নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনে চলাচলরত যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ট্রেনে যাত্রীরা সব সময়ই হয়রানির শিকার হন। ট্রেনে ভিতর যেমন সেবার মান খুবই নিম্নমানের তেমনি ষ্টেশনগুলির প্লাট ফর্মের অবস্থাও নাজুক। এই রুটের প্রতিটি ষ্টেশনের অরক্ষিত প্লাটফর্মের নেই বাউন্ডারি দেয়াল। একদিকে কুকুর, বিড়াল, গরু-ছাগলের অবাদ বিচরন। অন্যদিকে ভ্রাম্যমান পতিতা, ছিনতাইকারী, চোর বাটপারদের নিরাপদ আবাসস্থল ষ্টেশনের প্লাটফর্মগুলো। এ অভিযোগ যাত্রী সাধারনের। এছাড়া ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল, সেবার মান ও ট্রেনের বগি না বাড়িয়ে আরেকটি নতুন ষ্টেশন যুক্ত হওয়ায় এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের ভাগান্তির মাত্রা আগের তুলনায় আরো বেড়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, যাত্রী ধারন ক্ষমতার চারগুন নিয়ে চলাচলরত এই রুটের ট্রেনের সেবার মান না বাড়িয়ে বাড়ানো হয়েছে ষ্টেশন। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, রেলেরমান পূর্বে যেমন ছিল, বর্তমান মান তেমন আছে। কর্তৃপক্ষ রেল নিয়ে বিশাল কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছে শীঘ্রই যাত্রীসেবা থেকে শুরু এই প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক মান উন্নত হবে। ট্রেনের চলাচলরত যাত্রীদের নিরাপত্তায় নেই কোন ব্যবস্থা। এছাড়া ট্রেনের বগিতে বিনা টিকিটের যাত্রী, হকারদের উৎপাত এবং হিজড়াদের চাঁদাবাজি তো আছেই। ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীরা ন্যূনতম সেবাও পাচ্ছে না।
সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ষ্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত এই রুটে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে ১৬ জোড়া (সরকারি তিন জোড়া ডেমুসহ) ট্রেন চলাচল করে। প্রতিটি ট্রেনে বগির সংখ্যা ৭টি। এর মধ্যে একটি বগিতে অর্ধেক যাত্রী ও অর্ধেক লাগেজের জন্য। আর ডেমু ট্রেনের বগির সংখ্যা তিনটি। প্রতিটি বগিতে আসন সংখ্যা হচ্ছে ৭০ জনের। সেই হিসেবে প্রতিটি ট্রেনে ৪৫৫ জন যাত্রী ধারন ক্ষমতার ট্রেন। আর ডেমু ট্রেনের প্রতি বগিতে বসতে পারে (সরেজমিনে দেখা) ৩৫ থেকে ৪০জন। সেই হিসেবে ডেমুতে চলাচল করে ১০৫ থেকে ১২০ জন যাত্রী। সেই হিসেবে প্রতিটি ট্রেনে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় যায় ৫ হাজার ৯১৫ জন এবং ডেমুতে যায় ৩৬০ জন। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে আসতে পারে সমপরিমান যাত্রী। এই তো শুধু সিটের হিসাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এর চেয়ে তিনগুন যাত্রী দাঁড়িয়ে চলাচল করে। দুই সিটের আসনে ৩ জন করে বসে আর বাকিরা দাঁড়িয়ে চলাচল করে।
ডেমু ট্রেনের চালক দিলীপ জানান, ডেমুতে ১৪০ থেকে ১৫০ জন বসতে পারে। তবে দাঁড়িয়ে এর দ্বিগুন যাত্রী চলাচল করতে পারে।
সরেজমিনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে দেখা গেছে, সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। সবচেয়ে বেশী অভিযোগ রেলের ভাড়ার তুলনায় সেবার মান নিয়ে। বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ কলেজের অনার্সের ছাত্র সিফাত আল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এই রুটে যে পরিমান যাত্রী চলাচল করে সে পরিমান সিট রেলের ভিতর নেই। দুই জনের সিটে তিন জন বসে যাচ্ছে। এছাড়া দাঁড়িয়ে এতো পরিমান মানুষ চলাচল করে ট্রেনের ভিতর পাঁ ফেলার মত যায়গা থাকে না।
একই কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তামান্না আফরোজ জানান, এতো পরিমান যাত্রী উঠে যে বসার যায়গাতো থাকেই না। দাঁড়িয়েও চলাচল করতে পোহাতে হয় ভোগান্তি। এমনও সময় যাই দাঁিড়য়ে এক জনের সাথে আরেক জন লেপটে থাকে। এছাড়া প্লাটফর্মের পরিবেশ নিরাপদ না। ঢাকায় চাকুরী করেন যাত্রী আউয়ালের অভিযোগ, ট্রেনে পকেটমারের উৎপাত রয়েছে। এরা পকেট থেকে টাকা, মানিব্যাগ, মোবাইল নিয়ে মুহুর্তেই উধাও হয়ে যায়। এছাড়া মহিলা কম্পার্টমেন্টেও মহিলা যাত্রীদের থেকে প্রায়ই সময় অভিযোগ পাওয়া যায় মহিলা যাত্রীদের টাকা ও মোবাইল উধাও হওয়ার।
এ বিষয়ে বেসরকারিভাবে পরিচালিত ট্রেনের ইজারাদার এসআর ট্রেডিং এর ইনচার্জ রফিক জানান, প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। যাত্রী সেবার মান বাড়ে নাই। এই রুটে মানুষের দূর্ভোগ অনেক পোহাতে হয়। বিভিন্ন সময় ছিনতাই, পকেটমারের কবলে মানুষকে পরতে হয়। এনিয়ে জিআরপি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমাদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার গোলাম মোস্তফা জানান, এই রুটে যে পরিমান যাত্রী চলাচল করে তার সঠিক হিসেব দেয় না। যেহেতু বেসরকারিভাবে চলাচল করে। রেলের যে মান ছিল, সে মানই আছে বর্তমানে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখানকার যথেষ্ঠ ভালো। বাউন্ডারি দেয়াল নির্মানের জন্য, ষ্টেশন আধুনিকায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের রেলের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রি মডেলিং করা হবে। ডাবল লাইনের কাজ চলছে। চাষাড়া ষ্টেশনে এর জন্য শীঘ্রই ক্যাম্প করবে রেল কর্তৃপক্ষ।