নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : বর্তমানে কতিপয় ব্যক্তির কাছে তোষামদি একটা স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। অনেকেই এটাকে আঞ্চলিকভাবে চামচামীও বলে থাকে। এ শহরে এমন কিছু নেতা আছে তারা শুধু ওইসব চামচা নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসে। আর চামচারাও কতিপয় ওইসব নেতাদের সুখ দিতে নিরালশ খেটে খায়। তাদের পরিশ্রমের অন্যতম উদাহরণই হলো জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর সম্বোধন করা। আর পাতি নেতার নামে জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ বলা। কারণ একটাই নেতা খুশি হবে।
আর সেই খুশির কথা ভেবে রাতদিন শ্রম দেয় তারা। খুশি হলেই তো স্বার্থ হাসিলে এগিয়ে যাবে তারা। এসব কর্মী বাহিনীরা মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশেও বেশ সক্রিয় থাকে। আর বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তারা এতটাই সরব। যেখানে নেতাকে নিয়ে একটি গঠনমূলক আলোচনা হলেও যেন নেতাকে ডিঙ্গিয়ে চামচাদের মন্তব্যের হিড়িক শুরু হয়। কে কার আগে মন্তব্য করে নেতাকে খুশি করাতে পারে। কখনো এমনও হয়, সম্মানের দিক বিবেচনায় যেখানে প্রকৃত নেতারা কিছু লিখতে বার বার ভেবে যাচ্ছে। সেখানে চামচা নামক কতিপয় পাতি নেতারা যা ইচ্ছা তা বলে যাচ্ছে। অথচ খোঁজ নিয়ে জানবেন প্রকৃত নেতারা এগুলোর থেকে বহুদূরে! কিন্তু পাতি নেতা নামক লোকরা সবসময়ই পাশে থাকতেই চেষ্টা করে। তাদের চিহ্নিত করাও খুব সহজ। বিশেষ করে চেয়ার এগিয়ে দেয়া। চা টেনে আনা। তবে তাদের টার্গেট থাকে এলাকায় প্রভাব খাটানো। নেতার সাথে ছবি তোলে এলাকায় অমুকের লোক দেখিয়ে দাপট দেখানো। অথবা বিভিন্ন সেক্টর থেকে টুপাইস হাতানো।
এসব কর্মী বাহিনী অনেকেই নেতাদের খুশির জন্য বাড়িতে গিয়েও নানা কাজে সহযোগীতা করে। তাছাড়া ফেসবুকেও সেলফী ছবি দিয়ে ভাই কিংবা বোন নামক নেতা-নেত্রীকে নিয়ে বেশ সুনাম গায়। যেখানে তাদেরকে কেউ কেউ পিতৃতুল্য কিংবা মাতৃতুল্য সম্মাননাও দিয়ে থাকেন। এ তৈল মর্দন কিংবা চামচামি এতটাই নীচে নিয়ে যায় তাদের। যে, কেউ কেউ বাপজান থেকে আব্বা, বাজান, আম্মা বলেও সম্বোধন করেন। তবে সত্যিকার অর্থে এদের অনেকেই অন্তর থেকে সেই সম্মান নিজ মা-বাবাকেও দেয় কিনা তা চামচাগুলোর বাড়িতে খোঁজ নিলেই জানা যায়। কাউকে অভিভাবকের স্থানে রেখে সম্মান দেয়াটা দোষের নয়, তবে তা যদি উদ্দেশ্যমূলক হয়, সেখানেই প্রশ্ন উঠে। প্রকৃতপক্ষে তাদের স্বার্থের জন্যই এই ভন্ড কান্ডে লিপ্ত থাকে চামচা নামক কতিপয় মানবরা।
ইতিহাস ও বাস্তব প্রেক্ষাপট থেকে জানা গেছে, উপমহাদেশে অশোক, চন্দ্রগুপ্ত, সুলতানী, মোঘল আমল কিংবা তার আগ থেকেই চামচামির জয়যাত্রা শুরু। বিশেষ করে সিরাজ-উদদৌলার পতন এবং উপমহাদেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠায় তোষামোদের একটি ভূমিকা ছিল। দেশেও বিভিন্ন সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের চামচামি করে অনেক চামচাই অঢেল ধনসম্পদের মালিক হয়েছে। তাই, দেখা যায়, শাসকের উত্থান-পতন ঘটলেও তোষামোদকারী বা চামচারা টিকে থাকে সগৌরবে।
চামচামির নানা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে এ উপমহাদেশে প্রায় সাড়ে সাত শত বছরের মুসলিম অবসান ঘটে, ব্রিটিশদের হাতে। জাতিগতভাবে মুসলিমদের রক্তে এক দিকে শাসক শ্রেণীর আভিজাত্যবোধ, অপর দিকে ধর্মীয় নৈতিকতার কারণে মুসলিমরা ব্রিটিশদের মনোরঞ্জনে চামচামি করতে পারেনি। চামচামির সুযোগটি সহজেই রপ্ত করতে পেরেছিল বর্ণবাদী হিন্দুরা। তারা ব্রিটিশ রাজ সরকারের চামচামির মাধ্যমে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে ছিল অগ্রগামী। শিক্ষা-দীক্ষা, সরকারি চাকরি, জমিদারিপ্রাপ্তি সব কিছুতেই তারা ছিল এগিয়ে। অপর দিকে, মুসলিমরা রাজ্যক্ষমতা হারিয়ে, বিদেশী শিক্ষা গ্রহণ, সরকারি চাকরি এবং জমিদারি প্রাপ্তিতে একেবারেই পশ্চাৎপদ।
সচেতন মহল বলছেন, এসব কাজে যারাই লিপ্ত রয়েছে তারা আসলে প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে। আর এজন্যই তারা বিপথে যাচ্ছে। সত্যিকারের নেতারাও কখনোই এসব পছন্দ করেন না। তারা চায়, তার পাশে থাকা বিশ্বস্ত লোকটা যেন অবশ্যই ভুল কে ভুল আর সঠিক কাজকে সঠিকই বলুক। এছাড়াও প্রকৃত নেতারা তাদের সম্মানের স্থানটা কখনোই পিতা-মাতার সমতুল্য দিবেন না। বড় ভাই সম্বোধন করলেও ওইসকল অনুসারীদের সেভাবেই শিক্ষা, শাসন করবে যেভাবে প্রকৃত বড় ভাই করে থাকে। কারণ তারা জানে উনাদের সম্মান কতটা। আর যারা এর বিপরীতে আছে, তাদের জন্য সেসকল চামচারা ক্ষনিক সময়ের জন্য সুখ দিবে ঠিকই। তবে অধিকাংশ সময়ই তাদের দ্বারা বিপথগামী হবে। তাই ইতিহাসের মতই চামচারা স্বগৌরবে থাকলেও সল্প সময়ের জন্য।