নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় মর্মান্তিক ও ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বশেষ পাওয়া পর্যন্ত খবরে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ঘটনাস্থলে ১৩ জন এবং দু’জন মারা যান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। দুর্ঘটনায় একজন চমেক হাসপাতালে ও লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া হাসপাতালে আরো দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মধ্যে এক শিশুও রয়েছে। নিহত ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশ।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার ছেড়ে আসা লবণবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী লেগুনা পরিবহনের (স্থানীয় ভাষায় ছারপোকা) মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য তথা চুনতি বনরেঞ্জ কার্যালয়ের নিকটস্থ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে মর্মান্তিক ও ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
লোহাগাড়া উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক জাহেদুল ইসলাম জানান, ভয়াবহ এই সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে একসঙ্গে ১৩ জনের প্রাণহানি হয়। তার মধ্যে লোহাগাড়ায় কর্মরত সাংবাদিক কাইছার হামিদের দুই ভাইও রয়েছেন। সাংবাদিক জাহেদ আরো জানান, দুর্ঘটনায় নিহতদের সবাই পুরুষ। দুইজন বৃদ্ধও রয়েছেন।
নিহত ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন হলেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের কোরবানিয়া ঘোনার আব্বাস উদ্দিনের দুই ছেলে জসীম উদ্দিন (৩৩) ও তাওরাফ হোসেন বেলাল (১৮), বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীর কালামিয়ার ছেলে মোহাম্মদ বাদশা (৩৮), চকরিয়ার উত্তর হারবাংয়ের মৃত আমির হোছেনের বৃদ্ধ পুত্র আবদুস সালাম (৭০), লোহাগাড়ার চুনতি মীরখিলের আবদুর রশিদের পুত্র সিরাজুল ইসলাম (৪০), বড়হাতিয়ার কুমিরাঘোনার আবদুল মাবুদের পুত্র মোহাম্মদ রুবেল (২০), লোহারদিঘীর জাফর আহমদের পুত্র জহির উদ্দিন (২৮), উত্তর কলাউজানের আবুল হোছনের পুত্র মোহাম্মদ এনাম (৪৪), অজ্ঞাত আবদুর রশিদ (৫০), লেগুনা চালক (ছারপোকা) চকরিয়ার মৃত ছৈয়দ আহমদের পুত্র ফরহাদ উদ্দিন (১৮) ও হেলপার (সহকারী) খুটাখালী গর্জনীয়া পাহাড় এলাকার নূর মোহাম্মদের পুত্র মোহাম্মদ সুমন (১৫)।
এদিকে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে প্রেরণ করা তিনজনের মধ্যে আরো দুইজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দোহাজারী হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মো. ইয়াছির আরাফাত। তারা হলেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের নবী হোছাইন (৪০) ও সাইফুল ইসলাম (৩০)। আহত অপরজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারও অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে যাত্রীবোঝাই করে চকরিয়া যাচ্ছিল লেগুনা পরিবহনের গাড়িটি। ওই গাড়িতে যাত্রী ছিল চালক-হেলপারসহ অন্তত ১৮ জন। যাত্রীবোঝাই লেগুনা গাড়িটি মহাসড়কের চুনতি জাঙ্গালিয়া ঢালার কাছে পৌঁছতেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের মধ্য পড়ে যায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা লবণবোঝাই ট্রাকের (ঢাকা মেট্টো-ট-২২-৩৯৪৮) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ১২ যাত্রী।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ জানান, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পর গুরুতর আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তার মধ্যে একজন পথেই মারা যান। বাকি তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে প্রেরণ করা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে ১২ জন এবং অপর তিনজন হাসপাতালে নেওয়ার পথেসহ সর্বমোট ১৫ জন মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন লোহাগাড়া থানার ওসি জাকির হোসাইন মাহমুদ। তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর পরই থানা, হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় জনতার সহায়তায় হতাহতদের উদ্ধার করা হয়। এরপর আহতদের প্রেরণ করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মো. ইয়াছির আরাফাত জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়কের বাঁকের কারণে। দুর্ঘটনার পর পরই মহাসড়কের দুই পাশে আহত যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। পরে দুর্ঘটনায় পতিত গাড়ির ভেতর থেকে হতাহতদের একে একে বের করে আনা হয়। এরপর ক্রেন দিয়ে গাড়ি দুটি মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে প্রায় এক ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. ইয়াছির আরাফাত আরো জানান, কক্সবাজার ছেড়ে আসা লবণবোঝাই ট্রাকের চালক দুর্ঘটনার পর পরই পালিয়ে যায়। জব্দ করা হয় ট্রাক এবং যাত্রীবাহী লেগুনা পরিবহনের গাড়িটিকে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।