি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলায় পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছে।
প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে যারা লড়ছেন :
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে লড়বেন ৭ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান লড়বেন ধানের শীষ প্রতীকে, আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) লড়বেন নৌকা প্রতীকে, জাতীয় পার্টির মো. আজম খান লড়বেন লাঙ্গল প্রতীকে, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির মো. মনিরুজ্জামান চন্দন লড়বেন কাস্তে প্রতীকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. ইমাদুল্লাহ লড়বেন হাতপাখা প্রতীকে, জাকের পার্টির মাহফুজুর রহমান লড়বেন গোলাপফুল প্রতীকে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মো. হাবিবুর রহমান লড়বেন সিংহ প্রতীকে।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে লড়বেন ৪ জন প্রার্থী। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবু লড়বেন নৌকা প্রতীকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম আজাদ লড়বেন ধানের শীষ প্রতীকে, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির মো. হাফিজুল ইসলাম লড়বেন কাস্তে প্রতীকে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন লড়বেন হাতপাখা প্রতীকে।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে লড়বেন ৮ জন প্রার্থী। তাদের প্রতীকগুলো হলো, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা লড়বেন লাঙ্গলে প্রতীকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান লড়বেন ধানের শীষ প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত লড়বেন সিংহ প্রতীকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. ছানাউল্লাহ নূরী লড়বেন হাতপাখা প্রতীকে, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির আ. সালাম বাবুল লড়বেন কাস্তে প্রতীকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডির) এএনএম ফখরউদ্দিন ইব্রাহিম লড়বেন তারা প্রতীকে, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের (বিটএফ) মো. মজিবুর রহমান লড়বেন ফুলের মালা প্রতীকে, জাকের পার্টির মো. মুরাদ হোসেন জামাল লড়বেন গোলাপফুল প্রতীকে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে লড়বেন ৯ প্রার্থী। তাদের প্রতীকগুলো হলো, আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান লড়বেন নৌকা প্রতীকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট্রের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী লড়বেন ধানের শীষ প্রতীকে, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সেলিম মাহমুদ লড়বেন মই প্রতীকে, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহমুদ হোসেন লড়বেন কোদাল প্রতীকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম লড়বেন হাতপাখা প্রতীকে, সিপিবির প্রার্থী ইকবাল হোসেন লড়বেন কাস্তে প্রতীকে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) মো. ওয়াজি উল্লাহ মাতব্বর অজু লড়বেন গাভী প্রতীকে, এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ থেকে মনোনিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছালাউদ্দিন খোকা চূড়ান্ত মনোনয়ন চিঠি জমা দিতে না পাড়ায় তাকে প্রতীক দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন লড়বেন বটগাছ প্রতীকে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে লড়বেন ৮ জন প্রার্থী। তাদের প্রতীকগুলো হলো, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমান লড়বেন লাঙ্গল প্রতীকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী এসএম আকরাম লড়বেন ধানের শীষ প্রতীকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাজী মো. আবুল কালাম লড়বেন হাতপাখা প্রতীকে, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আবু নাঈম খান বিপ্লব লড়বেন মই প্রতীকে, খেলাফত মজলিসের হাফেজ মো. কবির হোসেন লড়বেন দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী লড়বেন চেয়ার প্রতীকে, সিপিবির প্রার্থী এড. মন্টু ঘোষ লড়বেন কাস্তে প্রতীকে, জাকের পার্টির মোর্শেদ হাসান লড়বেন গোলাপফুল প্রতীকে।
উল্লেখ্য, প্রচারণা শেষ হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ।