নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি ) : সিদ্ধিরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ সমর্থিত দুটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১৫ থেকে ২০ আহত হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ও ডাক চিৎকারে রাতের নিরবতা ভেঙ্গে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ ঘটনায় পুলিশ জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মজিবুর রহমান মন্ডলসহ ৬জনকে আটক করেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২ আগস্ট রবিবার রাতে নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডের আইলপাড়া সুমিলপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। বর্তমানে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি সিরাজ মন্ডলের সহযোগী কিশোর গ্যাং লিডার শাকিল গ্রুপের সাথে বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির নাতিন জামাই পানি আকতার গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যা ও রাতে শাকিলের সহযোগি আলী ও আবুল পানি আকতার গ্রুপের আসাদুলের সাথে সিগারেট ধরানো নিয়ে তর্কে জড়ায়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা আসাদুলের দোকানে ভাংচুর করে। এ সময় প্রতিবাদ করতে গেলে আসাদুলের ভাই আহসান উল্লাহ, ভাগ্নে রদিয়, সবুজ ও তার মাকে মারধর করে তারা। এ ঘটনায় ভক্তভোগীরা কাউন্সিলর মতিউর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে বিচার প্রার্থী হয়। পরে মতি দুই পক্ষকে ডেকে ঘটনার মিমাংশায় বসে। কিন্তু রাত ১০ টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা এসে শাকিলের পক্ষে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে বিচারের মাঝেই শাকিলের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা মতির কার্যালয়ে ঢুকে ফের হামলা চালায়। শাকিল এলোপাথারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তার সাথে যোগ দেয় তার সহযোগি আলী, আবুল, নুরা, সেন্টু, রুহুল গং। তাদের হামলায় আরিফ, আসাদুল, বেগম, আহসানউল্লাহ, আসিফ, রিদয়, সবুজ, ইবরাহিম, রাসেলসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ সময় পানি আকতার গ্রুপ পাল্টা হামলা চালালে উভয়ে মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। চাপাতি, হকিস্টিক, রামদা, লোহার রড নিয়ে একে উপরের উপর হামলা চালায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। এই সময়ের সংঘর্ষে আইনুল, সোহেল, কুট্টি, আমিরসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। গুরুতর আহতদেরকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের সাধারণ চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল মন্ডলের বড় ভাই মজিবুর রহমান মন্ডলসহ ৬ জনকে আটক করে।
৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল জানান, দুই পক্ষে মধ্যে সংঘর্ষ হলে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বিচার শালিসি করার জন্য উভয় পক্ষকে তার অফিস নিয়ে যায়। ওই অফিসেই তার লোকজন তার উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের উপর হামলার চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
নাসিক প্যানেল মেয়র-২ মতিউর রহমান মতি জানান, সিগারেটে আগুন ধরানোকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরে আমার অফিসে এনে বিচার শালিসি করার সময় সিরাজ মন্ডলের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালায়। পরে আমি পুলিশ ডেকে এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হই।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইশতিয়াক আশফাক রাসেল জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মণ্ডলের ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মজিবুর রহমান মণ্ডলসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।