নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিবেদক ) : মাতুয়াইল কোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য মো. মিল্লাত। লকডাউনের কারণে কোনো আয়-রোজগার না থাকায় স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় প্রথম সন্তান জন্ম দেয়া নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। কোনো কুল-কিনারা না পেয়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতির সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৭, ৮,৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দীনার দারস্থ হন।
এদিকে কাউন্সিলর দিনা একটি মামলার কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক অবস্থায় দিন পার করছেন। শেষে দিনার সার্বিক সহযোগিতায় রোববার (২১ জুন) দিবাগত রাত পৌনে ১০টায় ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন সেই নারী। করোনার শুরু থেকে জীবানুনাশক ছিটানো ও অসহায় দরিদ্রদের ঘরে ঘরে ত্রাণ সহায়তা পৌছে দেয়া থেকে শুরু করে এই নিয়ে করোনাকালীন ৫ জন গর্ভবতী নারীর ডেলিভারির সমস্ত খরচ ও দায়িত্ব পালন করলেন এই সাহসী নারী জনপ্রতিনিধি।
কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবজাতকের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন- (আলহামদুলিল্লাহ। মানবতার চেয়ে বড় কোনো প্রাপ্তি এই পৃথিবীতে নেই। ফেরারী জিবনে থেকেও আরও এক অসহায় গর্ভবতী নারী কে ডেলিভারী তে সহোযোগীতা করলাম।ইতি মধ্যেই নারায়নগঞ্জ এর সবাই জানেন আমার উপর হামলা, উল্টা আমার নামেই মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ফেরারী করে রাখা হয়েছে ঠিক সেই মুহুর্তে প্রীতি আপা(সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী) ফোন করে জানালেন এক অসহায় গর্ভবতী বোন প্রসব ব্যাথায় ছটফট করছে কিন্তু লকডাউনে এবং করোনার কারনে তার স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়ায় এখন হাতে কোন টাকা নাই। আমি শুনে সাথে সাথে সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি আপাকে বলি আপনি এক্ষুনি গর্ভবতী বোনটিকে আনার ব্যবস্থা করেন আমি হাসপাতালে আমার মহিলা স্বেচ্ছাসেবক টিম পাঠাচ্ছি এবং রোগির ডেলিভারির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রিস্ক যেনো না নেয়। যত টাকা লাগে মা ও বাচ্চাকে বাঁচাতে হবে। আল্লাহ পাক যেনো তাদেরকে সুস্থ রাখে। সব বিল আমার নামে লিখিয়ে রাখবেন। আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখে তাহলে এই টাকা আমি পরিশোধ করব। আপনি শুধু আমার হয়ে সমস্ত কিছু দেখেন আপা।
তখন প্রীতি আপা আর দেরি না করে সব কাজ ফেলে বিকেলেই ডা. তাইফুর ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে দৌড়ে চলে যায় তার ক্লিনিকে সোফিয়া জেনারেল হাসপাতালে। মোবাইলে রিপন ভাই, বাংলাদেশ জনদল(বিজেডি) এর মহাসচিব সেলিম আহমেদ ভাইকেও ডেকে আনেন, পাশাপাশি ওদিক থেকে আমার করোনাকালীন মহিলা টিমের দু’জন সদস্য এসে প্রীতি আপাকে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করতে লাগলো।এদিকে ডা. তাইফুর ভাই কোনো ধরনের চিন্তা না করে রোগির সেবায় লেগে গেলেন। বাচ্চা বড় হওয়াতে নরম্যাল ডেলিভারি রিস্ক হয়ে যাবে ভেবে প্রীতি আপাকে ডাকলেন আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুমে। প্রীতি আপা আমাকে আবার ফোনে জানালেন কি করবে। আমি সরাসরি বলে দিলাম রিস্ক নেওয়া যাবেনা, ডাঃ তাইফুর ভাই এই মুহুর্তে যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই করুন। তখন প্রীতি আপা আর ডা. তাইফুর ভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন সিজার অপারেশনের। সবশেষে রাত পৌনে ১০টার দিকে ফুটফুটে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিল। প্রীতি আপা আমাকে ভিডিও কল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, এই নিন আপা আপনার ৫ম পুত্র সন্তান। বাচ্চাটিকে দেখে মন ভরে গেলো।নিষ্পাপ মুখটির দিকে ভিডিও কলে দেখে যখন জানলাম মা ও বাচ্চাটি সুস্থ আছে, তখন আল্লাহ পাক এর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম। )