নাসিম ওসমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ৫০হাজার কেজি চাল দিলেন সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমানের ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বন্দর থানা এলাকায় ৫০ হাজার কেজি চাল বিতরনের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছেন বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমান। এ সময় তিনি প্রয়াত বড় ভাই নাসিম ওসমানের রুহের মাগফেরাত কামনা করে প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান, নাতি আলিফ ওসমান এবং পরিবারের পক্ষ তিনি নিজে বন্দরের সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, আমি জানি নাসিম ওসমান আপনাদের বন্দরের মানুষের প্রানের নেতা ছিলেন আপনারা তাঁর জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন বেহেস্ত বাসী হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় পুরান বন্দর চৌধুরী বাড়ি এলাকায় নাসিম ওসমান মডেল হাইস্কুল মাঠে ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড কাউন্সিলদের উপস্থিতিতে প্রয়াত নাসিম ওসমানের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়ায় তিনি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ৫০ হাজার কেজি চাল হস্তান্তর করেন। প্রতিটি বস্তায় ২০ কেজি করে ২৫০০ পরিবারের মাঝে ওই সকল চাল বিতরনের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সেই লক্ষ্যে তিনি বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার এবং জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

দোয়ার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, আল্লাহ আপনাদের সুযোগ দিয়েছেন মানুষের সেবা করার জন্য। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি তাদের এখন ঘরে বসে থাকার সময় নয়। সারা পৃথিবীতে দুর্যোগ। মানুষের ভেতর অনেক অহঙ্কার হয়ে গিয়েছিলো। আমরা হয়তো আল্লাহকে ভূলতে বসে ছিলাম। আমাদেরকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্যই হয়তো এই মহামারি সারাবিশ্বকে কাপিয়ে দিয়েছে। এটা কবে শেষ হবে তা কোন বিশেষজ্ঞ বলতে পারছে না। তারপরেও আস্তে আস্তে লকলাউন খুলবে। এছাড়া কোন উপায় নাই। আজকে গার্মেন্টস কারখানা গুলো খুলে দিতে হচ্ছে। গার্মেন্টস না চললে দেখা যাবে ব্যবসাটা বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে। এই করোনা থেকে বাচার একমাত্র উপায় ভয় না সর্তকতা। অনেকে রোগটা হলে গোপন করছেন। কেউ বা আবার গুজবের পেছনে ছুটছেন। এসব বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বার বার করে বলছেন আমাদের দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে হবে। যারা জনপ্রতিনিধি আছেন তাদেরকে মনে রাখতে হবে এটাই শেষ নয়। দেশে অনেক জায়গায় অনেক বড় বড় নেতারা জেলের ভাত খাচ্ছেন। আপনাদের দেখতে হবে আপনাদের এলাকা ঠিক আছে কিনা। যদি দুর্ভিক্ষ চলে আসে তাহলে করোনা ভাইরাসে আর কত মানুষ মারা যাবে তার থেকে বেশি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।

তিনি আরো বলেন, যারা দলের রাজনীতি করেন তারা এখন ঘরে থাকেন। এখন মাঠে কাজ করবে জনপ্রতিনিধি আর প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কারন আমাদের উপর দায়িত্ব আছে। সরকার আমাদের এই দায়িত্বের জন্য একটা সম্মানী ভাতা দেন। হয়তো এই দু:সময়টা থাকবে না। কিন্তু আপনাদেরকে এলাকার মানুষদের সাবধান করতে হবে। আমি প্রতিটি জনপ্রতিনিধিকে ২০জন করে সেচ্ছাসেবী দিতে চেয়েছি যাদেরকে মাসে ৪৫০০ টাকা করে সম্মানী ভাতা প্রদান করা হবে ১ মাসের জন্য। যারা এলাকার মানুষকে সচেতন করবে, সহযোগীতা করবে। কিন্তু এখনো আমার কাছে আপনারা কেউ তাদের নাম দেন নাই। আমি সকলের কাছে অনুরোধ করবো আগামী রোববারের মধ্যে আমাকে তাদের তালিকা দিবেন এবং অবশ্যই আপনারা শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের সেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগ দিবেন। আর এই চাল আপনারা শুধুমাত্র তাদেরকেই দিবেন এই মুহুর্তে যাদের সামর্থ্য নাই। যাদের কাছে এই সহযোগীতা পৌছালে তাদের ঘর থেকে বের হতে হবেনা। আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সরকারের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে। আমাদের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের ভোটেই আমরা যার যার সম্মানে বসেছি।

