সাংসদ শামীম ওসমানের উদ্দোগে যানজটহীন নগরী গড়তে উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপন
সাংবাদিক সম্মেলনে অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাব বিনিময়

নারায়ণগঞ্জ বার্তা : নারায়ণগঞ্জ নগরীর অসহনীয় যানজট নিরসনে গত ৩ দিনের টানা লব্ধ জ্ঞান থেকে প্রস্তাবনা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। গত ৩ দিন সাংসদ শামীম ওসমান নিজে বিভিন্ন কলেজের বিএনসিসি ক্যাডেট, রোভার স্কাউট, আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা কর্মীদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে যানজটের কারণ খুঁজে বের করেছেন। গত ৩ দিনের লব্ধ সেই অভিজ্ঞতা বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে নগরীর যানজট নিরসণে তিনি ৬টি অস্থায়ী এবং ৪টি স্থায়ী প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন ট্রাফিক বিভাগ এবং সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ক্রিয়েটিভ আর্কিটেক্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোঃ পারভেজ নগরীর যানজট নিরসণে সড়ক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিভাবে যানজট কমিয়ে আনা যায় তা প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরেন। শামীম ওসমান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এ নগরী আমাদের সবার। এই শহরে সবার সমান অধিকার, তা সে যেই রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন? আমাদের নগরীকে সুন্দর করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা যদি মনে করি যানজট নিরসণের দায়িত্ব শুধু ট্রাফিক বিভাগের তাহলে চলবে না। কারণ ট্রাফিক বিভাগের জনবল সংকট রয়েছে। এজন্য আমাদের সবার সমান ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। নগরীর যানজট নিসরণে সাংসদ শামীম ওসমান যে ৬টি অস্থায়ী এবং ৪টি স্থায়ী সমাধানের কথা তুলে ধরেছেন তা হলো-নগরীর যানজট নিরসণে নাসিক কর্তৃপক্ষ ৫০ জন লোক নিয়োগ দিতে পারেন। এই ৫০ জন ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে থেকে দিনে রাতে কাজ করবে। এর আগে ওই ৫০ জনকে ট্রাফিক বিভাগ প্রশিক্ষণ দেবে। তাদের সিটি করপোরেশন ভাল পোশাকের ব্যবস্থা করবে এবং মাসে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা বেতন দেবে। এই টাকা নগরবাসীর দেওয়া কর থেকে পরিশোধ করা হবে। এতে মাসে ব্যয় হবে মাত্র ৩ লাখ টাকা। কারণ সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যেই গৃহকর ৩ থেকে ৪ হুন বাড়িয়েছে। এই ৫০ জন ২ শিফটে ৮ ঘন্টা করে কাজ করবেন। নগরীরN.GANJ MAP-with Creative Arcitact lmtd যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ শহরের ফুটপাত গুলো হকারদের দখলে থাকা। কারণ ফুটপাত দিয়ে হাটতে না পেরে মানুষ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু ফুটপাতে হকারদের উচ্ছেদ করলে কিছু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। তাছাড়া নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত অনেকে এই ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করে। তাই এখন থেকে আগামী ২ মাসের সময় দিয়ে ফুটপাতে এসব হকারদের পুনর্বাসন করবে সিটি করপোরেশন। এজন্য তিনি শহরের ঈদগাহ মাঠ, বরফকল মাঠ, জিমখানা মাঠের নাম প্রস্তাব করেন। ঐসব মাঠে সপ্তাহে ২ দিন করে মোট ৬ দিন হকাররা বসবে। আর শুক্রবার নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে তারা বসতে পারে। তাদের কাছ থেকে এ জন্য সিটি করপোরেশন ৫০ টাকা করে আদায় করা যেতে পারে। ওই টাকা ব্যয় হবে টাকা আদায়কারী এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে। স্ব স্ব ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্থানীয় মুরুব্বিদের নিয়ে এ কাজ মনিটরিং করবেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করে পথচারীদের নিরাপদ চলঅচল নিশ্চিত করা। রোড ডিভাইডারের আয়তন কমিয়ে এনে রাস্তার প্রশ্বস্ততা বৃদ্ধি করা। সিটি করপোরেশন এলাকায় অবৈধ রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা। শহরের সান্তনা মার্কেট এবং সরকারি মহিলা কলেজের মাঝামাঝি জায়গার একটি স্থায়ী ডিভাইডার নির্মাণ ফতুল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরগামী গণপরিবহন এবং লিঙ্ক রোডে চলাচলকারী গণপরিবহন যাতে মুখোমুখি না হয় সেই ব্যবস্থা করা। এদিকে স্থায়ী সমাধানের মধ্যে রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের উপর দিয়ে ৩২ বার ট্রেন আসা যাওয়া করায় প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। তাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জগামী ট্রেনের মূল স্টেশন নারায়ণগঞ্জ শহরের ভেতর থেকে সরিয়ে চাষাঢ়া স্থায়ী ভাবে করা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রেন শহরের মূল স্টেশনে যেতে পারবে। এতে ট্রেনের কারণে যানজটে আটকে যে সময় অপচয় হয় তা হবে না। শহরের চাষাঢ়া পুলিশ ফাঁড়ি এবং জেলা পরিষদের ডাক বাংলো ভেঙ্গে দিয়ে রাস্তার প্রশ্বস্ত করলে তাতে শহরের প্রবেশ মুখ বড় হবে ও যানজট সৃষ্টি হবে না। এজন্য সিটি করপোরেশনকে ওই ২টি স্থাপনা সরিয়ে নিতে বিকল্প জমির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শহরের মধ্যখানে থাকা বাস টার্মিনাল শহরের বাইরে স্থানান্তর করা। এজন্য শহরের ভেতরে যাতায়াতের জন্য সিটি করপোরেশন সিটি বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করবে। সেক্ষেত্রে পুরো শহরে একই ভাড়ায় মানুষ যাতায়াত করবে। শহরের ২ নম্বর রেলগেট থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত রেললাইনের পাশ ঘেঁষে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা। এতে করে মূল সড়কের উপর চাপ কমে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ বাদল, সহ সভাপতি জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত আলম সানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, নগরীর যানজট নিরসনে এসব প্রস্তাব সিটি করপোরেশনের মেয়রকে দেওয়া হবে। আমরা আশা করবো মেয়র তা মেনে নেবেন। সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, আগামী ২ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যানজট নিরসণে এসব প্রস্তবনার উপর কাজ শুরু করবেন। তা না হলে আগামী ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে যানজট নিরসণ কল্পে আয়োজিত বৈঠকে আমরা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত