নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : সপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হবে সুজন মাহমুদ। ব্যাচেলর বাসায় ভাড়া থকে টিউশনি করেই নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতো সরকারী তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই মেধাবী শিক্ষার্থী। তাছাড়া দিন-রাত পড়াশুনা আর কোরআন তেলোয়াতই ছিল তার অন্যতম অনুশীলন। বাবা-মা এবং বড় ভাইও তেমন লেখাপড়া করতে পারিনি। তাই সপ্নবুনা মেধাবী এই ছেলেটির হঠাৎ এমন রহস্যজনক মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেনা তার হতভাগা মা ও স্বজনরা। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলাও দায়ের করেছেন নিহতের বড় ভাই শাহজামাল। তবে আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো উদঘাটন হয়নি সেই মেধাবী শিক্ষার্থী সুজন হত্যাকান্ডের কোন রহস্যই।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে কলেজ ছাত্র সুজন মাহমুদের মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। উদ্ধারের পর লাশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে আঘাতের চিহ্ন। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর থেকে লাশ হয়ে ফিরলেও মেধাবী শিক্ষার্থী সুজন হত্যাকান্ডের কোন রহস্যই উন্মোচন করছেনা পুলিশ, এমনটাই আক্ষেপ জানিয়েছেন নিহতের পরিবার।
জানা গেছে, সুজনের ব্যবহৃত মোবাইলের সে সময়কার কথোপকথনের একটি কল লিস্টও রয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু সুজনের পরিবার গরীব ও অসহায় বলে তেমন কোন পাত্তা দিচ্ছেনা পুলিশ। নদী থেকে সুজনের লাশ উদ্ধার হওয়ায় মামলাটি এখন তদন্ত ভার চলে গেছে নেী থানায়। তাই প্রতি সপ্তাহেই বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার এসআই মো. সগির এর সাথে দেখা করলেও সুজনের পরিবারকে কোন অগ্রগতি জানান নি পুলিশের ওই কর্মকর্তা। বরং দমকী ও সান্তনা দিয়ে এ মামলা নিয়ে শুধু শুধু সময় নষ্ট না করার জন্য বলা হয়।
এ বিষয়ে নিহত সুজনের বাবা জানান, আমি ও বড় ছেলে অনেক কষ্ট করেছি। দিনমজুরের কাজ করেছি। যে কোন একদিন আমার ছেলেটা বড় অফিসার হবে। কিন্তু কে বা কারা, আমার ছেলেটারে মাইরা ফেলল পুলিশ কিছুই বলতে পারে না। বিগত এতগুলো মাস গেলো পুলিশ আমাগো কিছু বলে না। এভাবে যদি কারো মায়ের বুক খালি কইরা ফেলে সরকার কি এর দায়িত্ব নিবোনা। আজকা আমার গেছে কাল আরেকজনের যাইবো। তাই আমি জানতে চাই কিভাবে আমার ছেলে মারা গেছে। সরকারের কাছে এটুকুই আবেদন আমার ছেলের হত্যাকারীদের বের করে শাস্তি করুক।
অন্যদিকে সদালাপী, মেধাবী সুজন টিউশনি করেও অভিভাবকদের কাছে কুড়িয়েছেন অনেক সম্মান ও ভালবাসা। তাই এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। বন্দর উপজেলা কার্যালয়ের মসজিদটির ইমাম জানান, এই ছেলেটিকে আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজে দেখতাম। সে এখানে অনেকরে ছাত্ররেই পড়াইতো। আরকেজন স্থানীয় অভিভাবক বলেন, সুজনের মত ছেলেই হয়না। সে খুবই ভালো ছেলে ছিল। ওরে যারাই মাইরা থাকুক আমরা দাবী করবো পলিশ যেন দ্রæত আসামীদের চিহ্নিত করে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
