বড় ভাইয়ের জানাজা দেখে মা আমাকে নির্বাচন করতে বলেন : সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : আমার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর জানাজা দেখে আমার মা আমাকে নারায়ণগঞ্জের মানুষ জন্য নির্বাচন করতে বলেন। আমি তখন বলে ছিলাম আম্মা আপনি কি বলছেন? আপনার একটা ছেলে মাত্র কয়েকদিন আগে মারা গেছে। আমার নিজের শরীরের অবস্থাও খুব বেশি ভাল না। আমার মা তখন আমাকে বলে ছিলেন তুমি দেখো নাই তোমার ভাইয়ের জানাজায় কত হাজার মানুষ হয়ে ছিল। আমি তখন আমার মা কে বলে ছিলাম আম্মা আমি পারবো? মা আমাকে বলে ছিলেন কি আর হবে না হয় মরেই যাবে। তখন তোমার জানাজাতেও তোমার ভাইয়ের মত হাজার হাজার মানুষ হবে। মানুষের জন্য ভাল কাজ করবে তোমার জানাজায় লোক আরো বেশি হবে। মায়ের বলা সেই কথার উত্তর আমি পেয়ে গেছি।

গত ২৬ জুন আপনারা আমাকে যে সংবর্ধনা দিয়েছেন সেখানে দলমত নির্বিশেষে এতো মানুষের সমাগম হয়েছে যা কিনা আমার বড় ভাই নাসিম ওসমানের জানাজার অংশ নেওয়া মানুষের থেকেও বেশি হবে। আমি যখন মঞ্চে বসে চারিদিকে তাকাচ্ছিলাম তখন আমার মায়ের কথা গুলো মনে পড়ছিলো। তখন আমার মনে হয়েছে আমি যেন জীবিত অবস্থায় আমার জানাজায় মানুষের উপস্থিতিটা দেখে যেতে পারলাম। আর ভাবছিলাম হয়তো আমার মা উপর থেকে এটা দেখছেন আর বলছেন তোকে আমি বলে ছিলাম, এখন বিশ্বাস হচ্ছে তো? আরো বেশি ভাল কাজ করবি তাহলে সেই সময় মানুষ আরো বেশি হবে।

মঙ্গলবার ৪ জুলাই রাতে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর উদ্যোগে সংবর্ধনাত্তোর মতবিনিময় সভায় সকলের উদ্দেশ্যে এভাবেই দরদ ভরা কন্ঠে কথা গুলো বলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

তিনি বলেন গত ২৬ জুন আপনারা আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। কিন্তু সংবর্ধিত হওয়ার মত কোন কাজ আমি একা করতে পারতাম না যদি না আপনারা সকলে আমাকে সহযোগীতা না করতেন। মানুষকে দেওয়ার মত আনন্দ দুনিয়াতে আর কিছু নাই। সবাই বলে আমি অনেক কে কিছু দেই। কিন্তু আমি যা দিয়েছি আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি তার থেকে অনেক গুন বেশি। আমার পরিবারের সদস্যরা, আমার সহধর্মিনী, মেয়েরা, এমনকি আমার ১০ বছরের নাতি পর্যন্ত আমাকে উজার করে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জে আদমজী জুট মিল, চিত্তরঞ্জন কটন মিল যেভাবে নাই হয়ে গেছে ঠিক একই ভাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজনীতিটাও যেন নাই হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদের কাজ হচ্ছে জনগনের সেবা করা। টেন্ডারবাজি বা ঝগড়া করা রাজনীতিবিদের কাজ নয়। আমি কোন নেতা না। নেতা হলেন আপনারা সাধারণ জনগন। আমি জনগনের গোলামি করি। আমি জনগনের গোলাম। কারন আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সরকার থেকে সামান্য সম্মানি পেয়ে থাকি জনগনের টাকা থেকে। কিন্তু অন্য জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের জনগনের গোলাম কেন মনে করতে চান না।

তিনি আরো বলেন, আপনারা আমাকে সহযোগীতা করেছেন আমি নাসিম ওসমানের অসমাপ্ত কাজ গুলো সম্পন্ন করতে চেষ্টা করেছি। তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি গুলোর মধ্যে প্রায় সব গুলোই বাস্তবায়ন হতে চলেছে।

বন্দরে বিদ্যমান পানি সংকট সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বন্দরে বেশ কয়েকটি এলাকায় কয়েক মাস ধরে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট চলছে। এমন পবিত্র রমজান মাসেও পানি সংকট ছিল। কাউন্সিলর সুলতানের বক্তব্যে আমি সেই সমস্যার কথা জানতে পেরে আপনাদের সহযোগীতা নিয়ে যতটুকু সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমার মতে ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় চলা উচিত। কিন্তু ওয়াসা কার কথা চলছে তা আমি নিজেও জানি না। বন্দরের সমস্যার ব্যাপারে ওয়াসার কাছে জানতে চাইলাম উনারা বললেন উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে চিঠি লিখেছেন। অথচ আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য আমাকে অবহিত করা হয়নি এমনকি জেলা প্রশাসকের কাছেও অনুলিপি প্রেরন করা হয়নি। তাহলে ওয়াসার উর্ধতন কর্মকর্তারা কারা? সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আমাকে কাজ করতে গেলে সিটি কর্পোরেশনের অনাপত্তির প্রয়োজন হয়। আজকে যদি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র একত্রে কাজ করতো তাহলে এই সমস্যা দ্রুতই সমাধান করা সম্ভব হতো।

নির্বাচন প্রসঙ্গে নিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বলে বেড়াচ্ছে ৫টি আসনেই নৌকা চাই। কিন্তু আমি বলবো আমি আগামীতে নির্বাচন করি বা না করি আগামীতে যেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকা না লাঙ্গল কে আসলো সেটা বড় কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখানে নৌকার মধ্যে লাঙ্গল তুলে দিয়ে ছিলেন। তাই আগামীতে উনি কাকে এখানের দায়িত্ব দিবেন কার উপর আস্থা রাখবেন সেটা সম্পূর্ন উনার উপর নির্ভর করছে। উনি যদি আমার প্রতি আস্থা রেখে আমাকে দায়িত্ব দিতে চান তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললে আমি নিজের জীবন দিতেও এক মুহুর্ত চিন্তা করবো না।

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল এর সভাপতিত্বে উক্ত মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম সোলায়মান, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি মজিবর রহমান, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল।

add-content

আরও খবর

পঠিত