নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নওগাঁ প্রতিনিধি ) : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর কোল ঘেষে এক সময়ে নামে ডাকে প্রসিদ্ধ ধান ও চালের ঐতিহ্যবাহী হাট মহিষবাথান হাট। সে সময় নদী পথে নৌকা ছিল একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। সুদূর পোরশা, নিয়মতপুর, পতœীতলা, মহাদেবপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে গরুর গাড়ী নিয়ে ধান, চাল, কাঁচা তরিতরকারীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যাদি এ হাটে বেচাকেনার জন্য নিয়ে আসত। এছাড়া ৩ টি ইউনিয়নের প্রায় ১৩-১৪ শত ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে এই মহিষবাথান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্ডেন ও উচ্চ বিদ্যালয়ে। আশে-পাশে ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন উচ্চ বিদ্যালয় নেই। তাই নদীর পূর্বপাড়ে এনায়েতপুর ইউনিয়নের কালনা, শেরপুর, রোদল, শ্রীরামপুর, ইন্দ্রাই, মেরা সহ ৭-৮ টি গ্রামের ছেলে মেয়েরা মহিষবাথান স্কুলে লেখাপড়া করে।
মহিষবাথান ঘাট প্রায় ২৫-৩০ টি গ্রামের লোকজনের চলাচলের একমাত্র পথ। এ কয়েকটি গ্রামে প্রায় ৪০-৪৫ হাজার লোক বসবাস করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন কোন উন্নয়ন না হওয়ায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এলাকাবাসী। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই আধুনিকতার যুগে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও মহাদেবপুর আত্রাই নদী পারাপারের জন্য মহিষবাথান নামক স্থানে নদীর উপর একটি ব্রীজের অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো কিংবা নৌকা দিয়ে পারাপার হয় এনায়েতপুর ইউনিয়নের একাংশ কালনা, শেরপুর, রোদল, শ্রীরামপুর, ইন্দ্রাই, মেরা, খাজুর ইউনিয়নের একাংশ বনগ্রাম, রামচন্দ্রপুর, হেরেমনগর, দেবীপুর, জয়পুর, ডাঙ্গাপাড়া, রনাইল ও হাতুড় ইউনিয়নের মহিষবাথান, গোফানগর, শাবইল, মখইর, বিশ্বনাথপুর, হাতুর, দূর্গাপুর, সোহাসপুর, বিলশিকারী সহ আরও বেশ কিছু ইউনিয়নের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার হাজার হাজার জনগণ। বর্ষাকালে নৌকায় নদী পারাপার হলেও পানি কমার সাথে সাথে প্রায় ২শ মিটার বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় মহিষবাথান ঘাট।
মহাদেবপুর উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উত্তরে অবহেলিত হাতুর ইউনিয়ন। উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজনের তাগিদে যেতে হয়। তার উপর আবার বাধ সাধে আত্রাই নদী। নাব্যতা সংকটের কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় মহিষবাথান ঘাটে নদী পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকোর উপরই ভরসা করতে হয়। উপজেলার সাথে যানবাহন চলাচলের উপযোগী সরাসরি কোন পথ না থাকায় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য কৃষি পন্যসামগ্রী সহজ ভাবে বাজারজাত করতে না পারায় নায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখানে একটি ব্রীজ নির্মানের জন্য এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি থাকলেও এলাকাবাসির ভাগ্য উন্নয়ন হয় নাই। উপজেলা সদর দূরে হওয়ায় মহিষবাথানে অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, মাদ্রাসা, ব্যাংক, বীমা, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারন জনগন এ ঘাট দিয়ে প্রায় প্রতিদিন ৮-১০ হাজার মানুষ চলাচল করে।
অপর দিকে এলাকার কিছু স্বার্থনেশী মহলকে খুশি করতে অপরিকল্পিতভাবে কালনা ঘাটে প্রায় ৩শ মিটার গার্ডার ব্রীজ নির্মান করার চেষ্টা চলছে। নদীর পশ্চিম পাড় সোহাসপুর, দূর্গাপুর ও নদীর পূর্ব পাড় কালনা-শেরপুরে নেই কোন স্কুল, কলেজ, রাস্তা-ঘাট, ব্যাংক, বীমা, নেই কোন হাট বাজার বা সরকারী খাদ্য গুদাম। এমনকি নেই কোন মোবাইলের ফ্লাক্সি লোডের দোকান। কালনা-শেরপুর ও সোহাসপুর-দূর্গাপুর গ্রামের ছেলে-মেয়েরা লেখা পড়া করে এই মহিষবাথান স্কুলে।
তথ্য সংগ্রহকালে মহিষবাথান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার জানান, আমি দীর্ঘ দিন এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, সোনালী ব্যাংক, সরকারী খাদ্য গুদাম ও ১২-১৪ টি এনজিও রয়েছে। নদীর ওপারে এনায়েতপুর ইউনিয়নের প্রায় ২-৩ শ শিক্ষার্থী রয়েছে। আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যার সময় অনেক কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি ব্রীজের অভাবে নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকোতে পারাপার হয় ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে স্কুলে ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করে। তাই এখানে একটি ব্রীজ নির্মান করা হলে এই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকাবাসি উপকৃত হবে।
শেরপুর গ্রামে সাবেক মেম্বার নূর হোসেন, খোরশেদ আলম, ইয়াচিন, গোফানগর গ্রামের আব্দুল মতিন, আবুল কালাম, মেম্বার আব্দুল কাদের, হাতুড় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ও বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, জেলা ও উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য মহিষবাথান হাটে আত্রাই নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মান করা হলে আমার হাতুর ইউনিয়ন বাসিসহ এনায়েতপুর ইউনিয়ন ও খাজুর ইউনিয়নের বসবাসরত সর্বসাধারণের জীবন যাত্রার মান পাল্টে যাবে। তাই এলাকাবাসির দীর্ঘদিনের দাবি হলেও ব্রীজ নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার জনগণ অনেক কষ্টে আছে। সরকারী খাদ্য গুদাম, সোনালী ব্যাংক, বীমা, এনজিও, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী তথা সর্বময় এলাকার জনগণের স্বার্থে মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী, নওগাঁ জেলা তথা এলাকার কৃতিসন্তান হিসেবে জনাব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম এমপিসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।