নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জে এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সূচি নির্ধারণ করা হলেও বিদ্যুৎ থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ জেলায় শুরুতেই লোডশেডিং সিডিউলের এমন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে যা এখন চরম দুভোর্গের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকা ভিত্তিক ১ ঘন্টা করে লোডশেডিং হওয়ার কথা বললেও ব্যাতিক্রম ঘটছে। কোনো কোনো এলাকায় একাধিকবার বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে। আবার অনেক এলাকায় ২ ঘন্টা সময় বিদ্যুতের দেখা মিলছে না। তাহলে কেনই বা লোডশেডিংয়ের সিডিউল দিয়ে বিব্রত করা হয়েছে এমনটাই প্রশ্ন এখন সাধারণ গ্রাহকের !
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১লা আগস্ট) নগরীতে ভোর ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫ বার পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে। যেখানে লোডশেডিং সূচি বলে কিছু ছিল না। যখন খুশি তখন বিদ্যুৎ গেছে। একাধিকবার লোডশেডিংয়ের কারণে কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ ছিল না। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে শিডিউল। ব্যাহত হচ্ছে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গরমে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারেনি।
শহরের আল্লামা ইকবাল রোডের এক বাসিন্দা জানান, ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ৩ বার গিয়েছে। এরপর দুপুরে টানা ২ ঘন্টা লোডশেডিং হয়। এরপর বিকালে আবারো বিদ্যুতের দেখা নাই। এভাবে একাধিকবার বিদ্যুৎ না থাকায় বাসায় বৃদ্ধ অসুস্থ রোগীর মারাত্মক সমস্যা দেখে দিয়েছে। গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে শিশু সন্তান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খানপুর এলাকার এক গৃহিনী জানিয়েছেন, আমাদের এখন ৩ ধরণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি, গরম আর বিদ্যুৎ। গরম তো সব সময় আছেই। আর দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে ঘরে টেকাও দায়।
লোডশেডিংয়ের কারণে নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরীসহ ছোট-বড় কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন কারখানাগুলোতে কর্ম ঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের। শিল্প মালিকরা বলছেন, বিদ্যুৎ সংকটের দিনের অধিকাংশ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্রমেই লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময় মতো পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রপ্তানি অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক সময় বিদ্যুতের অতিরিক্ত লোডিশডিংয়ের কারণে জেনারেটের দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম দিয়ে পুষানো যায় না।
এদিকে কোন কোন গ্রাহক অভিযোগ তুলছেন, শিল্প কারখানায় বিদ্যুতের লোডশেডিং কমিয়ে আবাসিক এলাকায় ইচ্ছাকৃত লোডশেডিং বিপর্যয় করানো হচ্ছে। কারণ কিছু ভিআইপি এলাকাতে তারা বিশেষ সুবিধা দিয়ে অনত্রে লোডশেডিং দিয়ে ব্যালেন্স করে থাকে।
অপরদিকে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কোন কোন গ্রাহক। বিভিন্ন এলাকায় পিক আওয়ারে বিশেষত রাতে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।
শিডিউল বিপর্যয় হওয়ার কথা স্বীকার করে ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ পূর্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, সবসময় তো শিডিউল ঠিক থাকে না। তবে অনেক সময় আমরা ১ ঘন্টার কথা থাকলেও আধা ঘন্টা করা হচ্ছে। সেটা কন্ট্রোল রুম থেকেই আমাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়। কারণ ১ ঘন্টার প্রয়োজন না হলে সেখানে এর কমেই দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে তো সিডিউল হয়তো মানা হয় না। আর লোডশেডিং বেশী হওয়ার ক্ষেত্রে আমার যতটুকু জানা হয়তো কোন জরুরী কাজ চলছে, এজন্য হয়তো বন্ধ করতে পারে। তবে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি এলাকায় ১ ঘন্টা দেয়া আছে তার বেশী লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে না।
ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ পশ্চিম এর সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মসিদুল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সমস্যা তো হওয়ার কথা নয়। আজকে কিছু প্রেশার ছিল। তবে এ জন্য তো শিল্প কারখানায় লোডশেডিং হতে পারে। আবাসিক এলাকায় তো দেয়া হয়নি। অনেক সময় সেন্ট্রালের নির্দেশ থাকে তখন তো করতেও হয়।