নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : এখনো রেশ কেটে উঠেনি বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোচিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিতের ঘটনাটি। এ নিয়ে শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় সারাদেশে গনমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিন্দার ঝড় উঠে। যা নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ.কে.এম সেলিম ওসমানের দিকে অভিযোগ উঠানো হয় । তবে সেসময় তিনি অবস্থার অবনতি যেন না ঘটে, উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ শান্ত রাখার জন্যই তিনি উপস্থিত হয়েছেন বলে এমপি সেলিম ওসমান দাবি করেন।
আর সম্প্রতি শহরের হাজীগঞ্জে স্কুল শিক্ষিকা শাহীনুর পারভীন শানুকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি ব্যপক আলোচনায় চলে এসেছে। যে ঘটনায় একজন স্কুল শিক্ষিকাকে তার বাসার ভিতরে অনুপ্রবেশ করে জুতাপেটা সহ লাঞ্ছিত করা হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষিকাকে জুতা পেটা করেন মজিদ খোন্দকার ও তার স্ত্রী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকার বাবা বাদি হয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করলে ওইদিনই পুলিশ আব্দুল মজিদ খোন্দকারকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছিলো জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুল মজিদ খোন্দকারকে। পরে সে জামিনে বের হয়। আর জামিনে বেরিয়ে ১ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এ মামলার পরে দিন দিন ফুসে উঠছে স্থানীয়রা সহ শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল। তারা মনে করেন এর আগেও বন্দরে সাংসদ সেলিম ওসমানের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছিলো শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত এমন অভিযোগ উঠেছিলো। ওই ঘটনার পর লাঞ্ছিত শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। তবে কি জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুল মজিদ খোন্দকার সে পথ অনুসরন করছেন। কিন্তু সাংসদ তো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন যার বিপরীতে মজিদ খোন্দকার একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হয়েও একটি অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়েছেন।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, শিক্ষিকা শানু তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। তবে এ সংক্রান্ত কোন লিখিত ডকুমেন্ট তার কাছে নেই।
তবে এ টাকা পাওয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান শিক্ষিকা শাহীনূর পারভীন শানু। শিক্ষিকার মতে, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তিনি আপস করতে আমাকে চাপ দেয়ার জন্য এ টাকা পাওয়ার ঘটনা সাজিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করার পরে দলীয়ভাবে মজিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তবে শেষ পর্যন্ত তা নেয়নি তারা। সচেতন মহলের মতে, ঘটনার পর ব্যবস্থা না নেয়ায় আরও বেপরোয়া হয়েছে মজিদ খোন্দকার। তাদের মতে, শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিতের পরও কোন অনুশোচনা নেই তার মধ্যে। তাই তিনি টাকা পাবেন দাবি করে মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষিকার কাছে টাকা পাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। তিনিও বলেন, এর আগেও জাতীয় পার্টির এমপি দ্বারা শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। পতিত স্বৈরাচারের দল জাপা তাদের আদর্শগতভাবেই তাদের নেতার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিবেনা। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের এ সাহসী নেতার মতে, ঘৃনা করার মত যত কাজ সব জাপা নেতারাই করে। তিনি আক্ষেপ করে বলে, ৩ দলীয় রূপরেখা বাস্তবায়ন হলে এ পরিস্থিতি ঘটতো না। তিনি আহ্বান করেন, নতুন করে পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার।
এ প্রসঙ্গে জাতিয় পার্টির মহানগর আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সানু বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচীতে ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়টি নিয়ে বসা হয়নি। তবে শিক্ষিকা লাঞ্ছিতের ঘটনায় আমরাও ব্যাথিত। এছাড়া আমাদের দল থেকে এ নিয়ে কোন বিবৃতিও দেয়া হয়নি। আর তিনি একজন আইনজীবী সেক্ষত্রে তিনি আইন ভালো বুঝেন। তারপরেও খুব শিঘ্রই আলোচনা সাপেক্ষে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।