নারায়ণঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া এলাকার চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি ও রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বারকে (৫২) ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ২০ নভেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলম এ রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন।
রূপগঞ্জ থানায় করা র্যাবের তিনটি পৃথক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিন করে মোট ২১ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত শেষে বিচারক ৬ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন। জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে বজলুর রহমানকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করে পুলিশ।
গ্রেফতার বজলুর রহমান চনপাড়ার মৃত নাদের বক্সের ছেলে। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান।
গত ১৯ নভেম্বর শনিবার দুপুরে র্যাব-১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, মাদক, জাল টাকা ও অস্ত্রসহ তাকে ধরা হয়। চনপাড়া এলাকার শীর্ষ ৫ থেকে ৬টি মাদক কারবারির প্রধান সমন্বয়ক ও গডফাদার ছিলেন বজলু।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বজলু চনপাড়া এলাকায় হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, মলমপার্টি এবং যৌন পল্লী পরিচালনা করে আসছিলেন।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ জানান, শুক্রবার র্যাব-১ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া বস্তি) এলাকায় অভিযান চালিয়ে বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, একটি মোবাইল ফোন, ভারতীয় ২৫ হাজার জাল রুপি, বাংলাদেশি ৭৫ হাজার জাল টাকা এবং মাদক বিক্রির নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার বজলুর রহমান ওরফে বজলু একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তি এলাকার মাদক ব্যবসার অন্যতম মূলহোতা ও নিয়ন্ত্রক। বজলু দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বেশ কয়েকজন সহযোগী কাজ করে বলেও জানান তিনি।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ আরও বলেন, বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অপরাধে এখন পর্যন্ত ২৩টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। তিনি চনপাড়া বস্তি এলাকাসহ আশপাশের এলাকার মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা তুলতেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রটি প্রকৃতপক্ষে চনপাড়া বস্তি নামে অধিক পরিচিত, যেখানে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষ এই বস্তিতে বসবাস করেন, যাদের অধিকাংশই দিনমজুর। বিশাল ও অত্যন্ত ঘিঞ্জি এবং ঘনবসতিপূর্ণ এই চনপাড়া বস্তিটি ৯টি এলাকায় বিভক্ত। এই এলাকার শীর্ষ ৫ থেকে ৬টি মাদক কারবারির প্রধান সমন্বয়ক ও গডফাদার ছিলেন বজলু। বস্তি এলাকার মাদকের প্রায় ২০০টি স্পট থেকে কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বজলু এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।
তিনি স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে বজলু ভাই নামে পরিচিত। বিভিন্ন সোর্স তার ছত্রছায়ায় এলাকার ছেলেদের টাকা দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম যেমন- হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লি পরিচালনা করেন। কেউ চাঁদা না দিলে তার কপালে নেমে আসতো নির্যাতনের ভয়াবহতা। এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক-দেড় বছরে নিহত হয়েছেন ছয় জন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেফতারে র্যাব চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালালে বজলুর রহমানের নির্দেশে অপরাধীরা র্যাবের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা আসামী ছিনিয়ে নেয়ারও চেষ্টা চালায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বজলুর রহমান এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন।