নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : রাত পোহালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ১১ মার্চ সোমবার কাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলবে এ ভোট গ্রহণ। স্বাধীনতার পর ডাকসুর এটি অষ্টম নির্বাচন। ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। গত ৯ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা শেষ সময়ের প্রচারণা সেরেছেন। বহুল প্রত্যাশিত এ নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। হলগুলোতে সাজ সাজ রব। ব্যানার- পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস। চারদিকে উৎসবের আমেজ।
অন্যদিকে হল প্রশাসনও ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট কাজে। হলগুলোতে চলছে বুথ তৈরির কাজ। গতকাল কয়েকটি হলে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত স্থানে তৈরি করা হচ্ছে নির্বাচনী বুথ। তবে এতো উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে কি না? ভোট দিতে পারবতো? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এদিকে নির্বাচনে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকায় অভ্যন্তরীণ কারচুপির গন্ধ পাচ্ছেন অনেক প্রার্থী। যদিও প্রতিটি হলের আবাসিক শিক্ষকরা পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়াও গণমাধ্যমের ওপর অতিরঞ্জিত কড়াকড়িও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে- ডাকসুতেও কি হুদা কমিশনের মডেল হতে যাচ্ছে কি না? নাকি অন্য কোন নতুন মডেল? জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক গতরাতে মানবজমিনকে বলেন, ‘নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট না রাখা নিঃসন্দেহে একটি কারচুপির লক্ষণ। যদি তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূরণ করে কেন্দ্রে নিয়ে যায় তাহলে সেটি কে দেখবে।
আবার নির্বাচনে সরাসরি সম্প্রচারসহ গণমাধ্যমের উপরও ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে শঙ্কিত করছে। আমরা বলে দিতে চাই যদি কোনো ধরনের কারচুপির চেষ্টা করা হয়, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কঠোরভাবে অতীতের মতো প্রতিহত করবে। সে সময় কিছু ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে অবাধ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধ পরিকর তারা। জানা গেছে, ডাকসু ও হল সংসদে মোট ভোটার ৪২ হাজার ৯২৩ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি ও হল সংসদে ১৩টি পদের জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সংসদে ২২৯ জন এবং হল সংসদে ৫০৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়াও নির্বাচনে ছাত্রদল, বামজোট, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীসহ ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো প্যানেল দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড দেখিয়ে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও আইডি কার্ড নবায়ন না করে কেউ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না বলে শিক্ষার্থীদের আগে জানানো হয়েছিল। যদিও এমন সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসেছে প্রশাসন।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই ভোট দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। তবে এক্ষেত্রে তাকে হলের শিক্ষার্থী হিসেবে একটি ডকুমেন্ট দেখাতে হবে। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, ভোটারদের আবসিক হলের আইডি কার্ড নবায়ন করা কোনো বিষয় না। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারাই ভোট দিতে পারবে। তবে সে যে ওই হলের ছাত্র তার একটা প্রমাণ সঙ্গে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে পে-ইন স্লিপ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখাই উচিত।’ এদিকে ১৮টি হলে ৪২ হাজার ৯২৩ শিক্ষার্থীর ভোটগ্রহণের জন্য ৫১১টি বুথ তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৫টি, ড. মু. শহীদুল্লাহ হলে ২০টি, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৫টি, অমর একুশে হলে ২০টি, জগন্নাথ হলে ২৫টি, পল্লী কবি জসীমউদ্্দীন হলে ২০টি, মাস্টার’দা সূর্যসেন হলে ৩৫টি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৩০টি, রোকেয়া হলে ৫০টি, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৫টি, শামসুন্নাহার হলে ৩৫টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২০টি, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ১৯টি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২২টি, স্যার এএফ রহমান হলে ১৬টি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৪টি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ২০টি ও বিজয় একাত্তর হলে ৪০টি পোলিং বুথ তৈরি করতে কাজ করছে প্রশাসন। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাস ও হলে হলে প্রার্থীরা গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রচারণাও জমেছে বেশ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এবং আবাসিক হলগুলোতে চলেছে বিরামহীন প্রচারণা।