নিহতের ভাই শহজামালের সাথে কথা হলে জানায়, আমি তো সপ্তাহে একবার করে থানায় (সদর নৌ) যাই। দারোগারে কল দেই। মাঝে মাঝেই দারোগা রাগ করে আমি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলাম কেন এজন্য। আর বলে তুই কি জানস ক, কিছু পাইলে জানাইস। আমি জানলে কি আর পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতাম। আর তিনি বলেন, এটা নিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নাই। একটা কল লিস্টও নাকি তিনি পাইসে। বলসে দেখমুনে। তবে আমরা গরীব অসহায় হওয়ায় পুলিশ আমাগো কথা শুনেনা। কোন পাত্তাই পাই না। খালি অনীহা দেখায়। তাই আমরা কারে কি কমু কিছুই বুঝতাসিনা। আমাগো একটাই দাবী আমার ভাইয়ের কেমনে কি হইসে জানতে চাই।
তাছাড়া রহস্যজনক হত্যা মামলাটির কোন কিছু উদঘাটন না হতেই শহরের আল্লামা ইকবাল রোডস্থ সুজনের সেই ব্যচেলর রুমটিতে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, সুজনের ব্যবহৃত আসবাবপত্র সহ সবকিছুই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে অনেক কিছুই ইঙ্গিত করেন তার সাথে থাকা রুমমেটরা। স্মৃতিচারণ করেন মেধাবী শিক্ষার্থী সুজনের সাথে কাটানো সে সময়গুলোর কথা। নিহত সুজনের বিষয়ে কিছু জানেন কিনা এমন বিভিন্ন প্রশ্নে প্রথমে অনেকটাই অশলীন আচরণ করেন সুজনের রুমমেট রাজিব হাওলাদার, পরবর্তিতে তাদের কয়েকজন ভিডিও কিংবা ছবি তুলতেও আপত্তি জানান। একপর্যায়ে তারা জানান, বেশ কিছুদিন সুজনের চলাফিরায় তাদের সন্দেহ লেগেছিল। কাপড়, নতুন জুতা কিনার ক্ষেত্রেও সুজনের অনেকট পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে সুজন একেবারেই ভালো ছেলে ছিল। সারাক্ষন পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকতো। নামাজ পড়তো। সকলকে পড়ার কথা বলতো।
অন্যদিকে দায়েরকৃত হত্যা মামলাটির র্সবশেষে খবর জানতে চাইলে, নতুন যোগদান হওয়ার অযুহাতে, ওই বিষয়ে কোন কিছু অবগত নন বলে বক্তব্য দিতে রাজি হননি বন্দর থানা অফিসার ইনর্চাজ দিপক চন্দ্র দাস। পরবর্তিতে সদর নৌ থানায় গেলে সুজন হত্যা মামলার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানা অফির্সাস ইনচার্জ (ওসি) মো. শহীদুল আলম জানান, আমরা ওইদিন লাশটি উদ্ধার করেছিলাম। তখন ছেলেটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে তবে সেগুলি কিসের এখনো বলা যাচ্ছে না। এসপি স্যারকে নলেজ দিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করি খুব শিঘ্রই একটা ভালো ফল আসবে। গরীব হওয়ায় কেউ কোন গাফলতী করবেনা। আমাদের পুলিশ আইন অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে। সগীর আসলে চেষ্টা করছে, জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ই জানুয়াারি খুব পরিপাটি হয়েই শহরের আল্লামা ইকবাল রোডস্থ ব্যাচেলর বাসা থেকে বন্দরের ফরাজিকান্দা এলাকায় এক বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যায় সুজন। আর ওইদিন থেকেই তার কোন খোঁজ না পেয়ে বন্দর থানায় একটি জিডিও করেন তার বড় ভাই শাহজামাল। ঠিক একদিন পরেই কাকতালিয়ভাবে উদ্ধার হয় সুজনের লাশ। তবে শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও পড়নের প্যান্টে অক্ষত মিলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সহ বিভিন্ন কাগজাদী। যেখানে একটি বিষয় পরিস্কার, তাহলে কোন ছিনতাইকার আবশ্যই তাকে মেরে পানিতে ফেলে দেয়নি।