নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা মেজিস্ট্র্যোট মাহমুদুল হকের নির্দেশনায় দিগুবাবুর বাজারে ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সে লক্ষে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে দোকানগুলোতে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ব্যানারে ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয়কারীর পরিচিতি ও দোকানের অবস্থান জানানো হয়। জানা যায়, মো. সেলিম সালমান এর মেসার্স আব্দুল সালাম (সেলিম) বাণিজ্যালয় হতে ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ পেতে পারেন জনসাধারণ।
দ্বিগুবাবুর বাজারের মফিজ মার্কেটে অবস্থিত ওই পেঁয়াজের আড়ৎ। প্রোপাইটার সেলিমের মোবাইল নম্বর: ০১৭১৫৭৮৩৮৮০। দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ পুরান ১৬০ টাকায়, নতুন ৮৫ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।ব্যানার টাঙানোর কার্যক্রম পরিচালনা করেন নারায়ণগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম।
এসময় আতিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক (অতিরিক্ত সচীব) মো. মাসুদ করিম, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হকের নির্দেশনায় ১১ ডিসেম্বর দ্বিগুবাবুর বাজারে পেঁয়াজের আড়তে অভিযান পরিচালনা করি। তার পরিপ্রেক্ষিতে একই দিন পেঁয়াজ আড়তের ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনায় বসেন জেলা প্রশাসক। সেখানে ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা, কিভাবে ন্যায্য মূল্যে ভোক্তাদের হাতে পেঁয়াজ এনে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আলোচনায় ব্যবসায়ী সেলিম এগিয়ে আসেন এবং যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় করার ইচ্ছে পোষণ করেন। তিনি আমাদের কাছ থেকে সাহায্য চান, যাতে পেঁয়াজ বিক্রয়ের সময় কোন চাপে না পড়েন। তার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাজারে কিছু কিছু জায়গায় উনার আড়তের সন্ধান দিয়ে ব্যানার টাঙিয়েছি। এতে করে ভোক্তারা ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ করার সুযোগ পাবেন।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. সেলিম সালমান বলেন, কয়েকদিন যাবৎ আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় দেশি পেঁয়াজ উৎপাদন অনেকটা কম। এর উপর ভারতের পেঁয়াজ আনা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৩ দিন আগে আমার থেকে কেজি প্রতি ১০০ টাকার পেঁয়াজের রেট চাওয়া হয় ১৯০ টাকা করে। কিন্তু আমি তাতে রাজি হই নাই। কারণ বাজারে ১০০ টাকার পেঁয়াজ ১২০ বা ১৩০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না। যে আগে এক পাল্লা নিত সে এখন আধা কেজি নিচ্ছে, যে আগে বস্তা ভরে পেঁয়াজ নিত সে ২ পাল্লা নিচ্ছে। এতে বিক্রি কমে গেছে, এতে স্টকে থাকা পেঁয়াজ পচে যাবার পরিস্থিতি হয়েছে। ৩-৪ দিন পর এটা অনেক কমে বিক্রি করা লাগবে। তাই লোকশান যাতে অনেকটা কম হয় ও সাধারণ মানুষের উপকার হয় তার জন্যে আমি আগে থেকেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, আমাদের বাজারে ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির কোন পয়েন্ট নেই। টিসিবির পণ্য যেমন চাল, ডাল, চিনির ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করার কোন পয়েন্ট নেই। আমি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে জানিয়েছি। তারা এব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তারা আমাকে আপাতত ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির কথা বলেছেন। সামনে আমি টিসিবির পণ্য- চলা, ডাল, চিনি ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে নতুন পেঁয়াজ উৎপাদন হবার সিজন এসেছে। আবহাওয়া খারাপ হওয়াতে দেশি পেঁয়াজের সাপ্লাই কম আছে। ফরিদপুর, চুয়াডাঙা, কুষ্টিয়া, ঈশ্বরদী এসব অঞ্চলে নতুন পেঁয়াজ উৎপন্ন হবে। দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসলেই ভারতের পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করে দিবে জনগণ।
এদিকে, ব্যানার টাঙানোর কার্যক্রম সমপন্ন করার পর বাজারের বিভিন্ন মুরগির ও মাংসের দোকানে মনিটরিং করেন কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম। এসময় ব্যবসায়ীদের কৃষি বিপণন লাইসেন্স, নীতি-নৈতিকতা মেনে যৌক্তিক মূল্যে মাংস বিক্রি করার নির্দেশনা দেন তিনি।
এসময় আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে মাংসের ও মুরগির বাজার নিয়ে অভিযোগ এসেছে। ওজনে কারসাজি, অন্যান্য বাজারের তুলনায় দ্বিগু বাবুর বাজারে মাংসের দাম বেশি এমন অভিযোগ আমরা পাই। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ীদের কাছে আসি ও তাদেরকে সতর্ক করি।
বাজারে মনিটরিং এর ব্যাপারে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা রেগুলার মনিটরিং করে থাকি। তবে এখন থেকে আরও ভোলোভাবে মনিটরিং করবো। যারা যৌক্তিক মূল্যে পণ্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা বেশি দামে বিক্রি না করেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখবো আমরা। আমাদের বাজারমনিটোরিং অব্যাহত থাকবে।