নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জ জেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। শুধু তাই নয়, এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেয়াসহ আহতের পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানীও। সম্প্রতি শহরের চাষাঢ়া রেললাইনে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছিল এক গার্মেন্ট কর্মী। এ হত্যাকান্ডের পর থেকে জেলা জুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া গণমাধ্যমেও বেশ ফলাও করে প্রচার করতে দেখা গেছে ছিনতাইকারীদের বিগত সময়ের বেশ কিছু তথ্য ও উপাত্য দিয়ে প্রতিবেদন। অবশেষে হত্যাকান্ডের ৪ দিন না পেরুতেই জেলা পুলিশের তৎপরতায় রহস্য উদঘাটন করে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও মোবাইল ফোন উদ্ধারসহ গ্রেপ্তার হয়েছে জড়িত আসামীরা।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ছিনতাইকারীরা ফতুল্লা থানা এলাকার বাসিন্দা। আসামীরা হলো ছিনতাইকারী চক্রের নেতা সাগর ওরফে কুত্তা সাগর (২৩), পিতা- সালাউদ্দিন। তার নিজ জেলা শরীয়তপুর, থানা-সখিপুর। বর্তমানে সে জামতলা ধোপাপট্টি রাজিব মিয়ার বাড়ীতে ভাড়া বাসায় থাকতো। অপর আসামী জয় চান ওরফে বিশাল (২৪), পিতা-মৃত মানু চান। সে বর্তমানে ৪নং ডিআইটি কাঠের মার্কেটের ঠিকানায় থাকতো। তার নিজ জেলা ঢাকা ও থানা দক্ষিন কেরানীগঞ্জ। আর হত্যাকান্ড ঘটিয়ে কেরানীগঞ্জেই তারা আত্মগোপনে থাকার চেষ্টা করেছিল। এরা প্রতিনিয়তই নগর জুড়ে ছিনাতাইয়ের মত ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে বেড়াতো। পাশাপাাশি পরিচালনা করতো ছিনতাই চক্রের বিশাল সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে নারী ছিনতাইকারীও। তাই ছিনাতাইয়ের হটস্পট চিহ্নিত করে তাদেরকে খুব শিঘ্রই তালিকা করে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১লা নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। তিনি জানিয়েছেন, আসামীরা ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম নেতা। তাদের সাথে নারীসহ অন্যান্য ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। যারা নগরীতে ছিনতাই কাজে জড়িত। বিভিন্ন সময় ছিনতাই করে তাদেরকে ভাগ-বাটোয়ারা দেয় অন্যান্য সদস্যরা। তারা ওই বাকি ছিনতাইকারীদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। নেতা হিসেবে তাদের সমীহ করে নগরীর ছিনতাইকারীরা। ইতমধ্যে জেলায় টহল পুলিশ ও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে। আমরা ছিনতাইয়ের হটস্পটগুলো চিহ্নিত করছি। তাছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে ছিনতাইয়ে জড়িতদের তালিকা করছি। খুব শিঘ্রই অন্যান্য ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, চাষাড়ায় জে.এস বাস যোগে ভোরে এসে পৌছে ছিল জনি। পরবর্তীতে গত ২৯ অক্টোবর ভোরে বাস থেকে নেমে পায়ে হেটে চাষাড়া ক্রসিং এর দিকে যাওয়ার পথে সদর থানাধীন রেললাইনের কাছে পৌছালে ছিনতাইকারীরা জনিকে জিম্মি করে। এসময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের হাটুর উপরে একটু পিছনের দিকে ছুরিকাঘাত করে তার ইনটেল মোবাইলফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওইসময় ছিনতাইকারীদের আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে জয়নুর রহমান জনি মারা যায়। জনি ফতুল্লা এলাকায় বিসিক শিল্প নগরীর ফেইম এ্যাপেয়ারেলস লিঃ কাজ করতো। জনি দৌলতপুর থানার চরপ্রাগপুর গ্রামের লালটু হোসেনের ছেলে। যেহেতু হত্যাকান্ডটি হওয়ার পর দেহটি রেল লাইনে পড়ে ছিল। এজন্য রেলওয়ে পুলিশ মামলাটির তদন্তভারে রয়েছে। আমরা আসামীদের রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবো। রেলওয়ে থানার মামলা নং-১৫, যার তারিখ-২৯/১০/২০২২খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল। মামলাটির বাদি নিহত জনির চাচা মোশাররফ মাহমুদ।
আরো জানা গেছে, মামলাটি রেলওয়ে থানায় রুজু হওয়ার পর পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল (পিপিএম বার) নির্দেশক্রমে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের মধ্য হইতে আসামী সনাক্ত সহ গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. তরিকুল ইসলামের সার্বিক সহযোগীতায় এবং অফিসার ইনচার্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা আল মামুন এর নেতৃত্বে এসআই তারিকুল ইসলাম, এসআই আতিকুর রহমান ভুইয়া, এসআই এএইচএম কামরুজ্জামান, এএসআই সেলিম উদ্দিন, এএসআই রঞ্জিত সরকার ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা থানা এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। পরে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার দক্ষিন কেনারীগঞ্জ থানাধীন কাউটাইল আরব আল মামুন মিয়ার বাড়ী হতে সাগর ওরফে কুত্তা সাগর (২৩) এবং জয়চান ওরফে বিশাল (২৪) দ্বয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার করার সময় আসামীদের হেফাজতে ঘটনার সময় ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার ও ভিকটিমের ব্যবহৃত ইনটেল মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, গেল মে মাসে রূপগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিনতাই করতে এসে জনতার হাতে পাঁচজন নারী ছিনতাইকারী আটক হয়েছিল। ছিনতাইকারীরা হলেন- হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বাগারসুরা এলাকার হারিছের স্ত্রী কুলসুমা, একই এলাকার রফিজের স্ত্রী খালন, একই এলাকার লাল মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা, একই উপজেলার দৌলতপুর এলাকার জাকির মিয়ার মেয়ে বৃষ্টি, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার বুরুন্দা কালাপানি এলাকার আব্দুল মালেকের মেয়ে মালেকা। এ বিষয়ে হামিদা বেগম নামে এক ভুক্তভোগী রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোভিড-১৯ এর ব্সুটার ডোজ কেন্দ্রে ডোজ নিতে লাইনে দাঁড়ালে নারী ছিনতাইকারী চক্র তাকে ঘেরাও করে এলোপাথারিভাবে কিল-ঘুষি ও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এসময় হামিদা বেগমের গলায় থাকা চেইন ছিনিয়ে নেয় নারী ছিনতাইকারীরা। এসময় হামিদা বেগমের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে নারী ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে জনতা তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এছাড়াও শহরের চাষাঢ়া-চানমারী-জালকুড়িতে বেশ কয়েকবার নারী ছিনতাইকারীদের উৎপাত লক্ষ্য করা গেছে। বেশ কিছু ঘটনায় জানা গেছে, কখনো চলন্ত রিকশায় নারীদের ব্যাগ কেড়ে নিয়ে যায় তারা। আবার বিভিন্ন মার্কেটে কিংবা ফুটপাতে ব্যাগ কেটে মোবাইল হাতিয়ে নিতো এই ছিনতাই সিন্ডিকেটের নারী সদস্যরা। এরাআগে বেশ কয়েকবার চাষাঢ়া আশপাশের এলাকায় এক নারী ছিনতাইকারীকে গণধোলাইও দিয়েছে ভুক্তভোগী।