নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ) : মঙ্গলবার ৮ ডিসেম্বর, শহীদ সাংবাদিক হানিফ খানের ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাংবাদিকতা জগতে হানিফ খান ছিলেন নির্ভীকতার প্রতীক। তার কর্মকা- একটি ইতিহাস। একজন সাংবাদিক হিসেবেই তার পরিচয় সীমাবদ্ধ ছিল না বরং প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী, দক্ষ শ্রমিক সংগঠক এবং কবি-সাহিত্যিক হিসেবেও দেশজোড়া খ্যাতি ছিল। নারায়ণগঞ্জে তখন কোন প্রেসক্লাব ছিল না। তৎকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব গঠন করেছিলেন।
দৈনিক সংবাদ-এর নারায়ণগঞ্জস্থ প্রতিনিধি হিসেবে তদানীন্তনকালে পৌরসভা, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিদ্যৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বেপরোয়া দুর্নীতি সংক্রান্ত তার এমন সব তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যা নিয়ে জনমনে আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দৈনিক সংবাদ-এ হানিফ খান প্রেরিত এসব ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলোতে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষের অসৎ আমলাদের বেপরোয়া দুর্নীতির ইতিহাস ফাঁস হয়ে পড়ে। প্রকাশিত এসব প্রতিবেদনগুলো অসৎ আমলাদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল। পরিণতিতে তার মৃত্যু অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৬৭ সালের ৫ ডিসেম্বর আততায়ীর আঘাতে আহত হয়ে নারায়ণগঞ্জের অদূরবর্তী ফতুল্লা রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে হানিফ খানের রক্তাক্ত দেহ চৈতন্য ও মুমুর্ষু অবস্থায় পড়েছিল। এখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন পর ১৯৬৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কবি-সাংবাদিক ও রাজনৈতিক পরিচয় : শহীদ হানিফ খানের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের কান্দিপাড়া হলেও শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জই ছিল তার কর্মস্থল। বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হানিফ খান ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের একজন প্রথম সারির কর্মী হিসেবে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কঠোর কাজ করে একজন দক্ষ রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী লীগে তিনি যোগ দেন। ওই সময় বেশিরভাগ সময়ই তাকে দলকে সংগঠিত করার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর তাকে দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার করা হয়। এক বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সাংবাদিকতা, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ের সঙ্গে সংযুক্ত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হানিফ খান তদানীন্তন আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ শহর শাখার দফতর সম্পাদক ছিলেন।
তৎকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জে সাহিত্য আসরেও তিনি ছিলেন সরব। ১৯৫৪ সালে হানিফ খানের কাব্যগ্রন্থ ভাঙ্গাবাঁশি প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমাজব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে তার লেখা কিছু কবিতার সমন্বয়ে ভাঙ্গাবাঁশি প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি বলাকা নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করতেন এবং বেশ কয়েকটি ছোটগল্পও লিখেছিলেন। তৎকালীন সময়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ শিশু-কিশোরদের নিয়ে গড়া সংগঠন খেলাঘর আসরের সম্পাদক ছিলেন। এ উপলক্ষে মরহুমের ঢাকাস্থ রায়েরবাগ নিজ বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।