সবাইকে সর্তক থাকার আহবান রেখে তিনি বলেন, আপনারা সবাই কাজ করার সময় সর্তক থাকবেন। যাতে করে বাইরে থেকে ভাইরাস আপনার ঘরে না নিয়ে যান সেই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। আমাদের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে করোনা রোগীদের টেস্ট করার কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। ব্যক্তিগত ভাবে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দিয়েছি। ডাক্তার নার্সদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সরকারী ভাবে হাসপাতালে ল্যাব স্থাপন হবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই। করোনা টেস্ট তখন আরো সহজতর হয়ে যাবে। আপনারা কেউ সংকোচ করবেন না। যখন নিজেকে সন্দেহ হবে আপনারা নিজের টেস্ট না করে নিবেন। নারায়ণগঞ্জে অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়ে ছিলেন। উনারা ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠছেন। ভয়ের কিছুই না মূলত সচেতন হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি আমার জীবনের সকল উপার্জন দিয়ে বিগত ৬ বছরে নারায়ণগঞ্জ এবং বন্দরে ৯টি স্কুল বানিয়েছি। আজকে এই দুর্যোগের মুহুর্তে আমার সেই স্কুল গুলো খালি। স্কুলের বাচ্চারে আজ ঘরে বসে আছে। একজন শিক্ষার্থী আমাকে ফোন করে বলে ছিলো দাদু আমার বাবা তো বিদেশে থাকে টাকা পাঠাচ্ছে না আমরা কি খাবো? আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। আমি আমার সাধ্যমত মানুষকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেকে আমার নির্বাচনের সময় আমাকে সহযোগীতা করতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু আমি তখন তাদের থেকে সহযোগীতা নেই নি । আমি তাদেরকে বলে ছিলাম যদি কখনো আমার এলাকার মানুষ বিপদে পড়ে আমি তখন আপনাদের কাছে সহযোগীতা চাইবো। কিন্তু এখন এই দুযোর্গ মুহুর্তে আমি বার বার বলার পরেও হয়তো করোনা আতঙ্কে অনেকে এগিয়ে আসছেন না। আশা করছি অচীরেই উনারা করোনার ভয়কে জয় করে আমার সাথে একত্রিত হয়ে জনগনের জন্য কাজ করবেন। কারন সাধারণ মানুষের বিপদে যারা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন তারাই প্রকৃত বন্ধু। আমি ব্যবসায়ী মহল সহ বিত্তবানদের কাছে আহবান রাখছি আপনারা সাধারণ মানুষের সহযোগীতায় এগিয়ে আসুন।

বন্দরের সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না ভবিষ্যতে বন্দর কি হবে। অনেক বাড়িতে দেখা যায় ছেলে বিদেশে থাকে বাবা কোন তাঁর জমিটা আর চাষ করেনা ছেলে টাকা পাঠাবে ভেবে। কিন্তু যারা বিদেশে থেকে কাজ করে দেশে টাকা পাঠায় তারা কতটা কষ্ট থাকে একামাত্র তারাই ভাল জানে। তাই আপনারা আপনাদের জমি বিক্রি করে দিবেন না। আর এক ইঞ্চি জমিও আপনারা অনাবাদি ফেলে রাখবে না। আপনার জমিতে আপনি চাষ করতে না পারলে অন্যকে দেন চাষ করতে। যাদের বাড়িতে ছাদ আছে তারা প্রত্যেকের বাড়িতে ছাদ কৃষি করবেন। আমি প্রতিটি স্কুল কমিটির কাছে অনুরোধ করছি কোন স্কুলের ছাদ যেন খালি না থাকে। স্কুলের ভবন গুলোর ছাদে যেন ছাদ কৃষি করা হয়। আপনারা বাড়িতে গরু ছাগল মুরগি যার যেমন সামর্থ আছে সেই ভাবে পশু পালন করুন। যদি প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে হাওড় এলাকায় ক্ষেতের ধান গুলো কাটা না যেত তাহলে হয়তো বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারতো। আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা সচেতন হোন।

নাসিম ওসমানের মৃত্যু বার্ষিকীতে সাধারণ মানুষের হাতে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়ার কাজে সহযোগীতা করায় তিনি কামরুল হাসান মুন্নাকে ধন্যবাদ জানান।

দোয়া অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ,বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা শুক্ল সরকার, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানা উল্লাহ সানু, ছালিমা হোসেন শান্তা, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল আহম্মেদ সাগর, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম নবী মুরাদ, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম সহ অন্যান্যরা।

add-content

আরও খবর

পঠিত