নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নেতৃত্বে ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বন্দরের সর্বত্র বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস-২০১৯কে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্ম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি বন্দর উপজেলায় সারা বাংলাদেশে রেকর্ড সৃষ্টি করার মত করে উদযাপন করা হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সেই লক্ষ্যে ৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ৮টায় বন্দর উপজেলার অডিটরিয়ামে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে উক্ত মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, আমি কোন সংসদ সদস্য হিসেবে নয় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনুরোধ রাখছি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানটি যেন বন্দরের সকল মুক্তিযোদ্ধা, সকল দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সকল জনপ্রতিনিধি, বন্দরের সকল স্তরের মানুষ, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানটি করতে হবে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী এমন ভাবে পালন করতে হবে যাতে সারা বাংলাদেশে বন্দর উপজেলার আয়োজন রেকর্ড সৃষ্টি করে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে ছোট ছোট বাচ্চারাও যেন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারে সেই ভাবে আপনারা প্রস্তুতি নেন। প্রয়োজনে দফায় দফায় প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহনের করতে হবে।
এ সময় সর্ব সম্মতিক্রমে বন্দর উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর আলাদা একটি আয়োজনের কথা হয়। যেখানে স্কুলের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের ঘটনাবলী সম্পর্কে জানবে। এছাড়াও স্কুল শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর সাজে সাজিয়ে র্যালীতে অংশগ্রহন, মুক্তিযোদ্ধার সাজে শিক্ষার্থীদের র্যালীতে অংশ গ্রহন করা হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে চিত্রাঙ্গন সহ বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগীতার আয়োজন এবং প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার বিতরন করা। এছাড়াও উপজেলার দুজন নারী উদ্যোক্তাকে পুরস্কিত করা, উপজেলা প্রশসানের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং সরকার গৃহিত ভবিষ্যত উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনার সচিত্র প্রদর্শনী, লেজার শো, আতশবাজি সহ নানা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম. এ রশিদ বলেন, আমরা বিজয় দিবস ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করবো। দলমত নির্বিশেষে আমরা সবাইকে নিয়ে বসবো। একাধিক আলোচনা সভা করবো। সকলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সম্মিলিতভাবে সবকিছুর আয়োজন করবো। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের হাত ধরে বন্দরে আমাদের সকলের মাঝে যে সেতু বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে আমরা সেই সেতুবন্ধন অটুট রাখবো।
বন্দরের উন্নয়ন সম্পর্কে এমপি সেলিম ওসমান আরো বলেন, আমার আগে আমার দাদা, বাবা এবং বড় ভাই বন্দরে কাজ করেছেন। বন্দরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু তারা অর্থ সংকটের কারনে অনেক কিছুই করতে পারেন না। আমি তাদের স্বপ্নের কথা জেনেছি, বন্দরের মানুষের কাছ থেকেও নাসিম ওসমানের স্বপ্নের কথা শুনেছি। আমি সেই ভাবেই কাজ করেছি। এখন কেউ বলতে পারবেনা নাসিম ওসমানের কোন স্বপ্ন অবাস্তবায়ন রয়েছে। সব গুলোই বাস্তবায়নের পথে। তবে হ্যা এটা সত্য নাসিম ওসমান বন্দরের মানুষের যতটা ভালবাসা পেয়েছে আমি তার কিছুই পাইনি। কারন সে সবার সাথে কথা বলতে পারবো। আমি তার দেখা স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে, ব্যবসায় অনেক বেশি সময় দিয়ে অর্থ উপাজর্ন করে সেই অর্থ আমি বন্দরের উন্নয়নে ব্যয় করেছি। যার ফলে আমি মানুষকে নাসিম ওসমানের মত সময় দিতে পারিনি।
বন্দরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আপনারা নিজেরাও হয়তো জানেন না বন্দরে কি পরিমান উন্নয়ন হবে। ভবিষ্যতে মানুষ নারায়ণগঞ্জ থেকে বন্দরে কাজ করতে আসবে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা আপনাদের জমি গুলো বিক্রি করে দিবেন না। সম্ভব হলে সেখানে আপনারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লট তৈরি করুন। আর যারা রাস্তার দুপাশে দোকানপাট করছেন তাদের কাছে অনুরোধ আপনারা একটু খোঁজ খবর নিয়ে দোকানপাট নিয়ে ব্যবসা করুন। ভবিষ্যতে আপনাদের যেন হাজীগঞ্জ, রেলওয়ের থান কাপড় ব্যবসায়ী, রহমত উল্লাহ ইনস্টিটিউট, বিনোদন সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মত পথে বসতে না হয়। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা রাস্তার পাশে দোকানপাট বসিয়ে ব্যবসা করতে গেলে আগে খোজ খবর নিবেন ভবিষ্যতে উন্নয়নের স্বার্থে সেগুলো ভাঙ্গা হবে কিনা যাতে করে পরবর্তীতে আপনাদের সব হারিয়ে পথে না বসতে হয়।
বন্দর সমরক্ষেত্র মাঠের উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, জায়গাটি রেলওয়ের এবং সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সমরক্ষেত্র। প্রয়োজনে আমি রেল ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় উভয়ের কাছে যাবো। রেলমন্ত্রীর কাছ থেকে জায়গাটি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য চাইবো। পরে সেটি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় সকল উন্নয়ন আমরা করবো। সেটা সরকারী অর্থায়ন হোক আর ব্যক্তিগত ভাবে সকলের সহযোগীতা নিয়ে যেভাবেই হোক সেখানে টয়লেট, অডিটরিয়াম সহ পূর্নাঙ্গ কমপ্লেক্সে রূপ দেওয়া হবে।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকারের সভাপতিত্বে মত বিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রফিকুল ইসলাম, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হান্নান সরকার, গোলাম নবী মুরাদ, সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।