নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন দেশের জনগণের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ছিলো। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে মানুষ মরণপণ লড়াই করেছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শ্রমিকরা অকাতরে জীবন দিয়েছে। সহস্রাধিক মানুষের বীরোচিত আত্মদানের বিনিময়ে দেশে এখন কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উন্মেষ ঘটেছে বৈষম্যবিরোধী চেতনার। মানুষ পেয়েছে মুক্তির স্বাদ।
বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জনজীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে দেশব্যাপী ‘শোষণ বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক জাগরণ যাত্রা’ কর্মসূচির উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন। জেলা সিপিবির উদ্যোগে শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেল ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে তিনি এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।
এসময় জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, শহর কমিটির সভাপতি আ. হাই শরীফ ও জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর নেতা ইকবাল হোসেন সহ অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি আরও বলেন, আওয়ামী শাসনামলে জনগণের ওপর নিষ্ঠুর নিপীড়ন চালানো হয়েছিল। জনগণকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে। এর মধ্য দিয়ে অবাধ লুটপাটের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয়ে উঠেছিল। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত জনতার বিজয়ের পর গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে-দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এর জন্য কালক্ষেপণ না করে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়কে নস্যাৎ করতে পরাজিত স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সাম্প্রদায়িক-সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী বিদেশি শক্তিসহ দেশের ভেতরের বাংলাদেশবিরোধী নানা শক্তি অপতৎপরতা চালাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বিরোধী নানা ঘটনাও ঘটছে। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা, সাম্প্রদায়িক হামলা, নানা অপশক্তির আস্ফালন, পাল্টা দখলদারিত্ব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে সরকারকে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশ-জাতি ও জনগণের সামনে আজ প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য হলো-গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়কে সংহত করা এবং গণ-আকাঙ্খার বাস্তবায়ন ঘটানো। সেজন্য স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভিত্তি ও কাঠামো উপড়ে ফেলতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্খায় শোষণ-বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জনগণের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। লুটপাটতন্ত্র-সাম্প্রদায়িকতা-সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদকে পরাস্ত করে অগ্রসর করতে হবে সমাজতন্ত্র অভিমুখীন সমাজবিপ্লবের সংগ্রামকে। জনগণের প্রকৃত রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বাম-প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে বিকল্প সরকার কায়েম করতে হবে। কল-কারখানা, ক্ষেত-খামার, পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-শহরে কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বাম-প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে তোলা এবং সারাদেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ‘শোষণ-বৈষম্যবিরোধী গণতন্ত্র জাগরণ যাত্রা’ সফল করার আহ্বান জানান তিনি।