নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (বিশেষ প্রতিবেদক) : বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার সঙ্গে স্মৃতিবিজড়িত নারায়ণগঞ্জের জিয়া হলের জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ করে সেটিকে ৬ দফা ভবন করার দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। আজকের জিয়া হল সহ পুরো এলাকা ছিল তখন টাউন হল ময়দান। চাষাঢ়ার টাউন হল ময়দান বর্তমানে যেটা বালুর মাঠ নামে পরিচিত সেখানে অন্তত দুইবার সভা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই টাউন হল ময়দানের সাথে জড়িয়ে আছে ছয় দফার আন্দোলনের ইতিহাস।
নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, এই মাঠে তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন ছয় দফার। ঘোষণা দেয়ার পর নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকায় যাওয়ার পর রাত ২ টার দিকে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। জিয়া হলের জায়গা ছাড়া বাকি জায়গা রাজউক বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। অনেক আগেই দাবি উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বালুর মাঠ সংরক্ষণের কিন্তু অভিযোগ ছিল সংরক্ষণ না করে কিছু লোককে আর্থিক সুবিধা দিতে জায়গা বিক্রি করে রাজউক।
তবে নানা কারণে আজও নারায়ণগঞ্জের জিয়া হলে নাম পরিচয়ে আখ্যা দিয়ে রাখা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টাউন হল ময়দান এখন জড়াজীর্ণ হয়ে অরক্ষিত এবং অবমূল্যায়িত। পায়নি ইতিহাসের স্বাক্ষি হিসেবে তার আত্মমর্যাদামূলক সম্মানটুকু। আর সে হিসেবেই ছয় দফা ভবনের নামে রূপান্তরের দাবী জানালেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
সূত্র মতে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এই নারায়ণগঞ্জ জেলা। তাঁর জীবদ্দশায় বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন তিনি বহুবার। চাষাঢ়ার টাউন হল ময়দান, পাইকপাড়ার মিউচুয়াল ক্লাব, বায়তুল আমান, নারায়ণগঞ্জের পাবলিক লাইব্রেরী, দুই নম্বর রেলগেইট এলাকার রহমতউল্লাহ ইনস্টিটিউট, স্টিমার ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি।
জানা গেছে, ১৯৬৬ সালের ৮ মে চাষাঢ়ার টাউন হল ময়দানে লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতিতে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এসভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি আওয়ামী লীগের পক্ষে নারায়ণগঞ্জ বাসীর শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে ৬ দফার স্বর্ণনির্মিত প্রতীক উপহার দেয়া হয়। আদমজী পাট শ্রমিকদের পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে পাটের মালা দেয়া হয়। ৬ দফার প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধু ৬ টি শান্তির কপোত উড়ান। সভা শেষে ৬ দফার প্রতীক হিসেবে ৫ টি মশাল জ্বালিয়ে সংগ্রামের শপথ নেন নেতাকর্মীরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন এ কে এম শামসুজ্জোহা।
এছাড়া ১৯৬৯ সালের অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে চাষাঢ়ার টাউন হল ময়দানে এক সভায় উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সভা পরিচালনা করেছিলেন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই। সে সময় তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাইয়ের স্মৃতিচারণ অনুযায়ী, ১৯৬৯ সালের অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে এক সভায় উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ওই নির্বাচনী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠে। বর্তমানে যেখানে নূর মসজিদ, সেখানেই সভার মঞ্চ করা হয়েছিল। ওই পুরো জায়গাটিই ছিল বালুর মাঠ। পরবর্তীতে বালুর মাঠটি না থাকলেও এখন পর্যন্ত এই জায়গাটি বালুর মাঠ বলেই পরিচিত।
জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের মাইক্রোস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ৫৭৭৬নং দলিলের মাধ্যমে ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ জমি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ওসমান পরিবার ঘনিষ্ঠ খালেদ হায়দার খান কাজলের কাছে বিক্রি করে রাজউক। ২০১৮ সালের ২৩ মে কাজল ওই জমি ১৪ কোটি টাকায় বিক্রি করে পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার লিমিটেডের কাছে। একইভাবে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই রাজউক চাষাঢ়ার মনির টাওয়ার সংলগ্ন ২৪ নম্বর প্লটে নাসিকের অস্থায়ী মার্কেট উচ্ছেদ করে প্রায় ৭ শতাংশ জমি ২ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৪৭ টাকায় মহিউদ্দিন তোরান ও দুলাল চন্দ্র ভৌমিকের কাছে বিক্রি করে দেয়। ওই জমিতে বর্তমানে ৮ তলাবিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। একইভাবে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টারের পশ্চিম পাশের প্রায় ৫৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ জমি পৃথক দুই দলিলের মাধ্যমে আমলাপাড়ার নুপুর কুমার ভৌমিকের কাছে ১৭ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার ৮৪৫ টাকায় বিক্রি করে দেয় রাজউক। পরে নুপুর কুমার ভৌমিক সেই জমি পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টারের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের এমডি ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে ২৭ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। বর্তমানে ওই জমিতে বিল্ডিং নির্মাণ করছে জমির মালিকরা।
সংসদে শামীম ওসমান বলেন, জাতির পিতা নারায়ণগঞ্জে গিয়ে ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। সেটা বালুর মাঠ নামে একটি মাঠ ছিল। সেখানে ঘোষণা দেওয়ার পরে তিনি (বঙ্গবন্ধু) তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওটার স্মৃতিকে ভুলিয়ে রাখতে নারায়ণগঞ্জ মিলনায়তন নামের একটি অডিটোরিয়াম করেন। তারপরে খালেদা জিয়া এসে সেটাকে আবার জিয়া হল নাম দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বায়তুল আমানে একাধিকবার এসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি এখনও রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত পাইকপাড়া মিউচুয়াল ক্লাব সংরক্ষণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকায় রহমতউল্লাহ ইনস্টিটিউট ভেঙে ফেলা হলেও সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর।
তবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টাউন হল ময়দান যা এখন চাষাঢ়া বালুর মাঠ নামে পরিচিত সেখানে উঠেছে বেশ কয়েকটি সুউচ্চ ভবন। সংরক্ষণ করা যায়নি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টাউন হল ময়দান।