নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বন্দর প্রতিনিধি ) : বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকার হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনিকে চড় দিয়েছেন এবং তাকে মারধর করেছেন হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয় জামায়াত নেতা হারুন মোল্লা। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রথমে স্বীকার করলেও পরে স্কুল কমিটি ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে ওই প্রধান শিক্ষক তাকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। রবিবার (৫ মে) বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য হারুন মোল্লা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনির কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি তার মেয়ের এস এস সি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। তার উচ্চবাচ্যে অন্যান্য শিক্ষকসহ অনেকে ছুটে আসেন। একপর্যায়ে হারুন মোল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের দিকে তেড়ে যান এবং তাকে চড় মারেন।
তারা আরো জানান, এ ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করে। পরে স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনির মোবাইলে ফোন করলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হারুন মোল্লা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং গায়ে হাত তুলেছেন বলে স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, এটা নিয়ে কমিটির সবাই বসেছি, দেখি কী সমাধান হয়। তিনি তখন বলেন, হারুন মোল্লা আগে থেকেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে তার মেয়ের এস এস সির রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে কথা বলতে এসে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার তুলে আমাকে মারতে উদ্যত হলে তার ছোট ভাই তাকে নিবৃত্ত করেন। এ সময় হারুন মোল্লা টেবিল চাপড়িয়ে উচ্চবাচ্য করেছেন বলেও প্রধান শিক্ষক জানান।
পরে সরজমিনে দুপুরের পর ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিষয়টি নিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বৈঠক বসেছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মইনুল হাসান বাপ্পি, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ এবং প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনি।
এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একা কথা বলতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বাধা দেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক আব্দুল গনিকে ভীত অবস্থায় দেখা গেছে। তিনি তাকে মারধর বা লাঞ্ছনার কথা অস্বীকার করেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মইনুল হাসান জানান, খবর পেয়ে আমি স্কুলে এসেছি এবং বিষয়টি হাতাহাতির ঘটনা ছিল না বলে উভয় পক্ষ জানিয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা এহসান উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিদের জানান, উভয় পক্ষ নিজেদের মধ্যে সমাধানে পৌঁছেছেন। তবে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে থাকলে তা ঠিক হয়নি। তবে ওই অভিযুক্ত সদস্যের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত হারুন মোল্লা স্থানীয় ভাবে জামায়াতের নেতা। তিনি স্কুল কমিটির কোনো সভায় উপস্থিত থাকেন না। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি সত্য হলেও প্রভাবশালীদের চাপে প্রধান শিক্ষক এখন বিষয়টি স্বীকার করছেন না। তারা জানান, এর আগেও গত বছর স্কুল কমিটির এক সদস্য একজন সিনিয়র শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছিল।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি এবং হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করেছি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।