নারায়ণগ‌ঞ্জে পুলিশের স্টিকারে মাদক কারবা‌রির তাফালিং

নারায়ণগ‌ঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রাইভেটকা‌রে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে সাধারণ পথচারী‌দের সা‌থে প্রভাব দেখা‌লো এক‌ চি‌হ্নিত মাদক কারবা‌রি। এমন‌কি সড়‌কে বেপ‌রোয়া গা‌ড়ি চালা‌লে কা‌রো বা‌পের কিছু বলার সাহস নেই, দা‌ম্ভিকতাও দেখায়। নি‌জে‌কে পু‌লিশ হেড‌কোয়ার্টা‌রের লোক প‌রিচয়ে পু‌লিশ দি‌য়ে ধ‌রি‌য়ে নেয়ার হুমকীও দি‌য়ে‌ছে বাহাউদ্দিন বাবুল না‌মে সেই ব‌্যাক্তি।

ঘটনার বিবর‌ণে স্থানীয়রা জানি‌য়েছে, বুধবার বিক‌ি‌লে গলা‌চিপা এলাকার সরু সড়‌কে পুলিশ স্টিক‌ার লাগ‌ানো এক‌টি সাদা প্রাইভেটকার ইমার্জেন্সি হর্ণ বা‌জি‌য়ে বেপরোয়া গতিতে যা‌চ্ছিল।ওইসময় সড়কে থাকা অন্যান্য গাড়ীগুলোকে সাইড না দিয়ে নিজের মতো করে যাচ্ছিলো। এতে ক‌রে পুরো সড়ক জুড়ে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। ঠিক সেই সময়ে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক সুলতানের মরদেহ বহনকারী অ‌্যাম্বু‌লেন্সকে ওভারটেক করে থা‌মি‌য়ে দেয়া হয়। একপর্যা‌য়ে গা‌ড়িটি‌কে সাইড দি‌তে বলা হ‌লে সড়‌কের ম‌ধ্যেই গা‌ড়ি থা‌মি‌য়ে রে‌খে উল্লে‌খিত দা‌ম্ভিকতায় উচ্চবাক‌্য ক‌রেন মাদক ব‌্যবসায়ী বাবুল। এ নি‌য়ে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় স্থানীয় এলাকাবাসী। এসময় তিনি পু‌লি‌শের লোক এমন‌কি নিজেকে একজন ফিল্ম ডিরেক্টর পরিচয় দেয় এবং তার এই গাড়ীটি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বলে দাবি করেন। চড়াও হন সেখানে থাকা এলাকাবাসীর ওপর।

এদি‌কে গা‌ড়িতে থাকা চাল‌কের বেপরোয়া গা‌ড়ি চালা‌নোর কার‌ণে এলাকাবাসী তা‌কে থামা‌লে সে জানায়, এটা পু‌লি‌শের গা‌ড়ি যেভা‌বে ম‌নে চায় চালা‌বো! কো‌নো বা‌পের বেটা আছে কিছু বল‌বো! তারপ‌রেও এলাকাবাসী ভদ্র ব‌্যবহার ক‌রে ছে‌ড়ে দেয়। কারণ, যে‌হেতু একটা মানুষ মৃত্যুবরণ ক‌রেছে, সেই বি‌বেচনায় তার সা‌থে ত‌র্কে জড়ায় নেই কেউ। কিন্তু সে কিছুক্ষণ পরই পু‌লিশ স্টিকার ল‌াগ‌ানো গা‌ড়ি রে‌খে আরেক‌টি প্রাইভেটকা‌রে কিছু লোক সা‌থে নি‌য়ে আসে! আর স্থানীয়‌ কারা কারা গা‌ড়ি থা‌মি‌য়ে‌ছিল পরিচয় জান‌তে চা‌য় এবং পু‌লিশ দিয়ে ধ‌রি‌য়ে নেয়ার হুমকি দেয়। এসময় উপস্থিত সাংবা‌দিকরা তার প‌রিচয় জান‌তে চাইলে তা‌দের সা‌থেও তর্ক ক‌রেন তিনি। ব‌লেন, উনি পু‌লিশ হেড কোয়াটারের লোক। সাংবা‌দিক‌দের বড়টা আছে!

অপর‌দি‌কে খোঁজ নি‌য়ে জানা যায়, বেপ‌রোয়া গা‌ড়ি চালা‌নো ব‌্যক্তি বাহাউদ্দিন বাবুল। ২০২০ সালে এই বাবুল এবং তার এক সহযোগীকে পু‌লি‌শের স্টিকার লাগানো এক‌টি বিলাসবহুল গাড়িসহ ৪০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। সে মাদকের চালান আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত কর‌তো ওই বিলাশ বহুল জিপ গাড়িটি। গা‌ড়ির ভেতরে এক নারী পুলিশ সদস্যের আইডি কার্ডও পাওয়া যায়। তৎকালীন সময় র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে স্বীকারও করেন। তাদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা দায়ের করে‌ছিল। পরে কোন এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় মাদকের গডফাদার বাহাউদ্দিন বাবুল জামিনে বের হয়ে আসেন। এই বাবুল ফতুল্লার হরিহরপাড়া প্রেমতলা এলাকার বাসিন্দা। তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার মিতু মহিলা পুলিশ সদস্য। আর বিলকিস আক্তার মিতুর বদৌলতে বাহাউদ্দিন বাবুল তার বিলাস বহুল জিপ গাড়ীতে পুলিশ ষ্টিকার লাগিয়ে মাদকের চালান বিভিন্ন স্থান থেকে অণ্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। জামিনে বের হয়ে আসার পর পরই বাহাউদ্দিন বাবুল আবারো সেই পূর্বের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন এমনটাই স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

অনুসন্ধানে জানা গে‌ছে, প্রতিদিন তার বর্তমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিনিষ্টার শো-রুমের ভিতরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের আনা গোনা র‌য়ে‌ছে। এমনকি পুলিশ ষ্টিকার লাগানো গাড়ীতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের হর হামেশাই বিচরণ ক‌রে। পুলিশ ষ্টিকার লাগানো গাড়ীতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা চলা ফেরার কারনে একদিকে সাধারন মানুষের কাছে গর্বিত পুলিশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে পুলিশের লে‌াগো ব্যবহার করে মাদক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ হাছিল হলেও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে গর্বিত পুলিশের ভাবমূতি! তবে স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে, প্রকাশ্যে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী দীর্ঘদীন ধরে পুলিশের ভাবমূতি নষ্ট করে গেলেও কি কারনে কোন ব্যববস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন?

এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যূষ কুমার মজুমদার বলেন, আপনাদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করে খুব দ্রুত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত