সংঘর্ষে তেল চোর বদল হলেও অব্যাহত চুরি ॥ শেল্টারে রয়েছে ক্ষমতাসীনদলের প্রভাবশালীরা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (ফতুল্লা প্রতিনিধি) : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তেল চুরির মহোৎসব চলছে জ্বালানি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দীর্ঘদীন ধরে স্থাণীয় প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা চলে আসলেও রহস্যজনক নীরবতায় উৎসাহ পাচ্ছে তেল চোর সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যরা। তেল সেক্টরের আধিপত্য নিয়ন্ত্রন নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষ, গুলি বিনিময়ের ঘটনাসহ অস্ত্রধারী একাধিক সন্ত্রাসীকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিগত সময়ে গ্রেফতার করলেও থেমে নেই চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা। ফতুল্লার যমুনা ও মেঘনা ডিপোর চোরাই তেল সেক্টর নিয়ন্ত্রন নিয়ে একাধিকবার চোরাই তেল সিন্ডিকেটের সাথে সংঘর্ষের পর তেল চোরদের পরিবর্তন ঘটলেও বন্ধ হয়নি চোরাই তেলের ব্যবসা। বর্তমান ক্ষমতাসীনদলের প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের ছত্র ছায়ায় স্থাণীয় তেল চোর চক্র চোরাই তেলের এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। অপরদিকে গত কয়েকদিন ধরে ফতুল্লার যমুনা ও মেঘনা ডিপোর চোরাই তেলের আধিপত্য নিয়ন্ত্রন নিতে অপর একটি ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার বাহিনী যমুনা ডিপোর পিছনে বুড়ীগঙ্গা নদীর পাশে মহড়া প্রদান অব্যাহত রেখেছে। আর চোরাইতেলের আধিপত্য নিয়ন্ত্রন নিতে ক্ষমতাসীনদলের দুই পক্ষের এমন মহড়ায় আতংক বিরাজ করছে আশে পাশে বসবাসরত সাধারন মানুষের। তাই তেল সেক্টর নিয়ন্ত্রন নেওয়াকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগেই চোরাই তেল ব্যবসার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি উঠেছে।

সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি তেলের প্রথম ধাপ থেকেই শুরু হয় চুরি। নানা প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকার তেল লোপাট হচ্ছে। জ্বালানি তেল সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিমাণে কম দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। ডিপো থেকে তেল নিয়ে ফিলিং স্টেশনে যাওয়ার পথেও তেল লোপাটের ঘটনা ঘটছে। এলাকায় চোরাই তেল বিকিকিনির জমজমাট সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। জল পথে পরিবহণকালে জাহাজের গোপন খুপরির মাধ্যমেও তেল লোপাটের ঘটনা ঘটে। ঘাটে ঘাটে নানাভাবে তেল নেয়ার ঘটনা ঘটলেও তা ঠেকানোর কার্যত কোন উদ্যোগ নেই কারও। এ ছাড়া তেল চুরির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। আর এই তেল চুরির ব্যাপারে যে সকল ব্যক্তিরা জড়িত রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী সাবেক সাংসদ সারাহ্ বেগম কবরীর ক্যাডার পাভেল, মেজর বাবু, রানা, বায়োজিদ, চুষনী শাহীন, ইলু, হেলু, দেলু, মনির, রকমত উল্লাহ ভান্ডারী,ইবু, আফসু, রনি মিলনগন।

সূত্রে আরো জানা যায়, ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় যমুনা এবং মেঘনা নামক দুটি তেল ডিপোর অবস্থান। এ ডিপো থেকে তেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। বর্তমানে বাজারে তেলের চাহিদাও ব্যাপক। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এ তেল বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এ ডিপোর তেল নদী পথে আনা হয়। জাহাজ যোগে তেল সরবরাহ করার ফলে ডিপোর পাশেই বুড়িগঙ্গা নদীতে জাহাজ নোঙর করা হয়ে থাকে। আর এই জ্বালানি তেল পরিবহণের প্রথম ধাপেই হয় এই তেল চুরি। মাদার ভ্যাসেল থেকে তেল খালাস করে লাইটারেজ জাহাজ গুপ্তাখালস্থ প্রধান ডিপোর জেটিতে এসে নোঙ্গর করে। এখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তিনটি বিপণন অয়েল ট্যাংকে তেল সরবরাহ করা হয়। সরবরাহ দেয়ার সময় নানা গোঁজামিলে বেশ কিছু তেল রেখে দেয়া হয়। এই তেল পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে অন্যত্র বিক্রি করা হয়। ডিপোর ট্যাংক থেকে বাজারে সরবরাহ করার সময় ঘটে বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে পুকুর চুরির মতো। কোটি কোটি টাকার তেল নানা প্রক্রিয়ায় এখানে গায়েব করা হয়। হিসেবে গোঁজামিল দেওয়ার পাশাপাশি সরবরাহের সময়ে পরিমাণে কম দেয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে নদী পথে বেশিরভাগ তেল সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পনির কাছ থেকে নেয়া ভাড়া করা জাহাজে তেলগুলো দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হয়ে থাকে। নদীপথে তেল নিয়ে যাওয়ার সময় নদীর পানি মিশিয়ে তেলের লোপাটকৃত পরিমাণ ঠিকঠাক করে দেয়া হয়। এই তেল ডিপোতে গিয়ে সরবরাহ দেয়াকালে আবারো জাহাজের চোরাগুপ্তা খুপরিতে লুকিয়ে রাখা হয়। বিভিন্ন ডিপো থেকে বাউজারের মাধ্যমে বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে তেল সরবরাহ দেয়া হয়। প্রতি বাউজারে নয় হাজার লিটার তেল বোঝাই করা হয়। এই নয় হাজার লিটার তেলের মধ্যে একশ লিটার তেল কম দেয়া হয়। ডিপোগুলোর গুপ্তখাল থেকে তেল নিয়ে বেরনোর সময় অল্পক্ষণের মধ্যেই বাউজার থেকে তেল চুরির ঘটনা ঘটে। প্রতিটি বাউজার থেকেই এভাবে কমবেশী তেল চুরির ঘটনা ঘটে। ডিপোর আশেপাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন চোরাই তেলের দোকানে বাউজার থেকে প্রকাশ্যে তেল লোপাট হচ্ছে। আর এভাবেই বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকার তেল লোপাটের ঘটনা ঘটে আসলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না এই তেল চোরদের বিরুদ্ধে। ফতুল্লায় যমুনা এবং মেঘনা অয়েল কোম্পনির সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে যোগায়োগ করা হলে তারা জানান, বিভিন্ন এবং বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ঢালাওভাবে তেল চুরির কোন সুযোগ নেই কারোর। তাপমাত্রার হেরফেরের কারণে জ্বালানি তেল পরিমাপের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামাল হোসেন ফতুল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিকদের জানান, চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশের অব্যাহত অভিযানে চোরাই তেল ব্যবসায়ীরা গাঁ দিয়েছে। এছাড়া চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকা অনুযারী তেলচোরদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও ওসি জানান।

add-content

আরও খবর

পঠিত