নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জে বিদেশ ফেরতদের নিয়ে আতংকে রয়েছেন এলাকাবাসী। মানছেই না করোনা ভাইরাস সংক্রমনে কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ, করছেন অবাধে চলাফেরা। এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমনে সাধারণ মানুষের ঝুঁকি রয়েছে বলে ভীত রয়েছেন স্থানীয়রা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেছেন একটি সংগঠনের এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জামাল (পুরো নাম ও সংগঠনের নাম, অন্যান্য কিছু গোপনিয় রাখা হল, সংরক্ষিত আছে)। দেশে ফেরার পর থেকে বর্তমানে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও জনসমাগমে চলাফিরা করছেন তিনি। ইতমধ্যে রবিাবর ( ২৯ মার্চ ) বৃহত্তর মাসদাইর এলাকায় পথচারী ও সাধারণ মানুষের মাঝে নিজ হাতে ৩ হাজার মাস্ক ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি। এছাড়াও সোমবার আবারো জনসমাগম করে স্থানীয় নেতাকর্মী ও এনায়েত নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও নারী মেম্বারকে নিয়ে জীবানুনাশক ছিটাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে বিদেশ ফেরত জামালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি গত মাসের (ফেব্রেুয়ারি) ৩ তারিখে কুয়েত থেকে এসেছি। আসার পর বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহন করেছি। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ রোধে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে পথচারী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ৩ হাজার মাস্ক বিতরণ করেছি। আগামীকাল ( সোমবার ) চেয়ারম্যান ও নারী মেম্বার ও স্থানীয় মুরুব্বী ও নেতাদের নিয়ে জীবানুনাশক স্প্রে করবো।
এখনতো এভাবে জনসমাগম করা নিষেধ রয়েছে, পাশাপাশি আপনি বিদেশ থেকে এসেছেন এ নিয়ে অনেকে ভীত ও আতংকিত অনুভব করছে। সেক্ষেত্রে আপনি সাবধানতা অবলম্বন করলে ভালো হয়। প্রতিবেদক এমন পরামর্শ দিলে তিনি বলেন, আরে ভাই কত সভা করলাম। আমি আইসা তো একটা প্রোগ্রাম করেছি সেখানে ফতুল্লা থানার ওসি সাহেবও ছিল।
শুধু তিনিই নন অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের লিচু্বাগ, গলাচিপা, আল্লামা ইকবাল রোড সহ অনেক এলাকাতেই বিদেশ ফেরত রয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় জনসমাগম এড়িয়ে চলতে অনেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ সদস্য সতর্কও করে গেছেন। তবে তা মানতে নারাজ অনেকেই। যাচ্ছেন বাজারে, আড্ডা দিচ্ছেন চায়ের দোকানে! কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করে যাচ্ছেন।
এ ব্যপারে গলাচিপা এলাকায় এক বিদেশ ফেরত যুবকের সাথেও কথা হলে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্তকতার কথাটি স্বিকার করেন। তারপরেও তাকে বাহিরে অবাধে ঘুরাফিরা করতে কেন দেখা যায়? আপনি কি চান বিষয়টি পুলিশকে জানানো হোক। এমন কথার পরে তিনি বলেন, দু:খিত ভাই যেহেতু আপনি সাবধান করেছেন হোম কোয়ারেন্টাইন এর বিষয়টি মানার চেষ্টা করবো। প্রতিবেদককে দিয়েছেন ধন্যবাদও!
বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, দিন দিন করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিতে আমরা সহ পুরো বিশ্ব আতংকে থাকলেও কিছু মানুষের যেন জনসমাগম করা থেকে বিরত রাখাই যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরক্ষিত না রেখে মাস্ক, স্যানেটাইজার সহ বিভিন্ন খাদ্য ও সুরক্ষা সামগ্রী প্রদানে সহযোগীতার নামে অনেকেই জনসাধারণের আরো ক্ষতি সাধনে নেমেছে। করছেন প্রচারণা চালাতে ফটোসেশন! তাই দ্রুত এসব বন্ধে সরকারীভাবে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরী।
এ ব্যপারে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ জানতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন ও সদর উপজেলা ইউএনও নাহিদা বারিক কে কল দিলে সংযোগ স্থাপন হয়নি।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী মুঠোফোনে জানায়, এখনতো এমনিও বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তারপরেও বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে এসেছে তারা নিয়ম মেনে চলবে। আর যারা হোম কোয়ারেন্টাইন দেয়া হয়েছে। তারা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও ওভার ফোনেও আমরা অনেককে সতর্ক করেছি। জেলা পুলিশ কোন অনিয়ম হতে দিবে না।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহম্মেদ জানায়, বিদেশ থেকে যারা আসছে তাদের অধিকাংশই ঝুঁকিতে থাকতে পারে। তাই তাদের অবশ্যই নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর তা না হলে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রিট ও পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারবে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে ১৮২ জনকে। গত চব্বিশ ঘন্টায় কোয়ান্টোইনে সংযুক্ত হয়েছেন ১৮ জন। বাদ পড়েছেন ৫১ জন।সোমবার (৩০ মার্চ) বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন। তিনি আরো জানান, ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে বিদেশ ফেরত লোকের সংখ্যা ৬০০৩ জন। তাদের মধ্যে ৯৫৯ জনের ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ৫৪৮টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে ও ১৪০২ টি মজুদ রয়েছে।
পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ :
সংবাদকর্মীরা কারো শত্রু নয়। তাই প্রতিপক্ষ ভেবে কিছু চাপিয়ে দেয়াটাও নেহাত মুর্খের পরিচয়। আমরা সংবাদকর্মীরা নানাভাবে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না গিয়ে নির্দেশনা মেনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি। তাছাড়া সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোঁয়া সহ হ্যান্ড স্যানেটাইজার ব্যবহার সহ হালকা গরম পানিতে গোসল ও নিজ পরিহিত কাপড় পরিস্কার করতে অবহেলা করছিনা। জীবানুনাশক স্প্রে করে ব্যবহৃত যে কোন গাড়ি চাকা সহ জীবানুমুক্ত রাখা হচ্ছে। এর একটি বিশেষ কারণ সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তোলা। আসুন সতর্ক করি, সচেতন হই। করোনা ভাইরাস সংক্রমনে সরকার ও দেশের অগ্রযাত্রার পথিক হই।
জনস্বার্থে : অনলাইন নিউজ এজেন্সি, স্বাধীনতার পক্ষে মুক্ত চেতনায় এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ আমরা আছি দেশ ও জাতির পাশে।