না.গঞ্জে সুদের টাকা দিতে না পেরে শিশু বিক্রি, ১ বছর পর উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : শর্ত ছিল ৫ হাজার টাকার ঋণের জন্য প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা সুদ গুনতে হবে। ঋণ শোধ না হলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে সেই টাকা। অর্থাৎ মাসিক ৮০ শতাংশ সুদহারে ঋণ নিতে হবে। সময়মতো টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সুদসহ পুরো টাকার জন্য প্রতি মাসে আবার ৮০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। আর সে সুদের জালে আটকা পড়ে নিজ শিশু সন্তাানকে হারিয়েছিলেন শ্রমিক রানী আক্তার ও চৌকিদার হান্নান।

অবশেষে এক বছর পূর্বে সুদের টাকা পরিশোধে নবজাতক শিশুকে বিক্রি করা সেই শিশুকে উদ্ধার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাতে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা এলাকার দক্ষিণ পাশা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক করা হয় শিশুটিকে কিনে নেয়া রানু (৪০) নামক এক নারীকে। আটককৃত রানু বেগম মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিন পাশার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী।

জানা গেছে, ৪ বছর আগে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বাদুরতলা থেকে স্বামী হান্নান চৌকিদারের সঙ্গে ফতুল্লায় এসেছিলেন শ্রমিক রানী আক্তার। আলীগঞ্জ এলাকায় ইট ভাঙার শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। আলীগঞ্জ পিডব্লিউডি কলোনিতে বসবাস শুরু করেন তারা। ঐ কলোনির সুদের মহাজন মো. আজাদের বাড়িতেই ভাড়া থাকেন তাঁরা । অভাবের তাড়না ২ বছর আগে মাত্র ৫ হাজার টাকা ঋন নেন আজাদের ছোট মেয়ে লাকি বেগমের কাছ থেকে।

শেষমেষ সে সুদের টাকা মেটাতে না পারায় রানী আক্তারের এক দিনের শিশু বাচ্চাকে অন্যত্র বিক্রি করে দেয় সুদ নেয়া লাকী আক্তার। ঋনের টাকা শোধ না হওয়ায় স্ত্রী রানী আক্তারকে রেখে পালিয়ে যায় হান্নান চৌকিদার। এক বছর আগে বিক্রি করে দেয়া ঐ পুত্র শিশু সন্তানকে শনিবার রাতে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা এলাকার দক্ষিণ পাশা থেকে উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। এঘটনায় লাকী আক্তারের বাবা মা ও শিশুটি ক্রেতা রানু বেগমসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ । জিজ্ঞাসাবাদের পর রানু বেগম ছাড়া ৪ জনকে ছেড়ে দেয় হয়। তবে অভিযুক্ত লাকি আক্তার পলাতক রয়েছে।
শিশু সন্তানটির মা রানী আক্তারের অভিযোগ, দুই বছর আগে লাকির কাছ থেকে স্বামীর নেওয়া মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ঋণের সুদ হিসাবে এ পর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। তারপরও আরও ১ লাখ ৩ হাজার টাকা পাওনা বলে দাবি করছেন লাকি। টাকা শোধ করতে না পারায় ১ বছর আগে জন্ম নেওয়া তাঁর একদিন বয়সী নবজাতককে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ঋণ শোধ না হলে মারধরের ভয়ে রানীকে রেখে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়েছেন তাঁর স্বামী।

রানীর অভিযোগ, তিনি পড়াশোনা জানেন না। শহরে পরিচিত কেউ নেই। এই সুযোগেই লাকি বেগম ও তার স্বামী হজরত আলী ঋণ বাবদ তাঁর কাছ থেকে কাগজে সই রেখেছে। সেই কাগজ দেখিয়ে থানায় মামলা করা যাবে, পালিয়ে গেলেও পুলিশ দিয়ে ধরে আনা হবে এমন ভয় দেখানো হয়েছে তাঁকে। ফলে সন্তান বিক্রির বিষয়ে জানাতে তিনি পুলিশের কাছে যাননি। উল্টো ইট ভেঙে যে আয় হয়েছে তা দিয়ে ঋণ শোধের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দিনের পর দিন ঋণ কেবল বেড়েছে। টাকা শোধ করতে না পেরে আয়ার কাজ করেছেন লাকি বেগমের বাড়িতে।

লাকি আক্তারের বাবা মো. আজাদ বলেন, তাঁরা কোনো সুদের কারবার করেন না। এগুলো তাঁদের রিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তবে তাঁর মেয়ে লাকি বেগম দিনমজুর রানী বেগমকে সুদে টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। তিনি জানান, বাচ্চা বিক্রি করে সুদের টাকা আদায়ের বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

শিশুটি ক্রয় কারী আটককৃত রানু বেগম জানায়, তার একটি ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।কিন্ত ছেলেটি প্রতিবন্ধী। তাই সে একটি ছেলে দত্তক বা ক্রয় করার জন্য পরিচিতজনদের বলে রেখেছিলো। এক বছর একমাস পূর্বে শ্যামপুর আফসার করিম রোডের মৃত আয়াত আলীর স্ত্রী সুমা তাকে ফোন করে জানায় একটি বাচ্চা বিক্রি হবে।সে তখন ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি ক্রয় করে। বাচ্চাটির নাম রেখেছেন ইউসুফ।

সুমা জানায়, তার বোন ঝর্নার মাধ্যমে জানতে পারে যে একটি বাচ্চা বিক্রি হবে।পরে সে তার মামী রানু বেগম কে জানালে সে আগ্রহ প্রকাশ করে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি কিনে নেয় অপরদিকে ঝর্না জানায়, আলীগঞ্জস্থ বিডব্লিউটি কলোনীর শাহালমের ভাড়াটিয়া ফারুকের স্ত্রী রুবিনা তাকে ফোন করে জানায় বাচ্চা বিক্রির কথা।

রুবিনা জানায়, লাকী বেগম তাকে বাচ্চা বিক্রির কথা জানায়।পরে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাচ্চাটি কিনে নেয় রানু বেগম। লাকী টাকা নেয় এবং বাচ্চাটিকে তার মা নিজেই রানু বেগমের হাতে তুলে দেয়।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়ে শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিণ পাশা গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাচ্চাটিকে উদ্ধার সহ রানু বেগমকে আটক করা হয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত