নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক মৎস চাষীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ওই মৎস চাষীর চাষ করা মৎস খামার জবর দখল করে মাছ লুট করে উল্টো চুরির অপবাদ দিয়ে ফজরের নামাজের সময় মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বর্বরোচিত নির্যাতন চালায় দখলবাজ সন্ত্রাসীরা। নির্যাতনকারীরা হুমকি দিচ্ছে, একটি মামলা করলে মৎস চাষী মজনু মিয়াকে দশটি মামলা দেয়া হবে, বেশি বারাবারি করলে এলাকা ছাড়া করা হবে, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি তাদের পকেটে। বিষয়টি পুলিশের কাছে সহযোগীতা না পেয়ে ১১ নভেম্বর সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার ঐ মৎস চাষী। মজনু মিয়া রূপগঞ্জ উপজেলার আতলাপুর গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে।
মজনু চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, তিনি একজন গরীব মানুষ। মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রিত হয়ে কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জীবিকার প্রয়োজনে কৃষি কাজ, মাছ চাষ ও তরিতরকারি চাষ করেন। বাড়ির মালিক মিজানুর রহমান ও স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মারা যাওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে মাহাবুর, মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে আকবর মিয়া, আইয়ুব মিয়া, ইয়ানুছ মিয়ার ছেলে মাজাহারুল ও নাজমুলসহ সন্ত্রাসী বাহিনী বাড়ি-ঘর জবর দখল করতে মজনু চৌধুরীকে নানা ভাবে হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে। মজনু মিয়া বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহন করে বাদশা সরকারদের কাছ থেকে ৪ বিঘা পুকুর, মামুন ভুইয়ার এক বিঘা পুকুর ও আরিফ সরকারের এক বিঘা পুুকুর বর্গা নিয়ে মৎস চাষ করে আসছেন। এসব পুকুরে রুই, কাতলা, মির্কা, ব্রিগেট, গ্লাসকাপ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন। পুকুরের চারপাশের পাড়ে বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করেন।
গত ৩ মাস পুর্বে উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা এক বিঘার একটি পুকুর জবর দখল করে নিয়ে যায়। বাকি দুইটি পুকুরের মাছ ধরে বিক্রি করে দেয়। পুকুর পাড়ে চাষ করা সবজি গাছ কেটে ফেলে। পুকুরে গেলেই মজনু চৌধুরীকে হত্যাসহ মামলার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। এসব ব্যাপারে একাধিকবার ভোলাব তদন্ত কেন্দ্র পুলিশ অবহিত করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
এদিকে, গত এক মাস আগে অপর এক জনের একটি পুকুরে মাছ চুরির দায়ে চারিতালুক এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে মোশারফ হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে মাছ সহ জাল গলায় পেচিঁয়ে বেঁধে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায় উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা। পরে মোশারফকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা ফজরের নামাজরত অবস্থায় মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে এসে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে মজনু চৌধুরীকেও চুরির অপবাধ দিয়ে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। পরে পাশবিক নির্যাতন চালায় নির্যাতনকারীরা। পরে পরিবারের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় মজনু চৌধুরীকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তাছাড়া এদিকে, চুরির দায়ে মামলা না দিয়ে পুলিশ দিয়ে নির্যাতিত মোশারফ হোসেনকে ২০ লিটার চোলাই মদ দিয়ে একটি মাদকের মামলা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। এক মাস চিকিৎসার পর বাড়িতে এসে নির্যাতনের বিচার ও ঋণ নিয়ে চাষ করা মাছের পুকুর ফেরত এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মজনু চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগমের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় ইউএনও মমতাজ বেগম এর সঠিক বিচার ও চাষ করা পুকুর ফেরতের আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউএনও মমতাজ বেগম বলেন, অভিযোগটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানকে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তারপরও সরেজমিনে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে আমি ব্যবস্থা নিবো।