নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : কোপা আমেরিকায় শিরোপা ধরে রাখার মিশনে হোঁচট খেল ব্রাজিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা ফাইনাল জিতে নিল ১-০ গোলের ব্যবধানে। ঘরে তুলল কোপা আমেরিকার শিরোপা। শেষ পর্যন্ত ঘুচল ২৮ বছরের অপেক্ষার। মেসির হাত ধরে প্রথমবারের মতো কোনো শিরোপা জয় করল আর্জেন্টিনা।
মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। পুরো ফুটবল দুনিয়ার চোখ কোপার ফাইনালে। প্রথমার্ধ শেষে হতাশা নিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয়েছে নেইমারদের। আর ১-০ গোলের লিডে স্বস্তি নিয়ে ফিরেছেন মেসিরা।
ম্যাচের ২২ মিনিটে মারাকানাকে স্তব্ধ করে দিয়ে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। ডি পলের লং পাসে বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশিং করেন ডি মারিয়া। গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালে। উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টাইনরা। প্রথমার্ধের ওই গোল আর শোধ করতে পারেনি ব্রাজিল। ফলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় মেসির দল।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে ব্রাজিল। পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন সেলেসাও কোচ তিতে। ফ্রেডকে উঠিয়ে রবার্তো ফিরমিনোকে নামিয়ে আরও আক্রমণাত্মক খেলার আভাস দেয় স্বাগতিকরা।
এই পরিবর্তনে আক্রমণে ধার বাড়ে তাদের। ৫২ মিনিটে জালে বল জড়ান রিচার্লিসন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাতিল হয়ে যায় সে গোল। রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালে হতাশ হতে হয় তাদের। এর ২ মিনিট পর আবারও সুযোগ পেয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের নৈপুণ্যে এ যাত্রায়ও গোল করতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথ। উত্তেজনা স্বাভাবিক। ম্যাচে সেটা চোখেও পড়ল। ৮১ মিনিটে ফাউলকে কেন্দ্র করে হালকা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের ফুটবলাররা। তবে তা সামান্যই। ৮৬ মিনিটে গেবির বুলেট গতির শট আটকে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
ম্যাচের শেষ পর্যন্ত দারুণ সব আক্রমণ শানালেও কোনো দলই গোল আদায় করতে পারেনি। ৮৮ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ মিস করেন মেসি। অতিরিক্ত সময়েও লিড বাড়াতে আক্রমণ চালায় মেসিরা। কিন্তু আসেনি সফলতা। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলেই শিরোপা খরা কাটে আর্জেন্টিনার। জয়োল্লাস করে মাঠ ছাড়ে স্কালোনি শিষ্যরা।
২০১৪ এই মারাকানাতেই মেসির চোখের পানি মিশে গিয়েছিল ঘাসের সঙ্গে। বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটার পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে গিয়েছিলেন, কিন্তু ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। এরপর আরও দুই বার ফাইনালে উঠে মেসিকে হতাশায় মোড়াতে হয়েছিল ।
ক্ষোভে, দু:খে একবার তো অবসরই ঘোষণা করে ফেলেছিলেন। অনেক আন্দোলন, অনুরোধ-উপরোধের পর ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু কোপা আমেরিকার দুটি ফাইনালে হারের পর আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে লম্বা বিরতি নিয়েছিলেন মেসি। অনেকেই ধরে নিয়েছিল, হয়তো আর ফিরবেন না। কিন্তু দীর্ঘ সময় যে আর্জেন্টিনা কোনো শিরোপার নাগাল পাচ্ছিল না, নিজের ক্যারিয়ার এত কিছুতে রাঙানো, তবুও কোথায় যেন ফ্যাকাশে, কোথায় যেন রঙহীন। একটি আন্তর্জাতিক শিরোপাও নেই। অবশেষে মেসি ফিরে আসলেন। খেললেন এবারের কোপা আমেরিকা।
শুধু খেলাই নয়, পুরো টুর্নামেন্টটাই নিজের করে নিলেন। অসাধারণ খেললেন প্রথম ম্যাচ থেকে। পুরো মেসিময় একটি টুর্নামেন্ট দেখলো ফুটবল বিশ্ব। অবশেষে এবারের কোপা আর হতাশ করেনি বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলারকে। মারাকানাও খালি হাতে ফিরিয়ে দিলো না ফুটবলের বরপুত্রকে। দুই হাত ভরে দিলেন।
গোল্ডেন বল জিতলেন, গোল্ডেন বুট জিতলেন। অবশেষে প্রথমবারের মত কোপা আমেরিকার শিরোপাটাও হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ পেলেন লিওনেল মেসি। ২১তম মিনিটে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার দুর্দান্ত এক গোলে নিশ্চিত হলো জয়। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম কোনো শিরোপা হাতে তুলে নিতে পারলেন মেসি।
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিতলেন, একই সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে জিতলেন গোল্ডেন বুট। ৪টি গোল করার পাশাপাশি ৫টি অ্যাসিস্টও করেছেন মেসি। ২০১৪ বিশ্বকাপেও সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মেসি জিতেছিলেন গোল্ডেন বল। কিন্তু সেবার তার মুখে কোনো হাসি ছিল না। ছিল পরাজয়ের গ্লানি।
তবে এবার গোল্ডেন বল এবং গোল্ডেন বুটের পুরস্কার হাতে নেয়ার সময় মেসির মুখে ছিল চওড়া হাসি। এবার যে আর হতাশায় মোড়ানো একটি দিন নয়, বরং সাফল্যে মোড়ানো একটি দিন পেয়ে গেলেন তারা ! ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর দীর্ঘ ২৮টি বছর পার হয়ে গেছে, আর্জেন্টিনার হাতে শিরোপা ওঠেনি।
গত দেড়টি দশক ফুটবল বিশ্ব শাসন কর যাচ্ছেন। ২০০৭ সালেও মেসি খেলেছিলেন কোপা আমেরিকার ফাইনাল। সেবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছিলেন ৩-০ গোলে। এরপর ২০১৪ বিশ্বকাপ, ২০১৫, ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি।
অবশেষে ১৪ বছর পর কোপার ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়ে আর বঞ্চিত থাকতে হয়নি মেসিকে। ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিজয়য়ী দলের অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা হাতে তুলে নিতে পারলেন লিওনেল মেসি।