নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : আটকে গেছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। অধিকাংশ নেতা নগরে ঐক্যবদ্ধ কমিটি চাইলেও কেউ কেউ আবার উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত দুই কমিটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে জেলার নেতাদের মধ্যে মতৈক্যও হচ্ছে না। তবে গেল বছরের ২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন দলটির সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ কমিটি ঘোষণার পরপরই জেলার আওতাধীন ৭টি থানা কমিটি পূর্ণগঠনে র্কাযক্রম শুরু হবে বলে ধারণা ছিলো থানা কমিটির নেতৃবৃন্দের। এতে করে দলের নেতাকর্মীরা হবে সুসংগঠিত ও পুনর্জীবিত। আসবে নতুন নেতৃত্ব, উজ্জীবিত হবে তৃণমূল। কিন্তু জেলা কমিটি অনুমোদনের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও থানা কমিটি গঠনে দৃশ্যমান হচ্ছেনা আশানুবাদ কোন পদক্ষেপ। আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু, কবে হবে কমিটি? তৃণমুলের প্রশ্ন।
আর এতে করে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছে তৃণমূল। নেতাকর্মীরা বলছেন আসন্ন নির্বাচনের আগে এসব কমিটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। জেলায় বর্তমানে যেকয়টি থানা কমিটি রয়েছে সবকয়টি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কমিটি গুলোর বয়স কোনোটির এক থেকে দুইযুগ, আবার কোনোটির ১৪ বছর হয়ে গেছে। এতে কেউ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, কোনোটির প্রস্তাবিত সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দ্বারাই চলছে কমিটির কার্যক্রম। যে কারণে দ্বন্দ্ব সংঘাতের বেড়াজালে প্রাণহীণ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। কমিটি গঠন নিয়ে দলীয় কর্ণধারদের তোড়জোড় না থাকায় থানা কমিটিগুলো ভঙ্গুর কমিটিতে পরিণত হয়েছে বলে নেতাকর্মীরা দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, ২০০৪ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে আমি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। তবে অনেক থানাই আছে ১৯ বছরও হয়েছে। যেগুলো শুধুমাত্র পদাধিকার বলেই রয়েছে। এগুলো হলো সোনারগাঁ, রূপগঞ্জসহ আরো কয়েকটি। কিন্তু নির্বাচনের আগ পর্যন্ত থানা কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেহেতু কেন্দ্র থেকে এমন কোন নির্দেশনা এখনো আসেনি।
সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, এই থানায় ৯৬ সনের শেষ দিকে র্সবশেষ কাউন্সিল হয়। তখন সভাপতি ছিলেন আবুল হাসনাত ও সেক্রেটারী ছিলেন আবদুল হাই। বর্তমানে আমি ভারপ্রাপ্ত হয়ে আছি তবে যদি কমিটি গঠিত হতো আজ হয়তো আমি জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হতাম। আমাদের থানা কমিটির অনেকেই মারা গেছেন। কমিটি না হয়ওয়ায় দল চালানো খুবই কষ্ট হচ্ছে। এই ধরনের ভঙ্গুর কমিটি দিয়ে দল চালানো কষ্টকর। তাই দ্রুত পূর্নাঙ্গ থানা কমিটি হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ.রশিদ বলেন, ২০০৪ সালে আমাদের থানায় কাউন্সিল হয়েছিলো। তবে সময়মত কাউন্সিল হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। নতুন করে থানা কমিটি না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব তৈরী হচ্ছেনা। যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ অঙ্গসংগঠনে পুরনোরাই রয়েছে।
ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি বলেন, ২০০১ সালে কাউন্সিল হয়েছিল। এ বিষয়ে জেলা র্পযায়ে মিটিং হয়েছে দ্বিতীয় মিটিংয়ে হয়তো থানা কমিটি কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা হবে। তবে নির্বাচনের আগে কমিটি গঠন করার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনের পরেই হবে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, কমিটি গঠনের পর আমরা একটি মিটিং করেছি। দ্বিতীয় মিটিংয়ে বিভিন্ন কমিটিসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। থানা কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এটা আমরাও জানি। খুব শিগগিরই আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করতে পারবো। আর তার জন্য দরকার জেলা কমিটির সর্বসম্মতি।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ২৭ মার্চ সাবেক এমপি এসএম আকরামকে আহ্বায়ক ও মফিজুল ইসলামকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে ৬৩ সদস্যবিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থানা কমিটিগুলো শেষবারের মতো গঠন করা হয। এরমধ্যে আড়াইহাজার থানা আওয়ামী লীগের কমিটি বিগত ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তাবিত কমিটির মাধ্যমেই চলছে। এর পাশপাশি আরও একটি থানা কমিটি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাঁধে ভর করে চলছে।