নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : দলীয় নেত্রী ও সরকার প্রধানকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বেকায়দায় চেয়ারম্যান ও নেতারা। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। কিন্তু তাদের সমর্থিত নেতাদের বেসামাল কান্ডে দলগুলো ইমেজ সংকটে পড়ে গেছে। জেলাজুড়েই চলছে তাদের নিয়ে এখন নানা সমালোচনা। ইতমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ গ্রেপ্তারের দাবী করেছে শীর্ষ নেতা ও তৃণমূলের অনেকেই। কেউ কেউ এহেনকান্ডকে নিজের ভুল হিসেবে সাফাই দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন।
এরমধ্যে বিএনপির দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে -অমর- লেখার একটি ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সোনারগাঁয়ে বিএনপি নেতার এ কান্ডে দুই শীর্ষ নেতাকেই মামালায় অভিযুক্ত করেছে দলটিরই অন্য নেতারা। তবে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তি করেও ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় নেতাদের বেলায় অন্যান্য শীর্ষ নেতারা এখনো তেমন কোন আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। উল্টো জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির নেতৃত্বে কয়েকজন ওই চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে ডিসি এবং এসপিকে স্বারক দিলেও সেখানেও মেরুকরণ লক্ষ করা যায়। তাছাড়া স্পষ্ট দেখা দিয়েছে দলটির শির্ষ নেতাদের অনৈক্য। কারণ, ওইসময় উপস্থিত ছিলেন না জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল সহ আরো অনেকেই। তবে স্বারক দেয়ার বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করে মন্তব্য করেছেন সম্পাদক বাদল। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এমনকি এ বিষয় নিয়ে কোন সাংগঠনিক আলোচনাও করা হয়নি। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশও হয়েছে। এতে করে তৃণমূলের মাঝেও ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করে সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা লায়ন মাহবুবুল আলম ওরফে লায়ন বাবুল বলেছিলেন, আমি বারদীর ম্যাজিষ্ট্রেট, প্রধানমন্ত্রী বারদী আসতে হলে আমার হুকুম লাগবে। এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিব্রত হয়ে পড়েন উপজেলাসহ জেলা আওয়ামীলীগ। তার এ বক্তব্যের একদিন পরই তাকে দল থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। এর দুদিন পর উপজেলা আওয়ামীলীগ এক সভায় তাকে অব্যহতি বহাল রেখে শোকজ দেন। শোকজ দেয়ার পর তা সন্তোষজনক না হলে তাকে স্থায়ী বহিস্কারর করবেন বলেও জানানো হয়। আর তাই নিজেকে রক্ষায় তিনি এখন দৌড়ঝাপও শুরু করেছেন।
এছাড়াও আলীরটেক ইউনিয়নের নৌকার প্রতিক নিয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন আমি নৌকার প্রতিক না নিলে তার চেয়েও বেশি ভোটে নির্বাচিত হতাম। অন্যদিকে, বন্দর কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি নেতা দেলোয়ার হোসেন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে চিনি না শেখ হাসিনাকে চিনি না। এ তিন চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের কারণে জেলা আওয়ামী লীগের দাবি তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্হা নিবে। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উল্লেখিত তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ ও জেলা পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, বিএনপির সোনারগাঁও থানা বিএনপির ইউনিট কমিটি ঘোষণার সময় দলীয় প্যাডের উপরে খালেদা জিয়া -অমর হোক- লিখা থাকায় থানা বিএনপির আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সদস্য সচিব মোশারফ হোসেনের নামে মামলার আবেদন করেছেন দলটির অঙ্গসংগঠন থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল রানা। গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহসেনের আদালতে এ মামলার আবেদন করেন তিনি। ইতমধ্যে আদালত মামলার আবেদন আমলে নিয়ে সোনারগাঁ থানার পুলিশকে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে বলেছে। কিন্তু আওয়ামীলীগের দলীয় সরকার থাকা অবস্থায়ও দলীয় নেত্রীকে নিয়ে কটুক্তিকারীদের ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়ায় কচ্ছপ গতি লক্ষ করা যাচ্ছে !