নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : শহরে রিক্সা ভাড়া বৃদ্ধি লাগামহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যাত্রীদের নিকট থেকে খেয়াল-খুশিমত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মধ্যবিত্তের জন্য একমাত্র বাহন হিসেবে পরিচিত এটি। কিন্তু সহজ চলাচলের মাধ্যম রিক্সা আজ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী এক স্কুল শিক্ষিকা তাহিরা কান্তা বলেন, গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে রিক্সার ভাড়া জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। অথচ মধ্যবিত্তের আয়ের পথ কিন্তু সেইভাবে বাড়েনি। বেড়েছে কিন্তু তা গাণিতিক হারে। বেতন বাড়ার সাথে সাথে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, বাড়ি ভাড়া যে হারে বেড়েছে, এরপর সন্তান-সন্তাতিদের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাতায়াতের জন্য রিক্সা ভাড়া বহন করা সত্যিই আজ দুরুহ ব্যাপার।
এদিকে রিক্সা নিয়ে শহরবাসীর নানা অভিযোগও জানা যায়। শহরে নিয়ন্ত্রনহীনভাবে রিক্সার প্রবেশে প্রতিনিয়ত যানজটে কেড়ে নিচ্ছে ব্যস্ততম মূল্যবান সময়ের কয়েক ঘন্টা। অহরহ ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। ভাড়া নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় রিক্সা চালকের সাথে যাত্রীদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। একপর্যায়ে লাঞ্ছিত হচ্ছে যাত্রীসাধারণ অথবা রক্তাক্ত জখম হচ্ছে উভয়ই।
অপরদিকে রিক্সাচালক শাহজাহান বলেন, ঈদের সময় যাত্রীদের বলে-কয়ে একটু বেশী ভাড়া নেই, এখনো অতিরিক্ত ভাড়া যাত্রীরা দেয়, তাই আমরা নেই। আমরা গরীব মানুষ। রিক্সা চালাইয়া খাই। সংসারে মানুষ বেশি, তাই বেশি ভাড়া না লইলে পুষায় না। জিনিসপত্রের দামও বেশী কি করমু?
নারায়ণগঞ্জ কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিদিনই আমার আল্লামা ইকবাল রোড এলাকার বাসা থেকে রিক্সায় করে কলেজে যেতে হয়। এখান থেকে কলেজে যেতে ভাড়া ১৫টাকা। কিন্তু দিতে হয় তার পরিবর্তে ২০-২৫ টাকা। আবার কখনো সকালের ব্যস্ত সময়ে রিক্সা চালকেরা ৩০টাকাও দাবি করে থাকে।
ভুক্তভোগী এক মহিলা যাত্রী হালিমা জানায়, মাঝে মাঝে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। তখন বাধ্য হয়েই আত্ম সম্মান বাচাঁতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলে যাই। কিছুদিন আগেই ২নং রেল গেইট থেকে চাষাঢ়া যাওয়ার জন্য একটি রিক্সা চালককে ১৫ টাকা ভাড়া মিটিয়ে নেই। এরআগে ২০ টাকার কমে যাবেই না বলে আমাকে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে আরেকটি রিক্সায় উঠে পড়তেই ওভারটেকিং করে পথ আটকিয়ে বলে আমি যামুতো আসেন। আমারে আগে জিগাইসেন না। পরে বাধ্য হয়ে উঠলেও গন্তব্য স্থানে নামার পরে সে আবারো ২০ টাকা ভাড়াই দেয়ার জন্য গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে লাগে। এমন আচরণ করে যেন তারা রিক্সা চালক না কোনও চাদাঁবাজ, ডাকাত কিংবা নব্য সন্ত্রাস।
তবে শত অভিযোগ থাকলেও অবশ্য একথা স্বীকার করতেই হয়, রিক্সা চালানোর মতো এক অমানুষিক পেশা সত্যিই অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু অনেক মানুষের রুটি রোজগারের ব্যবস্থাও এই বাহনের দ্বারাই আসছে। রিক্সা চলাচল এক ধীর গতির যানবাহন হলেও রিক্সায় কোন বায়ু দূষণ হয় না এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে না। এদিক দিয়ে শহরে রিক্সার সংখ্যা বাড়লে পরিবেশের ক্ষতি অত্যন্ত হয় না। বরঞ্চ ইউরোপের অনেক শহরেই আজ রিক্সার মতো বাহনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে।
মূলত রিক্সা ভাড়া এবং এর চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশনের কোন নিয়মনীতি নেই। শহরে কতো রিক্সা চলছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষের কাছেও। কারণ কিছু রিক্সার লাইসেন্স হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের আবার অনেকাংশ রিক্সার লাইসেন্স পৌরসভা থাকাকালীনই নেয়া হয়েছে। এরসাথে বাড়তি ঝামেলায় এখন যুক্ত হয়েছে ব্যাটারী চালিত রিক্সা। আর সর্বশেষ সিটি করপোরেশন থেকে জানা যায় প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক সম্ভাব্য রিক্সার লাইসেন্সের পরিসংখ্যান। রিক্সা গুলো গ্যারেজ এবং সমবায় সমিতির নিবন্ধন কার্ড ব্যবহার করেও চালাচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে অবৈধ রিক্সার ছড়াছড়ি। যা কখনো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অভিযানে আটকসহ জরিমানাও হয়। তবে প্রায় এক যুগেরও আগে পৌরসভা থাকাকালীন রিক্সা ভাড়ার একটি র্চাট হলেও তা কখনই আর র্কাযকর রূপ নেয়নি। আর বর্তমানে সিটি করপোরেশন কর্তৃক ভাড়া নির্ধারণের কোন বালাই এখন আর চোখে পড়ে না।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহতেশামূল হক বলেন, ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে পূর্বেই একটি কমিটি করাছিলো। ভাড়াও নির্ধারণ করা হয়েছিলো তবে তা কেউই মানেনি। এখন চালক তো মানেই না, আর পাবলিক যারা উঠে তারাই বেশী দেয়। তবে বিষয়টি পর্যবেক্ষনে আছে দ্রুত একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই রিক্সার সাইজ নিয়ে একটি আলোচনা পক্রিয়াধীন রয়েছে। সে সাইজ মেইনটেন না করলে লাইসেন্স দেয়া হবে না।