নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ নিহত-১, আহত শতাধিক

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (নিজস্ব প্রতিবেদক) : নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র‌্যালিতে পুলিশের বাধার পর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল ও গুলি চালায়। সংঘর্ষ চলাকালে শাওন প্রধান নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পুলিশ ও বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীসহ সাধারণ পথচারী। ১লা সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডিআইটি মার্কেট সংলগ্নে এ ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দিনব্যপী জলকামানসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, কোনপ্রকার অনুমতি ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা র‌্যালি বের করে, রাস্তা অবরোধ করে ফেলে। আমরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাধা দিলে তারা আমাদের উপর চড়াও হয়। এরপরই অতর্কিতভাবে ইটপাটকেল ও ককটেল ছুড়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশের ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনের বিধি অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে।

জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, মহানগর সহ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান, সাংগঠনিক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সবুর খান সেন্টু, সোনারগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানসহ নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। তখন নেতাকর্মীরা বৃষ্টির মত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ২ নম্বর রেলগেট, ডিআইটি মার্কেট সংলগ্ন, মন্ডলপাড়া ব্রীজ, দেওভোগ, নিতাইগঞ্জ ও বাবুরাইল এলাকায়।

এ সময় সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক খান সুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। আর শাওন নামে ছাত্রদল নেতাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। শাওন ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের নবীনগর পূর্ব গোপালনগরের বাসিন্দা ছিলেন। তার পিতা সাহেব আলী। সে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীর দূর সম্পর্কের ভাতিজা।

এ বিষয়ে শওকত আলী জানান, শাওন তার আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। কিন্তু সে কোন রাজনৈতিক অঙ্গনেই নাই। আজকে কিভাবে মারা গেল সে বিষয়ে তিনি চিস্তিত। শাওনের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।

তবে বিএনপির নেতাদের দাবী, শাওন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। তাদের কর্মী। তাঁর মৃত্যুর পর দুপুর থেকে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, ডোরাকাটা সাদা রঙের টি-শার্ট ও কালো জিনস পরিহিত শাওন মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু জানিয়েছেন, সুজনের অবস্থা খারাপ ঢাকা মেডিকেলে আছে ও আমাদের কর্মী শাওন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এছাড়া আমাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমরা অনুমতি চেয়েছে আবেদন করেছি। সদর ওসি এবং এএসপি নাজমুল হাসান নেতাকর্মীদের সাথে র্দূব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা শুরু করে।

অন্যদিকে টিয়ার সেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা হলেন- শহরের ডিআইটি এলাকায় অবস্থিত মর্গ্যান স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়শা সুলতানা, লামিয়া, আফসানা মীম, মিমিয়া, রোকেয়া, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হানী, আখি, উম্মে কুলসুমসহ অনেকেই।
আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের খবর পাওয়া গেছে তারা হলেন- জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, জেলা ছাত্রদল সহ-সভাপতি সাগর সিদ্দিকী, রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদল নেতা সুলতান, বিএনপি নেতা কবীর শেখ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেক হোসেন, ফরিদ হোসেন সিকদার, সস্তাপুর এলাকার হাজী মহব্বতের ছেলে যুবদল নেতা শাহিন (৪০), শহরের টানবাজার এলাকার মহিবুলের ছেলে জাহাঙ্গীর (৩০), টানবাজারের ফারুকের ছেলে রাজু (২৬), সোনারগাঁওয়ের খেদমত আলীর ছেলে শরীফ (২৫), ফতুল্লার কবিরের ছেলে ইউনুস (৪৩), সিদ্ধিরগঞ্জের মতিউর রহমানের ছেলে সাগর (২২), জিমখানার আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুস সালাম (৬০), মিজমিজির মো. হাফিজ মিয়ার ছেলে মো. আখতার (৫২), দেওভোগ মিলন শেখের ছেলে স্বর্ণ শিল্পী মুন্না (১৮), দেওভোগ দাতা সড়কের শহীদ মিয়ার ছেলে মো. কাদির (২৭), ২ নম্বর রেলগেট আলমাছ পয়েন্টের মো. ইসহাকের ছেলে শরীফুল ইসলাম (১৯), শহীদনগরের মো. জামালের স্ত্রী শাহনাজ (৫০), হোসাইনীনগরের হানিফ গাজীর ছেলে মো. সবুজ (৩৪), দেওভোগ পানির টাংকির নূর মোহাম্মদের ছেলে মোমেন (৫৫), ২ নম্বর রেলগেটের মোজাম্মেল হকের ছেলে শিহাব (২৫), পাইকপাড়ার মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে শামসুল হক (৫০), বেপারীপাড়ার শাহজাহানের স্ত্রী শিল্পী (৪০), জামাইপাড়া এলাকার মো. মিলনের ছেলে মো. ইব্রাহিম (২৫), ২ নম্বর রেলগেট এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তি গার্মেন্টের শ্রমিক তাজুল ইসলাম (৩০), মাসদাইরের আবুল কালামের ছেলে আশরাফুল (৩২), শহরের করিম মার্কেটের ইউএস হোসিয়ারীর শ্রমিক সোয়াদ হোসেন (৩০), উজ্জল ভৌমিক (২৮), মিন্টু (২৮), সজিব (১৮), বন্দর রূপালী এলাকার মো. হাসেমের ছেলে মো. নাসির (৪০)।

add-content

আরও খবর

পঠিত