নারায়ণগঞ্জের সরকারী হাসপাতালে ৮টি পদ খালি, ব্যহত স্বাস্থ্যসেবা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জে সরকারী হাসপাতালের মধ্যে অন্যতম খানপুর এলাকার ৩শ’ শয্যা হাসপাতালটি। করোনা মহামারিতেও যে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পেতে মানুষ দূরদূরান্ত জেলা থেকেও এসেছেন। তাছাড়া সরকারী হাসপাতাল হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রথম ঠিকানা এটি। যেহেতু রোগীদের প্রয়োজনে মূল্যবান অনেক ঔষধও তিন বেলা ফ্রিতেও সরবরাহ করা হয়।

তবে দীর্ঘ বছর হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের ৮টি পদের শূণ্যস্থান এখনো পূরণ হয়নি। যে কারণে ব্যহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। আর জনবল সংকট দেখা দেওয়ায় এখানে আগত রোগী সাধারণের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। কিন্তু তিন থেকে চারবার চিঠি পাঠিয়েও কোন উত্তর পায়নি হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ। তাই্ বাধ্য হয়ে অন্যান্য চিকিৎসকের সহায়তায় স্থবির হয়েই চলছে স্বাস্থ্য সেবা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সরকারী এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ৭ বছর ধরে নাই মেডিসিন সিনিয়র কনসালটেন্ট। মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ নাক, কান ও গলা (ইএন টি) নাই ৩বছর। চোখের চিকিৎসা সেবার জন্য আই সেক্টরটি নাই ৩বছর। রেডিওলজি নেই ৩ বছর। দুই বছর ধরে অর্থপেডিক্সও নেই। এমনকি মানসিক রোগীর চিকিৎসার জন্য সাইকোলজীর চিকিৎসক নেই কত বছর তা অনেকের জানাও নেই। পেথোলোজীতে নেই সিনিয়র কনসালটেন্ট ও চর্মজনিত ক্ষেত্রে আনুমানিক ৩বছর ধরে নেই বলে জানায় সংম্লিষ্টরা। আর হৃদ রোগের বিভাগই নাই। তারপরেও অন্যান্য মেডিসিন বিভাগ ও হাসপাতালটির সিনিয়র চিকিৎসক ও তত্ববধায়কের পরিচালনায় সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন রোগী সাধারণ।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বীকার করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাশার। তিনি বলেন, এ সমস্যাটিতো আজকের নয়। বহু বছর হয়ে গেল। ৮টি পদে শূণ্যস্থান এখনো পূরণ হয়নি। এ নিয়ে তিন থেকে চারবার হলো আমরা চিঠিও পাঠিয়েছি। কিন্তু কোন জবাব পাইনি। বর্তমানে এটা ছাড়া চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে তেমন কোন সমস্যা নেই। আর যেহেতু হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত হচ্ছে দ্রুতই এ বিষয়ে নজর দেয়া প্রয়োজন।

বেশ কয়েকজন রোগীদের সাথে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, এমন একটি সরকারী হাসপাতাল পেয়েছি। যেখানে চিকিৎসার মান বাড়ানো হলে ঢাকা মেডিক্যালের অন্তত কাছাকাছি সেবা দেয়া সম্ভব। অথচ অনেক চিকিৎসাই বাহিরে করাতে হয়। বিশেষ করে আমাদের জেলায় কিন্তু অসংখ্য মানসিক রোগী রয়েছে। তাদের জন্য অপারগ অনেক নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বজনরা। কারণ সবার পক্ষেতো আর সম্ভব না প্রাইভেটে মানসিক রোগীর চিকৎসা করানো। তাছাড়া বাধ্য হয়ে অর্থপেডিক্স ও চর্মজনিত সমস্যাগুলোতেও আমরা বাহিরেই চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকি। এজন্য সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া জরুরী। যাতে করে সরকারী হাসপাতালগুলোতে মানুষের আস্থা বাড়ে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাকালে নিবিড় পর্যবেক্ষন কেন্দ্র (আইসিউ) সেবা প্রদান করেছিল হাসপাতালটি। কিন্তু সেসময়কার ১০টি বেড ব্যবহার না থাকায় এখন অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। চাইলেও রোগী সাধারণের জন্য চালু করা সম্ভব নয়। কারণ এজন্য প্রয়োজন লোকবল। যদি লোকবল সংযুক্ত করা যায়, চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়। তাহলে রাজধানীর বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপের ভোগান্তি ছাড়া সরকারী এ হাসাপাতালেই আইসিউ সেবা নিতে পারবে জেলার রোগী সাধারণ।

এ বিষয়ে সমাজিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন মন্টু জানায়, এমন একটি হাসপাতালে আমাদের সকল চিকিৎসাসেবা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে আমাদের নারায়ণগঞ্জের জেলার রোগী সাধারণ বঞ্চিত হচ্ছে তা খুবই কষ্টকর। এজন্য আমি জেলা সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টদের সুনজর কামনা করছি। তাছাড়া আইসিউ বেডটা সচল করা সবচেয়ে জরুরী। যতই লোকবল লাগুক। এগুলি আমাদের জেলা মানুষের জন্য প্রয়োজন। কারণ মানুষ এই আইসিইউ বেডের সেবার জন্য অনেক ভোগান্তি পোহায়। তাই এ জেলায় সর্বসাধারনের জন্য আইসিইউ বেডের চিকিৎসা চালু করার জন্য আমরাও আবেদন করবো।

চিকিৎসা সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন চিকিৎসক জানান, চিকিৎসা সেবার মানের দিকে যথেষ্ট বৃদ্বি পেয়েছে। এখানে রোগীরা সরকারী নিয়মের পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহের কারণে অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছে। বিশেষ করে মেরোপেনাম ১ গ্রাম, যার মূল্য প্রায় ১২০০টাকা। অথচ এটা তিন বেলাই এ সরকারী হাসপাতালে রোগীদের ফ্রি দেয়া হচ্ছে। সেফট্রি এক্সজন ২ গ্রাম। যার মূল্য প্রায় ৪৪০ টাকা। এটিও পাচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য বহু ঔষধের সরবরাহ বেড়েছে। রোগী সাধারণ চাইলেই বিভিন্ন্ চিকিৎসেবা খুব সহজেই নিতে পারছে।

জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে জাপান সরকারের সহায়তায় ২০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। পাঁচ বছর জাপান সরকার হাসপাতালটি পরিচালনা করে হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। ২০১০ সালের পর থেকে বাড়তে থাকে জনবল-সংকট। ২০১৩ সালে হাসপাতালটিকে ২০০ শয্যা থেকে উন্নীত করে ৩০০ শয্যা করা হয়। নতুন নিয়োগ না হওয়ায় একেকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করতে হয়। বর্তমানে নার্স, ওয়ার্ডবয় এসবে তেমন সমস্যা না হলেও মেডিসিন সিনিয়র কনসালটেন্ট থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য বিভাগের পদে লোকবল না থাকায় প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে কর্তৃপক্ষও।

add-content

আরও খবর

পঠিত