নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় পুলিশের সামনেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশের সামনেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে একটি গ্রুপ মহড়া দিলেও পুলিশ তাদের ওপর অ্যাকশনে না গিয়ে উল্টো শান্ত করায় ব্যস্ত ছিল। সোমবার বিকালে ঘটে যাওয়া এই সংঘর্ষে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীসহ ৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বন্দর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময় পুলিশ দুই পক্ষকে শান্ত করার সময়ও তাদের অস্ত্র হাতে সরব উপস্থিতি ও মহড়া দিতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, এক বছর পূর্বে এই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জুয়েল নামে এক যুবক খুন হয়। জুয়েল স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার ভাই। এই হত্যা মামলায় প্রতিপক্ষের আট-নয়জনকে আসামি করা হয়। ওই সময়ই আসামিদের বাড়িঘরেও হামলা করে বাদীপক্ষের লোকজন। সম্প্রতি আসামিরা জামিনে পেয়েছেন। রোববার মামলার আসামি আলীম তার বাড়িতে আসলে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করে।
হামলায় আহত আলীম প্রধান বলেন, আমরা হামলার আশঙ্কা আগেই করছিলাম। বাড়ির কাজ করাবো তাই ধামগড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের কাছে নিরাপত্তাও চাইছিলাম। তিন দফায় হামলা করেছে তারা। প্রথমবার ভাইরে কোপাইছে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে সোহেল মেম্বারের ভাই রাসেল তার লোকজন নিয়ে আমার উপর হামলা করে। এই হামলায় খলিল মেম্বারের লোকজনও ছিল। তারা পুলিশের সামনেই টেঁটা ও ধারালো রামদা নিয়ে হামলা করে।
হামলার সময় ঘটনাস্থলে ধামগড় ফাঁড়ির এসআই জামিল, বন্দর থানার এসআই বাশার, কনস্টেবল পারভেজ, কনস্টেবল জিয়াসহ ছয়জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে আলীম বলেন, তারা এত বড় সন্ত্রাসী যে পুলিশের সামনেই টেঁটা, ছুরি, রামদা হাতে এই হামলা চালায়।
পুলিশের উপস্থিতিতেই টেঁটা ও রামদা নিয়ে হামলার বিষয়টি স্বীকার করে ধামগড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসিম হাবিব বলেন, দুই পক্ষের পুরনো দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বে একজন খুনও হন। তবে আসামিরা জামিনে এসে তাদের বাড়িতে কাজ করাবেন জানিয়ে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। কিন্তু পুলিশ সংখ্যায় কম থাকায় পরিস্থিতি প্রথমে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। পরে অতিরিক্ত ফোর্স আসে। পুলিশ ঘটনাস্থলে না থাকলে খুন হওয়ারও সম্ভাবনা ছিল।
তবে হামলার নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, আমি সারাদিন উপজেলা পরিষদ আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত না। আর পুলিশের সামনেই তো সব হইছে দেখলাম ভিডিওতে। পুলিশ কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল না?
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ ( খ- সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন জানান, বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত দুই পক্ষের দ্বন্দ্বকে ঘিরে সংঘাত লেগেই আছে। হামলার খবর পেয়ে আমরা দুই পক্ষকেই নিবারণ করেছি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে ও আধিপত্যের লড়াইয়ে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তবে ঘটনার পরপরই থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে একজন আহত হয়েছেন।সংঘর্ষের ওই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।