নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : শেষ হলো অপেক্ষার পালা। কাঙ্খিত সেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আনন্দে ভাসছে নারায়ণগঞ্জবাসীও। তাই তো অন্য দিনের চেয়ে আজ উচ্ছ্বসটা একটু বেশি। পুরো জেলা সেজেছে ব্যানার, ফেস্টুন আর লাল-সবুজের আলোকসজ্জ্বায়। আর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ তা হলো নারায়ণগঞ্জেই পদ্মা সেতু।
হ্যা, আপনি সত্যিই শুনছেন! আজ উদ্বোধনে দুয়ার খোলেছে কাঙ্খিত সেই পদ্মা সেতুর। আর তাই সারাদেশের মত এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নারায়ণগঞ্জেও ইসদাইর এলাকার স্টেডিয়ামে গড়ে তোলা হয়েছে সেতুটির আদলে পদ্মা সেতু মঞ্চ। যেখানে আজ উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সকল এমপি, মেয়র, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
জানা গেছে, দেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় অবকাঠামো এবং বহুল কাঙ্খিত এই সেতুর আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশে দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে সকাল থেকেই রাখা হয়েছিলো নানা আয়োজন। আর এ মহতিক্ষণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে যুক্ত ছিলেন নারায়ণগঞ্জবাসী। এমনটাই জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ।
এ বিষয়ে কথা হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক প্রতিবেদককে জানান, এখানে পুরো নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য আয়োজন করা হয়েছে। আগতদের সংখ্যা ১০ থেকে ২০ হাজারও হতে পারে। এজন্যই স্টেডিয়াম নিয়েছি। সকালে আমরা আনন্দ র্যালী করেছি। তারপর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমরা সরকারী কর্মকর্তা ও সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী, এমপি, মেয়র সকলেই উপস্থিত ছিলাম।
নারায়ণগঞ্জে পদ্মা সেতু মঞ্চ প্রস্তুতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি যে পদ্মা সেতুকে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে অস্থায়ীভাবে দৃশ্যমান করার। এ মঞ্চ করার মাধ্যমে পদ্মা সেতুকে আমাদের মাঝে এনেছি।
অনুভূতি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, পদ্মা সেতু একটা সম্মানের প্রতীক। এটা বাঙ্গালী জাতির জন্য মিল বন্ধন। সেক্ষেত্রে এ জেলায় ব্যবসায়িক ক্ষেত্র রয়েছে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র রয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের মানুষসহ সকল বিভাগের মানুষ এখন খুব সহজেই সংযুক্ত হবে নারায়ণগঞ্জ বাসীর সাথে।
এদিকে, সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে পুরো জেলাকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। তিনি বলেন, পুরো জেলাতে পুলিশের পোশাকে ও সাদা পোশোকে ডিবি, সিআইডি পুলিশ সদস্যরা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে কোথাও কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। আমরা জনগণের সহায়তা নিয়ে এ দিনই না সবসময়ই মাঠে আছি।
অনুভুতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতু উন্নত বিশ্বে পরিণত করার প্রথম সিড়ি। আমরা জানান দিলাম। বাঙ্গালীরা চাইলে সবই পারে। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিয়ে আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করবো।
এ বিষয়ে কথা হলে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, এটা একটা জাতীয় স্থাপনা। আমাদের অহংকার। আমি এই উৎসবে থাকবো। সকলে মিলে সেতুর উদ্বোধন উপভোগ করবো। এতে অংশ নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটা মিলন মেলা হবে।
এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম বলেন, আমরা যুবলীগ, ছাত্রলীগ সকল নেতাকর্মীরাই উপস্থিত হবো। এটা আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমত্তা ও নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এটা বাংলাদেশের বড় অর্জন। আমাদের নেতা, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের কান্ডারী শামীম ওসমান ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা একসাথে দিনটিকে মহা উৎসবে পরিণত করবো।
অপরদিকে জেলা জুড়ে পথে-ঘাটে, চায়ের কাপে, আড্ডায়-আলোচনায় সেই আনন্দেরই অনুরণন। চোখেমুখে স্বপ্নপূরণের আলোকছটা। বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে, দিনটি পালনে অলি-গলি থেকে শুরু করে সড়কের বাতির খুটিগুলোতে ব্যানার, ফেস্টুন ছেয়ে গেছে। রিক্সা চালক, ভ্যান চালক সকলের প্রশংসায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আর আমার টাকায় পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনায় পঞ্চমুখ। এছাড়াও চায়ের দোকানী থেকে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের গাঁয়ে শোভা পাচ্ছে পদ্মা সেতু, এবং বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি সম্বলিত টি-শার্ট।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়ছে । সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।