থাকছে না পোলিং এজেন্ট: নির্বাচনী আচরণবিধির ১১ এর (খ) ধারায় আছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবেন। তবে নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট থাকছেন না বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হলের শিক্ষকরা পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ব্যাপারে জহুরুল হক হলের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ভোটকেন্দ্রের বুথে পোলিং এজেন্ট রাখার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট হলের শিক্ষকরা পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
স্বাধীকার স্বতন্ত্র পরিষদের ইশতেহার ঘোষণা : এদিকে গতকাল দুপুরে ইশতেহার ঘোষণা করেছে -স্বাধীকার স্বতন্ত্র পরিষদ-। পরিষদ মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এএমআর আসিফুর রহমান লিখিত বক্তব্যে ইশতেহার তুলে ধরেন। ইশতেহারে হল ব্যবস্থাপনা, গণরুম, গেস্টরুম, শিক্ষক নিয়োগ, সিট সংকট, খাবার ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, প্রকাশনা, খেলাধুলা, ছাত্র সংগঠন, পরিবহনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। ১৬ দফা ইশতেহারে রয়েছে- সমাধান-চিন্তা, কথা বলা ও কাজের স্বাধীনতা, সকল ক্যান্টিনে খাবারের কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ, বাধ্যতামূলক ত্রৈমাসিক নিরীক্ষণ; অনলাইনে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সকল কার্যক্রম; স্থায়ী নিয়োগের আগে শিক্ষার্থীদের দ্বারা দুই বছর মূল্যায়ন; উন্নত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ; মেয়েদের হলে সার্বক্ষণিক ডাক্তার নিশ্চিতকরণ ও ডিসপেন্সারি স্থাপন; সবগুলো ছাত্রী হল রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা রাখা; প্রকাশনা সংস্থার নিয়মিত মনিটরিং; তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি; শিক্ষার্থী অনুপাতে হল নির্মাণ; বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য হলের মাঠ ভাড়া বন্ধ; পুলিশ ফাঁড়ি উচ্ছেদ করে অ্যাকাডেমিক ভবন/হল নির্মাণ; শিক্ষার্থী অনুপাতে হল নির্মাণ; উপরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মানোন্নয়ন; বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ সরকার নয়, স্বায়ত্তশাসন পুনরুদ্ধার; আন্দোলনে ব্যানারবাজি নয়, সুস্থ ধারার রাজনীতির বিকাশ, ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই চটকদার বিভিন্ন ইশতেহার দিচ্ছে উল্লেখ করেন আসিফ বলেন, অন্যদের ইশতেহার দেখে মনে হচ্ছে, ১১ই মার্চ নির্বাচন হলে ১২ই মার্চই ২৮ বছর ধরে চলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনিয়ম বন্ধ হয়ে যাবে। বিষয়টি তা নয়। লেখালেখিতে জড়িত থাকার ফলে আমার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও সমস্যার গোড়ায় পৌঁছা সম্ভব হয়েছে। তাই এসব সমস্যার মূলোৎপাটনে কাজ করব, কথা দিচ্ছি শিক্ষার্থীদের।
ধাওয়া খেয়ে পালালো ছাত্র সমাজ : এদিকে ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ধাওয়া খেয়েছে এরশাদের জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসের শ্যাডো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছাত্র সমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক নিষিদ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে ২০-২৫ জন নিয়ে শ্যাডো থেকে মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিল জাতীয় ছাত্র সমাজ। এ সময় তারা এরশাদের নামে স্লোগান দেয়। এ সময় মধুর ক্যান্টিনে থাকা ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে ছাত্র সমাজের নেতাকর্মীরা দৌঁড়ে পালায়। পরে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি শাজাহান আলী সাজু, ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বক্তব্য রাখেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র সমাজের থেকে জিএস প্রার্থী মামুন ফকির বলেন, আমার প্রশ্ন তারা কেন হামলা করবে। আমরা কি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী না। আমরা ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টরসহ সবার সঙ্গে কথা বলেই নির্বাচন করছি। তারা বলছেন কোনো সমস্যা নেই। অথচ বামরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমি মনে করি এরা বাম নামে দেশের কলঙ্ক। তারা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। তিনি বলেন, ৯০ সালে আমাদের ওপর একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল ঠিক। কিন্তু আমার প্রশ্ন আমরা কেন আমাদের পূর্ব-পুরুষদের দায় নেবো। আমরাতো নতুন প্রজন্মই। এ বিষয়টি এখন বিবেচনা করার সময় হয়েছে।