নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেই করোনা হিরো ও নাসিক ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এবং মানবাধিকারকর্মী পরিচয়দানকারী আটটিএন ফেরদৌস আক্তার রেহানা ওরফে রেহানা মুসকানসহ দুইজনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ। সাঈদা আক্তার ওরফে সায়েদা শিউলির মামলায় ৮ই জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামলার তদন্তকারী অফিসার তরিকুল ইসলাম চার্জশিটটি দাখিল করেছেন।
এর আগে ১৬ই মে ফতুল্লা মডেল থানায় কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবিদার ব্যবসায়ী সাঈদা আক্তার ওরফে সায়েদা শিউলি বাদী হয়ে দুইজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত দুজনই করোনাকালীন দাফন কমিটির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, ৯ জন সাক্ষী ও ৩টি আলামত দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। মামলার ধার্য দিনে চার্জশিটটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে। ওই দিন শুনানি শেষে বিচারের জন্য চার্জশিট ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে প্রেরণ করা হবে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল, বাদী সাঈদা আক্তার ওরফে সায়েদা শিউলি নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়ানের সভাপতি এবং গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও বিজেএমইর সদস্য। বিবাদী খোরশেদ ২০২০ সালের আগস্ট মাসের ২ তারিখে কাঁচপুর এসএস ফিলিং স্টেশনে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি এবং খোরশেদ বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে রাত্রিযাপন করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ২৪ই এপ্রিল শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে খোরশেদ দাবি করেন, ওই নারী তাকে বিয়ে করার জন্য গাড়িতে করে কাজী নিয়ে তার বাসায় এসেছিলেন। তবে এসব কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে তাকে বোঝানো হয়। এর পরও তিনি উচ্চপদস্থ বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এও হুমকি দিয়েছেন যে, পাসপোর্টে খোরশেদের নাম স্বামী হিসেবে ব্যবহার করবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট মানুষকে দেখিয়ে বিভিন্ন রকম দাবি করতে থাকেন তিনি।
ওই নারীর পরিচয় দিতে গিয়ে খোরশেদ বলেন, তার নাম সাইদা আক্তার। এরই মধ্যে তার তিনটি বিয়ে হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এক মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। বিভিন্ন উচ্চপদস্থ লোকের সঙ্গে তার পরিচয় আছে।
তিনি নিজেকে বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে মানুষকে জিম্মি করেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ভালো কথা বলে বিভিন্ন স্ক্রিনশটকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।
শনিবার রাতে সস্ত্রীক নিজের ফেসবুকে লাইভে এসে এমনটিই দাবি করেছেন খোরশেদ ও তার স্ত্রী। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে খোরশেদ কয়েক দফা ডুকরে কেঁদে ওঠেন এবং প্রশাসন ও রাষ্ট্রের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
ফেসবুক লাইভে খোরশেদের পাশেই ছিলেন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। লাইভের শেষের দিকে তিনিও কথা বলেন এবং তার স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন রাষ্ট্রের কাছে।
লাইভে কাউন্সিলর খোরশেদ জানান, আমি করোনার শুরু থেকেই আক্রান্তদের সেবা প্রদান করি ও সম্মুখে থেকে লড়াই করি, দাফন-সৎকার করি। একপর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এ সময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে একপর্যায়ে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়।
তখনই মনে হয় অক্সিজেনের জন্য করোনায় আক্রান্ত যারা সমস্যায় পড়বেন তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেব বিনামূল্যে। এ সময় একটি সংবাদের নিচে এ নারী কমেন্ট করে তিনি অক্সিজেন দিতে চায় এবং আমার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়। তখন থেকেই তিনি আমার সঙ্গে ফেসবুকে কানেকটেড হয় এবং কথা বলা শুরু করে।
একপর্যায়ে আমি বুঝতে পারি তার মতলব ভিন্ন এবং আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং বোঝাই। তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই, তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছে এ রকম কিছু সম্ভব নয়। তাতেও কাজ হবে না বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে ওই নারী আরও ক্ষুব্ধ হয় এবং আমার পেছনে ওঠেপড়ে লাগে।