নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : র্দীঘ হচ্ছে রেল লাইন ঘেসে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনার দখল রাজত্ব। বাড়ছে ট্রেনে কেটে পড়ে থাকা লাশের সংখ্যা। কিন্তু বাড়ছেনা সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা। রেল সড়ক জুড়েই সাজানো সারি সারি পসড়া। রেল লাইনের দুই ধারই জমে উঠেছে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে ছাউনি দিয়ে পণ্য বিক্রির প্রতিযোগীতা। এ নিয়ে নানা ক্ষোভ, নানা প্রশ্ন থাকলেও এর কোনো সুরাহ হয়নি।
এক যুগে কি পরিমান মানুষের নারায়ণগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে, তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৫ মে পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট বছরে এই রেললাইনে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৪৪৬ জন। ট্রেনে কাটা পড়া ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যাওয়াকেই এসব মৃত্যু কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তাদের মতে, শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, রেললাইনের দুপাশের অবৈধ দখলের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে।
সর্বশেষ শনিবার বিকেলে নগরীর ফকিরটোলা মসজিদের সামনে ট্রেনে কাটা পড়ে মঞ্জুর হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর থেকে সব মহলেই চলছে তীব্র সমালোচনা। ওঠেছে প্রশ্ন এবং প্রায় সময় এমন দুর্ঘটনা ঘটার নেপথ্য কারণ।
ট্রেনে দূর্ঘটনা হলেই সাধারণ মানুষ এক বাক্যেই এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর জন্য রেলওয়ে কৃর্তপক্ষকেই দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, এই স্থানে রেল লাইনের দুইপাশ দখল করে দোকান-পাট গড়ে ওঠায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ জন্য এখানকার দোকানী থেকে শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই দায়ী। কারণ তারা কোন সচেতনামূলক ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনে এগিয়ে আসে না। বছরে দুই একটা উচ্ছেদ ছাড়া পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম লক্ষ করা যায়না। ফলে দিন দিন অবেধ দখলে যাচ্ছে রেললাইনের দুই পাশ। আর পথচারীরা বাধ্য হয়েই হাটাঁচলা করছে রেললাইন ধরেই। পরে ট্রেন চলে আসলে অনত্রে চলে যাওয়ার পথও খোঁজে পায়না পথচারীরা। অত:পর চোখের সামনেই ঢলে পড়ে মৃত্যুকোলে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রেললাইনে সড়কপথের মতো ধীরে ধীরে পা ফেলে হাঁটা যায় না। একটি ¯ি¬পয়ার থেকে আরেকটির দূরত্ব আট ইঞ্চির মতো। তাই স্পিয়ারের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হয়। ¯ি¬পয়ার ধরে হাঁটার সময় বেশির ভাগ সময়ই মানুষ অন্যমনস্ক হয়ে যায়। এছাড়া মালামাল কিনতে আসা লোকজন কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকার কারণে ট্রেনের আগমন টের পায় না। এমনকি হুইসেলও কাজে দেয় না। এর কারণে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২নং রেলগেট থেকে ১নং রেলগেট এলাকায় রেললাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বাজার। সকাল থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কাচা মালামাল সহ নানা রকম পন্যের বিকিকিনি। আবার কেউ কেউ পণ্যের পসরা নিয়ে রেললাইনের ওপর উঠেও মালামাল বিক্রি করে থাকে। শুধু নারায়ণগঞ্জ ২নং রেলগেট থেকে ১নং রেলগেটই নয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ১৭ কিলোমিটার রেলপথের গুপীবাগ, গেন্ডারিয়া, ঘুন্টিঘর, জুরাইন, ঢাকা ওয়াসা, রসুলপুর, বউবাজার, পাগলা বাজার রেললাইন, নন্দলালপুর রেলগেট, আলীগঞ্জ, ফতুল্লা, ইসদাইর, ২নং রেলগেট, ১নং রেলগেট এই ১৪ স্থানে রেল লাইনের কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাঁচামাল ও মাছ থেকে শুরু করে নিত্য পণ্য বিক্রি করা হয় এ দোকান গুলোতে।
এবিষয়ে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ট্রেন স্টেশনের মাস্টার গোলাম মোস্তফা জানান, ট্রেন লাইনের কাজ চলছে। এছাড়া লাইনের উপর দিয়ে ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন ও মানুষ হলে। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে মাটি নরম হয়ে রেললাইন বসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ট্রেন ধীর গতিতেই চলাতে হয়।
অপরদিকে এই দখলদারদের ব্যাপারে বছরের পর বছর ধরে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও অদৃশ্য হাতের ইশারায় এসব উচ্ছেদ হচ্ছে না। এতে করে জনমনে নানা ক্ষোভ রয়েছে। তাই শিঘ্রই রেল কর্তৃপক্ষের এই উদাসিনতা ত্যাগ করে এর প্রতিকারে কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। এছাড়াও প্রশাসনের কঠোরতা না থাকার কারণে এসব উচ্ছেদ করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে নগরবাসী দাবি করেন।