নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আজ সোমবার। সারাদেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিবসটি পালিত হবে। গাউসুল আযম বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (র.) এর ওফাত দিবস বিশ্বের মুসলমানদের কাছে (ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম) নামে পরিচিত।
(ইয়াজদাহম) ফারসি শব্দ, যার অর্থ এগারো; (ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম) বলতে এগারো এর ফাতিহা শরিফকে বোঝায়। এককথায় রবিউস সানি মাসের ১১ তারিখের ইছালে সওয়াব মিলাদ মাহফিলকে ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম বলে।
তা ফারসি ভাষার প্রভাবে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশসহ আফগানিস্তান, ইরান, বৃহৎ রাশিয়ার মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চল, ইরাক প্রভৃতি স্থানে (ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম) অর্থাৎ এগারো এর ফাতিহা নামে উদ্যাপিত হয়। এই পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ইমামুল আউলিয়া পীরানে পীর গাউসুল আযম দস্তগীর হজরত মুহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানি (র.) এর স্মরণে পালিত হয়।
ওলিকুল শিরোমণি ১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৪৭০ হিজরি সালের ১ রমজান ইরাকের বাগদাদের প্রায় ৪০০ মাইল অদূরে জিলান নগরের সুবিখ্যাত সাইয়্যেদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হজরত সাইয়্যেদ আবু সালেহ মুসা। মাতার নাম উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তার বাবার বংশ হজরত ইমাম হাসান (রা.) এর সঙ্গে এবং মায়ের বংশ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর সঙ্গে মিলিত হয়; এ কারণে তাকে (আল-হাসানি ওয়া আল-হোসাইনি) বলা হয়।
পিতৃকুল-মাতৃকুল উভয় দিক থেকেই হজরত আলী (রা.) এর বংশধর অর্থাৎ মহানবী (সা.) এর বংশধর। ইসলামকে নতুন জীবন দেয়ার জন্য তিনি পরবর্তী সময়ে হজরত মুহিউদ্দিন আবদুল কাদের (র.) নামে পরিচিতি লাভ করেন। জিলান শহরের অধিবাসী বিধায় তার নামের শেষে (জিলানী) উপাধি সংযুক্ত করা হয়েছে।
শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত উন্নত চরিত্রের অধিকারী। কৈশোরের একটি সত্যবাদিতার বাস্তব ঘটনা তার অসাধারণতার প্রমাণ দেয়। একদা তার মা লেখাপড়ার জন্য বিদেশ গমনের সব ব্যবস্থা করে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা গোপনে সংরক্ষণ করে দিয়ে বললেন, বাবা আবদুল কাদের, বিপদ যতই কঠিন হোক না কেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবে। সদা সত্য কথা বলবে, কখনো মিথ্যা কথা বলবে না। তিনি বাগদাদের উদ্দেশে বণিক কাফেলার সঙ্গে পথ চললেন।
একপর্যায়ে বণিক কাফেলা ডাকাত দলের কবলে পড়লে সব মালপত্র লুণ্ঠিত হয়। ডাকাত দল যাত্রীদের সব অর্থকড়ি কেড়ে নিয়ে বালক হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) এর কাছে এসে বলল, এই ছেলে! তোমার কাছে কী আছে? বালক উত্তর দিল, আমার জামার আস্তিনের ভেতর ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা আছে। বালক অত্যন্ত শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে ডাকাতদের বলল, আমার আম্মা আমাকে বিদায়কালে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, বাবা, কখনো মিথ্যা কথা বলবে না, সদা সত্য কথা বলবে। তাই আমি আপনাদের কাছে সত্য কথা বলে দিয়েছি। আমার মাতৃ-আজ্ঞা পালন করেছি।
বালকের মুখে এমন জবাব শুনে ডাকাত-সর্দার দারুণ ভয় পেল। এক অদৃশ্য মহাসত্তার ভয়ে তার অন্তর কেঁপে উঠল। ডাকাত-সর্দার বালকের পায়ে লুটিয়ে পড়ল, অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা চাইল। ডাকাত-সর্দার তার সত্যবাদিতার পরিচয় পেয়ে যাত্রীদের প্রত্যেকের অর্থকড়ি ও মালামাল ফিরিয়ে দেয় এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মুসলমান হয়ে যায়।
আল্লাহর বাণী ও মিষ্টভাষী বক্তৃতা দিয়ে বড় পীর কোটি কোটি মানুষকে ইসলামের পথে ফিরিয়ে আনেন এবং সমকালীন বিশ্বে আউলিয়া কিরামের ওপর সুউচ্চ মর্যাদা লাভ করেন। সারা বিশ্বের মধ্যে তার ভক্ত ও মুরিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে খ্যাতি ছিল। আল্লাহ তাকে সব ওলির চেয়ে অধিক কারামতি দান করেছিলেন। ফলে তিনি আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়াতে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।
ইসলামের চির আলোকময় পথে ডাকার জন্য তিনি অনেক ওয়াজ-নসিহতও করেছেন; যাতে ছিল বিস্ময়কর প্রভাব। তার প্রতিটি কথা মানুষের হৃদয়ে দারুণভাবে গেঁথে যেত, তাদের পরকালের চিন্তায় বিভোর করে তুলত।
সারা জীবন পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে আল্লাহ প্রেমিক মহান সাধক, ওলিকুল শিরোমণি ১১৬৮ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৫৬১ হিজরির ১১ রবিউস সানি ৯১ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।