নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর কেটেছে নারায়ণগঞ্জবাসীর। অবশেষে সপ্ন পূরণ হয়েছে। আজ খুলে দেয়া হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান নামকরণে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর থেকেই উচ্ছ্বসিত নদীর দুই পারের বাসিন্দারা। উদ্বোধনের পরই সেতুটির উপর সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। ১ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের নামে। সেতুটি চালু হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার মানুষ নদী পারাপারের ভোগান্তি ছাড়াই পায়ে হেটেও চলাচল করতে পারবে।
এদিকে চলমান কাজে দীর্ঘ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধন উপলক্ষে বন্দর উপজেলায় সেতুর পূর্ব প্রান্তে এক বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা,জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, ব়্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা, নৌপুলিশের নারায়ণগঞ্জ জোনের পুলিশ সুপার মীনা মাহমুদ, সেতুর প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।
প্রসঙ্গত, সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের নভেম্বরে সদর উপজেলার সৈয়দপুর থেকে বন্দরের মদনগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সওজ। প্রায় ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও পরামর্শক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করতে প্রায় ছয় বছর সময় চলে যায়। ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘসূত্রতায় সেতুটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সৌদি সরকার ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণসহায়তা দিয়েছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড সেতুটি নির্মাণ করে।
উল্লেখ্য, ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে বন্দরের মদনগঞ্জে সমাবেশ করে দ্রুত সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। ওইসময় সদর ও বন্দর আসনের সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের হাত ধরেই সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হয়। এ নিয়ে সংসদ ভবনে জোড়ালো দাবী রেখে বক্তব্য দিয়েছিলেন তৎকালীন সংসদ নাসিম ওসমান। আর নানা প্রতিকূলতার পর সেতু প্রকল্পটি একনেকে ২০১০ সালের নভেম্বরে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৪ সালে ওই সংসদের মৃত্যুবরণে শোকে জড়িয়ে পড়ে সদর ও বন্দরসহ গোটা নারায়ণগঞ্জবাসী। এ সেতুটি তারপর থেকে সপ্নে রূপান্তরিত হতে থাকে। যা বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর আবারো নানা সংকটের কারণে সেতুটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এরই মধ্যে সকল চড়াই উতরাই শেষে উদ্বোধন হয়েছে শীতলক্ষা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি।