মাথা থেতলে শ্বাস রোধ করে পাঁচ খুন: ঘটনার সম্পৃক্ততা স্বীকার ভাগ্নে মাহফুজের

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ ২ নং বাবুরাইল এলাকায় একই পরিবারের র্নিমম পাচঁ খুনের সম্পৃক্ততা স্বীকার করলেন ভাগ্নে মাহফুজ। ২১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ আদলতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুজ্জামান শরীফের আদলতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ৫ খুনের ঘটনার তথ্য জানায় মাহফুজ। পরে ৫খুনের রহস্য জানাতে  পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন  করেন।

জবানবন্দিতে ঘাতক মাহফুজ খুনের বিবরণ দিয়ে জানায়, ১৫ জানুয়ারি সন্ধায়  বাসায় ডুকে লামিয়ার খাটের নীচে লুকিয়ে থাকে মাহফুজ। ধারণা ছিল ঐ রাতে লামিয়া একাই বাসায় ঘুমাবে। স্বামী শরীফুল রাতে বাসায় না থাকার  সুযোগে সে লামিয়ার সাথে অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়বে। ঘাতক মাহফুজ তার যৌন লালসা মেটাতে ব্যর্থ হয়। কারণ ঐ রাতে লামিয়ার সাথে ঘুমায় জা তাসলিমা এবং তার মেয়ে সুমাইয়া।

ভোর রাতে প্রাকৃতিক ডাকে জেগে উঠে একই বাসায় থাকা তাসলিমার ভাই মোরশেদুল। খাটের নিচে থাকা  মাহফুজ এসময় কোন বস্তুর  সাথে আওয়াজ করায় মোরশেদুল বুঝতে পারে ঘরের ভেতরে কেউ লুকিয়ে আছে। জানার চেষ্টা করলে সে  খাটের নিচে মাহফুজের সন্ধান পায়। এরই মধ্যে ঘাতক মাহফুজ  নিজেকে বাঁচাতে  হাতের কাছে পাওয়া শিল দিয়ে মোরশেদুলকে মাথায় আঘাত করলে সে লুটিয়ে পড়ে এবং মৃত্যু হয়। পরে মোরশেদুলের লাশ টেনে অন্য রুমে নিয়ে যায় মাহফুজ।  এর পর ঘুমন্ত তাসলিমাকে শিল(পুতা) দিয়ে মাথায় আঘাত করে ঘাতক মাহফুজ। এই সময় ঘুম থেকে জেগে যায় লামিয়া। তাকে একই কায়দায় শিল(পুতা) দিয়ে মাথায় আঘাত করে ঘাতক মাহফুজ।

প্রাণে বাঁচতে প্রথমে ছোটাছোটি করে পরে শিল(পুতা) দিয়ে মাহফুজকে পাল্টা আঘাতে চেষ্টা করে লামিয়া কিন্তু শিল(পুতা) গিয়ে ঘুমন্ত শিশু সুমাইয়ার মাথায় পড়ে মৃত্যু হয় সুমাইয়ার। এরই মধ্যে মাথায় প্রচন্ড রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয় লামিয়াসহ অন্যান্যদের। এছাড়া শিশুর শান্ত ঘটনা দেখে ফেলায় তাকে দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। লামিয়া সাথে অনৈতিক সম্পর্কে বাঁধা প্রাপ্ত  হয়েই ৫ খুনের ঘটনা ঘটায় ভাগ্নে মাহফুজ। শিল (পুতা) দিয়ে থেতলে দেয় মাথা, এরপর শ্বাস রোধ করে একের পর এক হত্যাজজ্ঞ চালায়। হত্যার পর নিবিঘ্নে ঘরে তালা লাগিয়ে বের হয়ে যায় ঘাতক বাগ্নে মাহফুজ।

জবানবন্দীর সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এস আই আবুল খায়ের জানান, আদালতে মাহফুজ নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করেছেন। কীভাবে সে ৫ জনকে হত্যা করেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) মহিবুল ইসলাম, (অপরাধ) মোখলেছুর রহমান, (ডিএসবি) মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মন্ডল, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেক, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবি এম আবুল খায়ের, ৫ খুনে নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।11111

এর আগে ডিবিতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজ স্বীকার করেছিল, তার মামী লামিয়ার সঙ্গে মাহফুজের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। তবে বিষয়টি পরিবারের লোকজন মেনে নেয়নি। উল্টো তাসলিমা বিষয়টি তার স্বামী শফিকুল ইসলামকে জানালে পারিবারিক শালিস হয়। এরপর থেকে বাসায় মাহফুজকে না আসার কথা বলে পরিবারের লোকজন। এসব নিয়েই মূলত মাহফুজ ক্ষুব্ধ হয়ে একাই এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটায়। ঘরে থাকা ধাতব বস্তু ও শিল পাটা দিয়ে ৫ জনকে আঘাত করে হত্যা করে মাহফুজ।

অন্যদিকে ১৯ জানুয়ারি গ্রেপ্তার ১২ লাখ টাকা ঋণ প্রদানকারী ঢাকার কলাবাগান এলাকার নাজমা আক্তারকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।

মেঝেতে এখনও লেগে আছে রক্তের দাগ। আসবাবপত্র পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। নেই কোনো কোলাহল বা হইহুল্লোড়। ঘরের দরজায় বড় একটি তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে। বাসার আশেপাশে নেই কোনো মানুষের আনাগোনাও।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মহানগরের ২নং বাবুরাইল এলাকার ইসমাইল হোসেনের বাড়ির নিচ তলার ওই বাসায়টি গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। যেখানে গত শনিবার রাতে একই পরিবারের পাঁচ জনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুই নারী ও এক পুরুষের সঙ্গে দুই শিশুকেও হত্যা করে ঘাতক। নিহত দুই শিশুর নাম মো. শান্ত (১০) ও তার ছোট বোন সুমাইয়া (৫)। শান্ত ১৮ নং বাবুরাইল বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং সুমাইয়া ১৯নং বাবুরাইল বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত