নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : মাত্র এক কিলোমিটার সড়ক মেরামত না করার ফলে গত ৪৭ বছর ধরে ভোগান্তীর শিকার হচ্ছে ৫০ হাজার বাসিন্দা। সড়কটির এক কিলোমিটারই যেনো এঁদো ডোবা। কোথাও খানাখন্দে ভরা। কোথাও বড় গর্ত। আবার কোথাও হাঁটু পানি। এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেছে। গড়ে উঠেছে জনবসতি। সরকার আসে সরকার যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় প্রতিশ্রুতিও দেয়। কিন্তু সড়কটির ভাগ্যের শিকের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বলছি রূপগঞ্জ উপজেলার শিল্পাঞ্চলখ্যাত তারাবো পৌরসভার কর্ণগোপ-গন্ধবপুর সড়টির কথা। সড়কটি না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ যে কোন সময় দানা বেঁধে উঠার সম্ভবনা রয়েছে। সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া না হলে বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধসহ বড় ধরণের আলটিমেটামের ঘোষনা দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সত্তর দশকে সড়কটি লোকজনের পায়ে হেটে চলাচলের উপযোগী ছিলো। পরে ১৯৮৩ সালে তৎকালীন তারাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. শওকত আলী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কর্ণগোপ থেকে গন্ধর্বপুর পর্যন্ত মাটি ভরাট করে সড়কটি নির্মাণ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মতিউর রহমান স্থানীয় এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করেন। ঐসময় এলাকাবাসী কিছুটা আশার আলো দেখলেও পরে তা নিভে যায়।
সড়কটি না হওয়ার পেছনের কারন হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কর্ণগোপসহ আশপাশের এলাকাগুলোয় আনুপাতিক হারে ভোটার সংখ্যা কম ছিলো। ফলে জনপ্রতিনিধিরা এ এলাকাগুলোতে চৌকাঠও মারতো না। যেই এলাকাগুলোর আশপাশে শিল্পকারখানা গড়ে উঠলো, সেই থেকে এলাকায় জনবসতিও গড়ে উঠে। এরপর থেকে এলাকার দিকে নয়, এলাকার জমির দিকে চোখ পড়ে শিল্পকারখানার মালিক ও জনপ্রতিনিধিদের। রাস্তাঘাটের উন্নতি হলে জমির দাম বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা থেকেই অনেকে এ সড়কটি নির্মাণ হউক তা চাচ্ছে না।
স্থানীয়রা আরো বলেন, কর্ণগোপ-গন্ধর্বপুর সড়কটি সংস্কার হলে এ সড়কের আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পরিবর্তন ঘটবে। এলাকার ছেলেমেয়েদের ভাল স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ মিলবে। সড়কটির কারণে এ এলাকাগুলোর ছেলেমেয়েরা ভাল স্কুলে যেতে পারে না। অসুস্থ কিংবা গর্ভবতী নারীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। হাঁট-বাজারে জন্যও কাঁদা-পানি মাড়িয়ে বহু কষ্টে এলাকাবাসীকে যেতে হয় পার্শ্ববর্তী বাজারে। অথচ গ্রামগুলো থেকে মাত্র দশ মিনিটের পথ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। এ মহাসড়কের পাশ ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে আলরাজি স্পিনিং, জিয়া স্টিল মিলস, আল আছোয়াদ স্টিল মিলস , গাজী পাইপ, গাজী ট্যাংক, হাতিম স্টিল, এম ই বি সিট গ্লাশ, মেট্রো স্পিনিং ও ইউ এস বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় অধিকাংশ শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্ণগোপ-গন্ধর্বপুর সড়কের পাশ্ববর্তী কর্ণগোপ, নোয়াগাও, বংসীনগড়, বোচারবাগ, নামা গন্ধর্বপুর, নারসিংগল, গন্ধর্বপুর, মাছুমপুর, বারৈইপাড়া, শান্তিনগড় গ্রামে বসবাস করে আসছে।
কথা হয় কর্ণগোপ গ্রামের রজব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার জানা মতে এত্তো খারাপ রাস্তা কোথাও নাই। কি-যে কষ্ট মানুষের। তেল-নুন-ডাইল আনতেও পেক-পানি ( কাঁদা-পানি ) দিয়া পাশের বাজারে যাইতে অয়।
ব্যবসায়ী রহিম বক্স বলেন, পোলাপানগো ভালা ইস্কুলে দিবার পারি না এই রাস্তার কারণে। বছর ভইরা রাস্তা খারাপ থাহে। মেঘ-বৃষ্টির দিনো কাদা-পানি থাহে। আর শীত সিজনে ধূলার জ্বালায় রাস্তা দিয়া হাটাও যায়না। কতো সরকার যে আইলো আর গেলো ভাই। ওই ভোট আইলে কয় ভোট দিয়েন কতা দিলাম কইরা দিমু। ভোট শেষ আর খবর লয়না। আমাগো কপালডাই খারাপ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, সড়কটি যদি মেরামত না করা হয় তাইলে এলাকাবাসী সকলে মিলে ঢাকা-সিলেট সড়ক বন্ধ কইরা দিমু। প্রয়োজনে আরো কঠোর আন্দোলন করা অইবো।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে শীঘ্রই।